সদুত্তর না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা মন্ত্রীর সামনেই নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন এবং হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করেন। এতে কিছুটা হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় রেলমন্ত্রী তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত হোক তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মন্ত্রী সেখান থেকে চলে যান।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়াদের ওপর হামলার ৬ মামলায় গ্রেপ্তার ৮১
এর আগে রেলমন্ত্রী বেলা ১১টার দিকে আহম্মদ নগর এলাকায় আহমদিয়াদের জলসাস্থলে যান। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সমবেদনা জানান এবং কম্বল, শাড়ি, লুঙ্গি, চাল ও নগদ টাকা উপহার দেন। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আহম্মদ নগর জামাতের প্রেসিডেন্ট মোতালেব হোসেন খান এবং শালশিড়ি জামাতের প্রেসিডেন্ট তাহের আহমদ দেওয়ান মন্ত্রীর দেওয়া উপহার সামগ্রী গ্রহণ করেন।
সেখানে মোতালেব হোসেন খান বলেন, ‘আমাদের হামলা-অগ্নিসংযোগ করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ত্রাণ চাই না, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ধর্ম পালন ও বসবাসের সুযোগ চাই। আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এসব মালামাল উপহার হিসেবে গ্রহণ করছি। আমরা সরকারের কাছে বিচার চাই। তবে আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। এ ঘটনায় আমরা কোনো রিঅ্যাকশন (প্রতিক্রিয়া) দেখাব না।’
পঞ্চগড়ের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত জড়িত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সেখানে বক্তব্যে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত চক্র এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা নাম ব্যবহার করছে তৌহিদী জনতার। তারা ব্যবহার করছে আমাদের পবিত্র ধর্মকে।’ তিনি বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে একটি শক্তি গোটা দেশের মুক্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে যেমন অবস্থান নিয়েছিল। রাজাকার আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠন করে হানাদার পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষ নিয়ে এ দেশের হাজার হাজার গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একই শক্তি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল। তারা এই দেশকে তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য বিভিন্ন রকম স্লোগান দিয়েছিল।
রেলমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কখনোই কোনো ফ্যাসাদ কিংবা হামলায় অনুমোদন করে না। সরকারও এগুলোকে কখনোই প্রশ্রয় দেয় না। এর আগেও ২০১৯ সালে আহমদিয়াদের ওপর হামলা করেছিল সরকারবিরোধী একটি চক্র। একইভাবে ২০১৩-১৪ সালে গণতন্ত্রের নামে, রাজনীতির নামে জ্বালাও–পোড়াও করে, পুলিশের ওপর হামলা করে এবং সড়কে গাড়ি পোড়ানোয় লিপ্ত ছিল তারা।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদেশে থাকলেও এই ঘটনাটির বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। এখানে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এটার নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। এখানে যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের ব্যাপারে কঠোরভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া প্রশাসনিকভাবে কোনো দুর্বলতা ছিল কি না, এই বিষয়টি আগাম কেন প্রতিরোধ করা গেল না, এই ঘটনা ঘটার সুযোগটা কেন তৈরি হলো, সেখানে কারও কোনো গাফিলতি ছিল কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: আতঙ্কে মোমিনুলদের রাত কেটেছে মসজিদে
রেলমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করুন। সরকারের অবস্থানের ক্ষেত্রে সংবিধানে যেভাবে আছে সেই ব্যাপারে আমরা দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ।’
পরে রেলমন্ত্রী আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পুড়ে যাওয়া চিকিৎসা কেন্দ্র ও বাড়িঘর ঘুরে দেখেন। এ সময় রেলমন্ত্রীর সঙ্গে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, রংপুরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল আলিম মাহমুদ, পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।