১৮ ডিসেম্বর ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধি
আমেরিকান রাষ্ট্রদূত পিটার হাস রাজধানীর শাহিনবাগে র্যাবের হাতে গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় যাওয়া ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি এবং তাঁর নিরাপত্তা ঘাটতি নেই। র্যাব তুলে নিয়ে গুম করা বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় পিটার হাস যাওয়ার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে জানানো উচিত ছিল বলে জানিয়েছেন কামাল। রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল একথা বলেন।
গত ১৪ই ডিসেম্বর রাজধানীর শাহিনবাগে সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় যান পিটার হস। তখন সেখানে আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা ‘মায়ের কান্না’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে কিছু লোক জড়ো হয়ে পিটার হাসকে নাজেহাল করেন। এই ঘটনার পর পিটার হাস শাহিনবাগ থেকে সরাসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন। এসময় তিনি আওয়ামী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের কাছে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রাষ্ট্রদূতের বিষয়টি নিয়ে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এরপর আমার আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। তবে যেহেতু আমার নির্বাচনী এলাকা, আমি সে এলাকার এমপি। আমি যতটুকু খবর পেয়েছি সেখানে দেখা গেছে, রাষ্ট্রদূত যে বাড়িতে গেছেন তার পাশের বাড়ির কয়েকজন সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন, তারা কীভাবে জেনেছে আমি জানি না।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন-প্রথম কথা হলো, সেখানে তার নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিলো না। পুলিশ বাহিনী যখনই শুনেছেন তখনই সেখানে ছুটে গেছেন। যখনই শুনেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত সেখানে যাচ্ছেন তখন পুলিশ বাহিনীর কর্তব্য হয়ে গিয়েছিলো সেখানে যাওয়া। আমাদের ওসি সিভিল পোশাকেই চলে গেছে। এখানে তার নিরাপত্তার ঘাটতি হয়েছে বলে আমার কাছে রিপোর্ট আসেনি।
কামাল বলেন, তিনি (হাস) যে যাবেন, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানা উচিত ছিল। খবর পেয়ে ওসি সিভিল পোশাকেই গেছেন। আমাদের কাছে যারা (কূটনীতিক) খবর পাঠান, তারা বের হওয়ার সময় নিরাপত্তা নিয়ে বের হন। তারা নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে আমি মনে করি না।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপির ৮ নেতা-কর্মীকে তুলে নিয়ে যায় র্যাব-১ এর সদস্যরা। এরপর থেকে তাঁদের সন্ধান আর মেলেনি। গুম হওয়াদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাজেদুল ইসলাম সুমন। বিএনপির সেই গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় ১৪ই ডিসেম্বর যান পিটার হাস। সুমনের বোন ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। গত কয়েক বছরে নিখোঁজদের স্বজনরা এই সংগঠনে আছেন। তারা প্রায়ই নানা কর্মসূচি পালন করে ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুম-খুন ও ক্রসফায়ারের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরছেন।
পিটার হাস হঠাৎ করেই সুমনের বাড়ি যাওয়ার বিষয়টি পছন্দ করেনি সরকার। তা গোপনও রাখা হয়নি। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে ব্যস্ত।
একই আলোচনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পিটার হাসের কাছে জানতে চান, আমেরিকায় মাসে কত গুম, খুন ধর্ষণ হয়।
সুমনের বাড়িতে যাওয়ার পর সেখানে যায় শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা ‘মায়ের কান্না’ নামের আরও একটি সংগঠনের সদস্যরা পিটার হাসকে একটি স্মারকলিপি দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের প্রটোকল অফিসাররা তাদেরকে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। তারা হাসকে নিয়ে দ্রুত ত্যাগ করেন ঘটনাস্থল।
এত বিরক্ত হয়ে পিটার হাস সোজা চলে যান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে। সেখানে গিয়ে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এই ঘটনার পরে বিএনপি পিটার হাসের পাশে দাঁড়ায়। তাদের অভিযোগ, সরকার কূটনীতিকদের ভয় দেখাচ্ছে। আর এই ইস্যুটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটাবে।