লবিস্ট নিয়োগে সজীব ওয়াজেদ জয়ের টাকার উৎস জানতে চায় বিএনপি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্টার ফাইল ফটো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি বিরুদ্ধে ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ৩ বছরে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সংশ্লিষ্টতায় ৯০ লাখ ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল আওয়ামী লীগ। বিএনপি জানতে চায়, সজীব ওয়াজেদ জয়ের ওই টাকার উৎস কী ছিল।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, লবিস্ট নিয়োগের প্রমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্টের সরকারি ওয়েব পেজে আছে। বিএনপি জানতে চায়, সজীব ওয়াজেদ জয়ের ওই টাকার উৎস কী ছিল। কীভাবে ওই টাকা বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় গিয়েছিল?

তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশের জনগণসহ দেশের সীমানা পেরিয়ে গোটা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ গণতন্ত্রহীন, মানবাধিকারহীন, ন্যায় বিচারহীন একটি দেশ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে যা আপনারা সবাই অবগত। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে যদি নির্বাচন ব্যবস্থাকে আইসিইউতে ঢুকানো বলে অবহিত করি, তাহলে এ কথা নিশ্চিত করে বলাই যায় যে, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে করে, রক্তের হলি খেলায় মত্ত এই দানব কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার কবর রচনা করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার হরণের জন্য সরকারি বাহিনী ব্যবহার করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, রাজনৈতিক গায়েবি মামলার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত এই সরকারের অপকর্মের ফিরিস্তি আজ সর্বজনবিদিত। তাদের অপকর্মের জন্য যদি কারও ভিসা বাতিল হয় এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয় তা গোটা জাতির জন্য লজ্জার এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হলেও এই কানকাটা নির্লজ্জ সরকার এটাকে জাতীয় সংকট হিসেবে গণ্য না করে বেহায়ার মতো তাদের অপকর্ম ঢাকার জন্য, প্রত্যক্ষ-অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশ হলে সরকার সর্ব প্রথমেই উক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি কার্যধারা শুরু করতো, গ্রেপ্তার করতো এবং জাতিকে কলঙ্কের দাগ থেকে উত্তরণের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে জাতীয় সংকট হিসেবে সবার সহায়তায় এই পরিস্থিতির উত্তরণের চেষ্টা করতো। অথচ কর্তৃত্ববাদী সরকার হাঁটছে উল্টো পথে, গুমের শিকার পরিবারের বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠিয়ে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে, খুনিদের রক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যা থেকে প্রমাণ হয়, সরকারের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা এই সব খুন-গুমের সঙ্গে জড়িত। তাই বিএনপি অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ চায়, খুন, গুমের সঙ্গে জড়িত নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সবার নিরপেক্ষ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, মানবাধিকার নিশ্চিত করা। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা চায়, গণতন্ত্র ফেরত চায়, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়।

ফখরুল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা ধামাচাপা দিয়ে কর্তৃত্ববাদী অবৈধ সরকার জনগণের করের টাকায় আমেরিকায় লবিস্ট নিয়োগ করেছে যা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে স্বীকৃত। তার ভাষ্য মতে, সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে। খুন-গুমের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির দায় কিংবা ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতায় নিমজ্জিত প্রতিষ্ঠানের দায় ঢাকতে রাষ্ট্র কিংবা সরকার কীভাবে জনগণের টাকায় ভাবমূর্তি রক্ষার নামে ব্যয় করে?

বিএনপি মনে করে, জনগণের টাকায় লবিস্ট নিয়োগ করে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অপরাধে নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টিই প্রমাণিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি মনে করে, সরকার জড়িত না থাকলে তা প্রমাণের জন্য তারা ৭ কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করতো। খুন-গুম-গায়েবি মামলা দায়ের বন্ধ করে, নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে হেঁটে সরকার পদত্যাগ করতো, বলেন ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে কথা বলছেন সরকারের কয়েক জন মন্ত্রী। চিঠি দেখিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে। আপনারা দেখবেন ওই চিঠি কাকে লেখা হয়েছিল এবং চিঠির বিষয় বস্তু কী ছিল। বিএনপি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার সব ব্যাক্তিদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সবচেয়ে বড় ভ্যানগার্ড। তাই বিএনপি তার আন্দোলন সংগ্রামের অংশ হিসেবেই দেশের ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের সমর্থন চায়, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ চায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে দেশি-বিদেশি সব অংশীদারদের এই সরকারের সব অপকর্ম সম্পর্কে অবগত করে রাখতে চায়। বিদেশে লেখা আমার ওই চিঠিগুলো কোনো লবিস্ট নিয়োগের বিষয় নয়, মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি আহ্বান মাত্র।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, একজন প্রবাসী বাংলাদেশির লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টিও আজ আমাদের দলের ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে এই সরকার। আমরা বলতে চাই, দেশের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যদি কোনো প্রবাসী কোনো পদক্ষেপ কোথাও নেয়, দেশের প্রতি তার ভালোবাসার জন্য যদি কিছু করে, সে পদক্ষেপের দায়িত্ব তার, বিএনপির নয়। ওই পদক্ষেপকে নৈতিক সমর্থনের দায়িত্ব বাদে অন্য কোনো দায়-দায়িত্ব বিএনপি বহন করে না। তবে, বিশ্বের দেশে দেশে প্রবাসীদের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষার জন্য  এ ধরনের দেশপ্রেমিক পদক্ষেপকে বিএনপি সাধুবাদ জানায় এবং তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।

এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে আমরা সহযোগিতা চাইনি। বাংলাদেশে যা ঘটছে—মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতন্ত্র হত্যা, বিচারহীনতা সেই বিষগুলো আমরা তাদের জানিয়েছি।

তাদের রেসপন্স কী জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, রেসপন্স তো আপনারা দেখতে পাচ্ছেন।