শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে এক মাসে আমানতের চেয়ে ৯ গুণ বেশি ঋণ

বাংলাদেশ ব্যাংক

এক মাসে যে পরিমাণ আমানত এসেছে, তার চেয়ে সাড়ে ৯ গুণ বেশি ঋণ বিতরণ করেছে দেশের পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো। ফলে এসব ব্যাংকের কয়েকটিতে তারল্যসংকট রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে আমানত ও ঋণের এ চিত্র পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক বা ইসলামি ধারার ব্যাংক রয়েছে ১০টি। এগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।

ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মার্চে এসব ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ৪৪৯ কোটি টাকা। এর বিপরীতে বিনিয়োগ বা ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৩০২ কোটি টাকা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোয় আমানত ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, যা মার্চে বেড়ে হয় ৩ লাখ ৮০ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে এসব ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা, মার্চে যা বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা।

আমানতের চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধির বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, তারল্যসংকটে পড়া ইসলামি ধারার কয়েকটি ব্যাংক আমানতের পাশাপাশি মূলধন, নিরাপত্তা সঞ্চিতি ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নেওয়া অর্থ বিনিয়োগ করছে। ফলে আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামি শাখা ও উইন্ডোর বিপরীতে গত মার্চে আমানত কমেছে ৪৪৯ কোটি টাকা। একই মাসে এসব শাখা ও উইন্ডোর বিতরণ করা ঋণ বা বিনিয়োগ কমেছে ৮৪ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে ফেব্রুয়ারি শেষে ইসলামি ধারার ব্যাংক এবং প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামি শাখা ও উইন্ডো মিলিয়ে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ১৮ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। মার্চে তা বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ১৯ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে ঋণ বা বিনিয়োগ ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৯০১ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকে কোনো ধরনের তারল্যসংকট নেই। উপরন্তু দুই হাজার কোটি টাকার আমানত উদ্বৃত্ত আছে। এমনকি ৩০ কোটি ডলারও আছে। আমদানি প্রবৃদ্ধি আছে ১২ শতাংশ ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ।’

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সংকটে পড়া ইসলামি ধারার বেশ কয়েকটি ব্যাংক অনেক দিন ধরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত নগদ জমার হার (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমার হার (এসএলআর) সংরক্ষণ করতে পারছে না। এসএলআরের জন্য এসব ব্যাংকের কাছে যেসব ট্রেজারি বিল ও বন্ড ছিল, তা বন্ধক রেখে ধার করা টাকা খরচ করে ফেলেছে। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব থেকেও প্রায় ১৭ হাজার কোটি খরচ করে ফেলেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ ছিল ইসলামি ব্যাংকগুলোয়, যা মার্চে কমে হয়েছে ২৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক খাতের ঋণের ২৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ ছিল ইসলামি ব্যাংকগুলোয়, যা মার্চে ছিল ২৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

মার্চে ইসলামি ব্যাংকগুলোর শাখা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৭৪টি। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের ৩৯৪টি, আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের ২১৯টি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২০৫টি, এসআইবিএলের ১৭৯টি, এক্সিম ব্যাংকের ১৫১টি, শাহ্‌জালাল ব্যাংকের ১৪০টি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৩৮টি, ইউনিয়ন ব্যাংকের ১১৪টি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ১০১টি ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ৩৩টি শাখা আছে।

prothom alo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here