লিকেজ পাইপলাইনে ‘ফিউজ ক্রিকেটার’

 

বিশ্বকাপের দল গড়ার আগে মরিয়া হয়ে বিকল্প ক্রিকেটারের খোঁজ করছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। একে একে কথা বলেছেন জাতীয় দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে। সৌম্য সরকারকে জাতীয় দলে ফেরাতে কম চেষ্টা করেননি। রনি তালুকদার, আফিফ হোসেন, নাঈম শেখ– কাকে পরখ করে দেখেননি প্রধান কোচ। অথচ তাদের কেউই বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিতে পারেননি।

শেষে হাথুরুসিংহের আক্ষেপ ছিল– বাংলাদেশে বিকল্প ক্রিকেটারের বড্ড অভাব। সীমিত ভান্ডার থেকে শক্তিশালী জাতীয় দল গড়া সত্যিই কঠিন। বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর এ উপলব্ধি এখন জাতীয় দল নির্বাচকদেরও। অথচ জাতীয় দলের পাইপলাইন নিয়ে একসময় খুব গর্ব করতে দেখা গেছে বিসিবি সভাপতিকেও। তিনি হয়তো বুঝতে পারেননি লিকেজ পাইপলাইন ‘ফিউজ ক্রিকেটারে’ ভরা।

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন হয়তো ক্রিকেটারের সংখ্যা দিয়ে পাইপলাইনের বিচার করেছিলেন। কারণ, লিগ বা টুর্নামেন্টের উদ্বোধনীতে শত শত ক্রিকেটার দেখেছেন তিনি। আসলে দেশে নিবন্ধিত ক্রিকেটার সংখ্যায় কম নয়। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলা অনেক ক্রিকেটার বিপিএলেও দল পান না। এ থেকে বিসিবি কর্মকর্তাদের একটা ধারণা হতে পারে, একাধিক জাতীয় দল গড়ার মতো ক্রিকেটার রয়েছেন তাদের রিজার্ভে। কিন্তু বাস্তবতা অন্য। দেশে আন্তর্জাতিক মনের ক্রিকেটার হাতেগোনা ৯ থেকে ১০ জন। ১৫ জনের দলে বাকি পাঁচজনকে ধরা হয় মোটামুটি মানের।

এবারের বিশ্বকাপ দলও তো সেভাবেই গড়া হয়েছিল। পাইপলাইনে মানসম্পন্ন ক্রিকেটার না থাকায় তামিম ইকবালের জায়গায় অপরিণত তানজিদ হাসান তামিমকে নেওয়া হয়। একজন লেগ স্পিনারের আক্ষেপ পুড়িয়েছে কোচিং স্টাফকে। যে দেশ টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২৪ বছরে একজন লেগ স্পিনার তৈরি করতে পারে না, তাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক মানের হয়ে ওঠা কঠিন।

জাতীয় দলের পুলে ২৪ থেকে ২৬ জন ক্রিকেটার রাখা হলেও তাদের একটা বড় অংশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা নেই। দেশে বা বিদেশে ছোট দলের বিপক্ষে সিরিজেও সেরা দল নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহদের সব সিরিজে চান বিসিবি সভাপতি। লিটন কুমার দাস বা নাজমুল হোসেন শান্তদের বিশ্রাম দিয়ে বিকল্প তালিকার ক্রিকেটারদের খেলাতে দেখা যায় না।

পেস বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। কাউকে কাউকে টেস্ট ক্রিকেটারের লেবেল লাগিয়ে দেওয়া কাল হয়েছে। সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যেতে বসেছেন তারা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে গত সাত-আট বছর ধরে নতুন একটা ধারা চালু হয়েছে– প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট লিগে খেলতে না চাওয়া। জাতীয় লিগ এলেই মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনরা ইনজুরিকে হাতিয়ার করে খেলা থেকে দূরে সরে গেছেন। জাতীয় দলের পেসার শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমানদের টেস্ট ক্রিকেটে আগ্রহ নেই। যেটা দেশের উদীয়মান ক্রিকেটারদেরও টেস্টে অনাগ্রহী করে তুলছে।

ভালো মানের ক্রিকেটার গড়ে না ওঠার পেছনে বিসিবির দায়ও দেখেন অনেকে। ক্রিকেটারদের জন্য নিবিড় প্রশিক্ষণ সেন্টার গড়ে তোলা হয়নি। বাংলাদেশ টাইগার্স নামে একটি প্রশিক্ষণ উইং চালু করলেও তাতে প্রশিক্ষণ নেন লিগের ক্রিকেটাররা।

অথচ ভারতের হাইপারফরম্যান্স সেন্টারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় জাতীয় দলের চাহিদা মতো। উদীয়মান ক্রিকেটারদের পাশাপাশি জাতীয় দলের বাইরে থাকা খেলোয়াড়কে ফাইন টিউন করেন কোচিং স্টাফ। বিসিবি সেখানে সবকিছু ঘটা করে করতে গিয়ে বিশাল বাজেট উপস্থাপন করে। ফলে ব্যায় সংকোচন করতে গিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্যাম্পগুলো করা হয়ে ওঠে না। এভাবে শূন্যতা বাড়তে থাকে।

সমকাল