বাংলাদেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ে অশান্তি বিরাজের মধ্যেই আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পদকের নাম দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক শান্তি পদক’। পদকের সাথে আর্থিক বিষয় জড়িত থাকায় অর্থ বিভাগের মতামত চাওয়া হয়েছে। তবে প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের সাথে টেক্কা দিতে এই পুরস্কারের প্রবর্তন করতে চাচ্ছে সরকার। এ জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের চেয়েও এ পুরস্কারের আর্থিক মূল্য বেশি নির্ধারণ করা হতে পারে। বর্তমানে নোবেলজয়ীদের নগদ অর্থ দেওয়া হয় ১১ লাখ মার্কিন ডলার, মানে ১২ কোটি টাকার বেশি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকার চাইছে আন্তর্জাতিক ভাবে চরম সংকটে পরা ইমেজ উদ্ধারে এ পদককে ব্যবহার করতে। তাই সরকার চলতি অর্থবছর থেকেই এই পদক দিতে চায়। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব না হলে আগামী অর্থবছর থেকে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
সূত্রটি জানায়, ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করা হয়েছিল। তাই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক শান্তি পদক ২৩ মে দেওয়া হবে। তবে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তার জন্ম দিন। এ জন্য ১৭ মার্চ পুরস্কার প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হবে। এই পুরস্কার দেওয়া হবে তিন ক্যাটাগরিতে। তা হচ্ছে, ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। পুরস্কার হিসেবে নগদ অর্থের সঙ্গে স্বর্ণের মেডেল দেওয়া হবে।
জানা গেছে, বাছাই কমিটি এবং মনোনয়ন কমিটির পর কে বা কোন প্রতিষ্ঠান আর সংস্থা পুরস্কার পাবে তার চূড়ান্ত অনুমোদন প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে রাখবেন। আর পুরস্কার গ্রহিতা চাইলে বঙ্গবন্ধুর ওপর স্মারক বক্তৃতাও দিতে পারবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অশান্তি বিরাজ করছে। বিরোধী মতের রাজনৈতিক কর্মীরা রাজপথে বের হতে পারছে না। সম্প্রতি বিতর্কিত ও একতরফা জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী মতের ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে জেল রাখা হয়েছে। যা জাতিসংঘ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে। বন্দীদের মধ্যে ১১ জন কারাঅন্তরীণ অবস্থায় মারা গেছেন। এ ছাড়া গুম-খুনের দায়ে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। আর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেওয়া আছে ভিসা নিষেধাজ্ঞা। এসব পাশ কাটিয়েই সরকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক শান্তি পদক চালু করতে যাচ্ছে।
এদিকে দেশের সাধারণ মানুষেরও দ্রব্যমূলের উর্দ্ধগতির কারণে নাভিশ্বাস অবস্থা। ফলে সাধারণ জনগনও চরম অশান্তিতে তাদের জীবনযাপন করছেন। জনগণকে চরম আতঙ্কে রাখায় তারা প্রতিবাদও করতে পাছে না। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৯.৯২ শতাংশ। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১২.৫৬ শতাংশ। যা সরকারি হিসাব থেকেই জানা যায়। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে এ হার ২০ শতাংশের ওপরে।
১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করা হয়েছিল। এ পদক নোবেল শান্তি পুরস্কারের পরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবচেয়ে মর্যাদাশীল ও সম্মানিত শান্তি পদক বলে বিবেচনা করা হয়।
১৯৫০ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৬৭ জন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বকে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’ প্রদান করে। শান্তি পদকপ্রাপ্ত কয়েকজন হলেন, চেকোশ্লোভাকিয়ার জুলিয়াস ফুচিক, স্পেনের পাবলো পিকাসো, চিলির পারলো নেরুদা, আমেরিকার পল রবসন, তুরস্কের নাজিম হিকমত, আমেরিকার মার্টিন লুথার কিং, কিউবার ফিদেল ক্যাস্ত্রো, মিসরের গামাল আবদেল নাসের, চিলির সালভাদর আলিন্দে, বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান, প্যালেস্টাইনের ইয়াসির আরাফাত, সোভিয়েত ইউনিয়নের লিওনিড ব্রেজনেভ, তাঞ্জানিয়ার জুলিয়াস নায়েরে প্রমুখ।
বাংলা আউটলুক