রোহিঙ্গাদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনে সরকারের কাছে আহ্বান ইউএসসিআইআরএফ’র

ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) এর  দুই বছর পূর্তি হয়েছে। বার্মায় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্টের হয়ে কাজ করে ইউএসসিআইআরএফ। ২০১৭ সালের আগস্টে বার্মার সামরিক বাহিনী, যা তাতমাদও নামে পরিচিত, প্রধানত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর নৃশংস হামলা চালায়। অভ্যুত্থান-পরবর্তী বার্মাকে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন এবং রোহিঙ্গা জনগণের পূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য যে কোনো সমর্থন নিশ্চিত করতে ইউএসসিআইআরএফ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করার জন্য মার্কিন সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে।
ইউএসসিআইআরএফ -এর  কমিশনার মোহাম্মদ মাগিদ বলেছেন, যদিও ২০২২ সালের সংকল্প রোহিঙ্গা জনগণের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির একটি মাইলফলক ছিল, তবে এটি ছিল শুধুমাত্র প্রথম পদক্ষেপ। এই সপ্তাহে, আমরা বার্মার গণহত্যার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের প্রদর্শনী পরিদর্শন করেছি। প্রদর্শনীটি কয়েক দশক ধরে চলা রোহিঙ্গা জনগণের ওপর  বেদনাদায়ক অমানবিক আচরণের অনুস্মারক, যখন সামরিক বাহিনী তাদের নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করেছিল। ইউএসসিআইআরএফ রোহিঙ্গা গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া এবং যেসব দেশ এই শরণার্থীদের আতিথ্য করেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য মার্কিন সরকারের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানায়। তা সত্ত্বেও, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন সম্প্রসারণের  মাধ্যমে সরকারকে আশার আলো  জাগিয়ে তুলতে হবে।

   বার্মিজ সেনাবাহিনীর ২০২১ সালের অভ্যুত্থান জবাবদিহিতার  প্রচেষ্টা এবং সমগ্র অঞ্চলে বসবাসকারী এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের পথকে বাধা দেয়। এটি বার্মার অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত শিবিরে থাকা ৫ লাখ রোহিঙ্গাকে সহিংসতা ও নির্যাতনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই বছরের শুরুর দিকে সেনাবাহিনীর রাজ্য প্রশাসন কাউন্সিল (এসএসি) রোহিঙ্গাদের সামরিক চাকরিতে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা শুরু করে, যারা নিয়োগ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল তাদের আত্মীয়দের মারধর ও অপহরণ করে।
জাতীয় ঐক্য সরকারের মতো বিরোধী দলগুলি ক্ষমতায় এলে ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল করার এবং যে রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে চায় তাদের প্রত্যাবাসন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়াসহ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য ২.৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে। তারা  চলমান সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তি এবং সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। 

ইউএসসিআইআরএফ কমিশনার এরিক উয়েল্যান্ড যোগ করেছেন, যে সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে তারাই এখন তাদের চাকরিতে নিয়োগের চেষ্টা করছে, এমনকি  তাদের নাগরিকত্ব না দিয়েই। তাতমাদাও দেশ চালাচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত ও বিশৃঙ্খলভাবে। ২০২২ সালের বার্মা আইন মোতাবেক মার্কিন সরকারকে অবশ্যই জাতীয় ঐক্য সরকারকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বার্মিজ সামরিক বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার জন্য জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতে উৎসাহিত করতে হবে।
তার ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে, ইউএসসিআইআরএফ সুপারিশ করেছে যে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট বার্মাকে চলমান এবং গুরুতর ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের জন্য বিশেষ উদ্বেগের দেশ (CPC) হিসাবে যেন বিবেচনা করে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইউএসসিআইআরএফ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ধর্মীয় স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি শুনানির আয়োজন করেছিল। এই শুনানির সময় কমিশনার এবং সাক্ষীরা রোহিঙ্গাদের টার্গেট করার জন্য বার্মিজ সামরিক বাহিনী কর্তৃক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার এবং ডিজিটাল নজরদারি নিয়ে আলোচনা করেন।
২০২২ সালে ইউএসসিআইআরএফ কমিশনার স্টিফেন স্নেক বাংলাদেশের কক্সবাজারে একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ইউএসসিআইআরএফ-এর স্পটলাইট পডকাস্টের একটি পর্বে তিনি বাংলাদেশি শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। এই সফরে প্রতিনিধি দলটি শরণার্থী, আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ সরকারের সদস্যদের সাথে দেখা করেন।

manabzamin