ঢাকা
অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের সঙ্গে গতকাল প্রাক্-বাজেট আলোচনা করেন অর্থমন্ত্রী। আলোচনায় সমাজে আয়বৈষম্য বৃদ্ধির জন্য ব্যাংক লুটেরাদের দায়ী করা হয়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঋণখেলাপিরা যাতে অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, নির্বাচন এলেই দেখা যায় ঋণ পুনঃ তফসিল করে ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে অংশ নেন। এ সুযোগ বন্ধ করা উচিত।
ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক্-বাজেট আলোচনায় রেহমান সোবহান এই পরামর্শ দেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এই আয়োজনে অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরা অংশ নেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এতে অংশ নিলেও কোনো কথা বলেননি। অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের গতবারের পরামর্শের কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, তা পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে তুলে ধরে অর্থ বিভাগ।
কোভিড-১৯ প্রায় শেষ হয়ে এলেও গত ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মতো এবারের প্রাক্-বাজেট আলোচনাও অনুষ্ঠিত হয় ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে। গতকালের আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের আলোচকদের সূত্রে জানা গেছে, সমাজে আয়বৈষম্য বেড়ে যাওয়ায় তা রোধে আগামী বাজেটে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রেহমান সোবহান। আয়বৈষম্য বৃদ্ধির জন্য ব্যাংক খাতের লুটেরাদের দায়ী করেন তিনি।
আইন অনুযায়ী ঋণখেলাপিরা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু প্রতিবারই শুধু নির্বাচন করার উদ্দেশে কৌশলে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করেন তাঁরা। রেহমান সোবহান এই সুযোগ বন্ধ করার পরামর্শ দেন বলে জানা গেছে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন এবং জানতে চান তিনি সুস্থ আছেন কি না। তখন অর্থমন্ত্রী জানান, তিনি সুস্থ আছেন।
সূত্রগুলো জানায়, অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কার কার্যক্রম ভালোভাবে সম্পন্ন করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেন। এ ছাড়া তাঁরা বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ কঠিন চাপে আছে। বাজেটে এটি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে দুটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। আর আইএমএফের পরামর্শে যেসব সংস্কারকাজ করা হবে, সেগুলোয় যেন স্বচ্ছতা থাকে।
সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি গতিশীল রাখতে হবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ফুচকাওয়ালারা এখন ফুচকা বিক্রি করছেন অনলাইনে।
প্রাক্-বাজেট আলোচনা শেষ হওয়ার পর যোগাযোগ করা হলে পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘বলেছি যে অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। কর ছাড় নিয়ে কথা বলেছি। বলেছি যে ভালো একটা সমীক্ষা করার মাধ্যমে কর ছাড় না দিয়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা কর আদায় সম্ভব। কর প্রশাসন নিয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়ার কথাও বলেছি। ধনীদের কাছ থেকে বেশি কর সংগ্রহেরও পরামর্শ দিয়েছি।’
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘শুনেছি, সাত লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বাজেটের আকার। কিন্তু এত টাকা আসবে কোথা থেকে? আশা করব, টাকা ছাপিয়ে যেন বাজেটে অর্থায়ন করা না হয় বা টাকা ছাপানো হলেও যেন কম ছাপানো হয়।’
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে ৭ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের মূল বাজেট ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি থেকে ৭২ হাজার কোটি টাকা বেশি। আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।