রিয়ালের বিদায়, চেলসি-ম্যানসিটি অল ইংলিশ ফাইনাল


ধারে ভারে এগিয়ে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তবে ঘরের মাঠ স্টামফোর্ড ব্রিজে চেলসি দেখালো জাদু। দুরন্ত সব আক্রমণের পাশাপাশি জমাট রক্ষণ। গোলপোস্টে দুটি মূল্যবান সেভ করে ম্যাজেস্টিক গোলকিপারের তকমা পেলেন মেন্ডি। সব মিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে রিয়ালকে উড়িয়ে আট মৌসুম পর ফাইনালের টিকিট পেয়েছে চেলসি।

বুধবার রাতে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে রিয়াল মাদ্রিদকে ২-০ গোলে হারিয়েছে চেলসি। দুই লেগ মিলিয়ে ৩-১ ব্যবধানে জয়ী টুখেল শিবির। ২০১২ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছিল চেলসি। এরপর প্রথমবারের মতো ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে ফাইনালে উঠল দলটি। চেলসির রূপকথার পথচলায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল হবে এবার অল ইংলিশ ফাইনাল।

আগামী ২৯ মে ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত হবে ফাইনালে চেলসির প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের আরেক ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি। ২০১৮-১৯ মৌসুমের পর আবার অল ইংলিশ ফাইনাল। সেবার লিভারপুল-টটেনহ্যাম মুখোমুখি হয়েছিল শিরোপা লড়াইয়ে। জিতেছিল লিভারপুল।

শুরুর দিকেই এগিয়ে যেতে পারতো চেলসি। ১৮ মিনিটে দারুণ আক্রমণে রিয়াল মাদ্রিদের জাল খুঁজে নেয় ইংলিশ ক্লাবটি। লেফট ব্যাক বেন চিলওয়েল নিচু করে ক্রস বাড়ান। ডান পাশ থেকে ছুটে গিয়ে দারুণ শটে রিয়ালের জালে বল পাঠান চেলসির জার্মান স্ট্রাইকার টিমো ওয়ের্নার। কিন্তু দুর্ভাগ্য দ্য ব্লুজদের, অফ সাইটে গোলটি বাতিল হয়ে যায়।

পাল্টা আক্রমণে চেলসির রক্ষণভাগ কাঁপিয়ে দিতে সময় নেয়নি রিয়াল। ২৬ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে করিম বেনেজমার অসাধারণ শট প্রায়ই চেলসির জালের ঠিকানা করে নিয়েছিল। শেষ মূহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে দলকে বাঁচান চেলসির গোলরক্ষক এডুয়ার্ড মেন্দি।

দুই মিনিট পরই উল্লাসে মাতে চেলসি। দ্য ব্লুজরা রিয়ালের অরক্ষিত ডি-বক্সে ঢুকে পড়ে। থিবো কর্তোয়াকে বোকা বানিয়ে আলতো টোকায় তার মাথার উপর বল জালের উদ্দেশ্যে পাঠান কাই হাভের্টজ। কিন্তু বল গিয়ে ক্রস বারে লাগে। ফিরে আসা বলে সহজ হেডে গোল আদায় করে নেন টিমো ওয়ের্নার।

৩৬ মিনিটে ব্যবধান কমাতে পারতো রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু এবারও কপাল পোড়া বেনজেমার। অন্যভাবে বলা যায়, চেলসির গোলরক্ষক মেন্দি অসাধারণ দক্ষতায় বেনজেমাকে আরও একবার হতাশায় ডোবান। লুকা মদ্রিচের ক্রসে দারুণ হেড নেন বেনজেমা। উড়ন্ত বলাকার মতো লাফিয়ে ফিস্ট করে দলকে বিপদমুক্ত করেন সেনেগালের এই গোলরক্ষক।

৪২ মিনিটে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন রিয়ালের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা অস্ত্র সার্জিও রামোস। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটা তার ৩৮তম হলুদ কার্ড। ইউরোপ সেরা এই ফুটবল টুর্নামেন্টের রামোসই সর্বোচ্চ হলুদ কার্ড দেখা ফুটবলার। ৩২টি হলুদ কার্ড দেখা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইংলিশ সাবেক মিডফিল্ডার পল স্কোলস দুই নম্বরে।
৪৭ মিনিটেই স্কোর লাইন ২-০ হতে পারতো। সতীর্থের লম্বা করে বাড়ানো ক্রসে অসাধারণ হেড নেন ম্যাসন মাউন্ট। কিন্তু ক্রসবারে লেগে বল বাইরে চলে যায়। ৫৪তম মিনিটে আরেকটি দারুণ আক্রমণ সাজায় চেলসি। বল নিয়ে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে রিয়ালের ডি-বক্সে ঢুকে জোরালো শট নেন মাউন্ট। কিন্তু ইংলিশ এই মিড ফিল্ডারের শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়।

৫৯ মিনিটে সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে চেলসি। দুবার ক্রসবারে বল আঘাত করা কাই হাভের্টজ এবারও গোল আদায় করে নিতে পারেননি। জার্মান এই মিডফিল্ডারের সামনে কেবল রিয়াল গোলরক্ষক কর্তোয়া ছিলেন। কিন্তু তার নেওয়া শট শুয়ে বুট দিয়ে ফিরিয়ে দেন কর্তোয়া। ৬৬তম মিনিটে একইভাবে ফরাসি মিডফিল্ডার এনগোলো কন্তের শট ফেরান কর্তোয়া।

৭৭ মিনিটে আবারও রিয়ালের রক্ষণে চেলসির হানা। এবার ডানপাশ ঘেসে বল নিয়ে রিয়ালের ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ক্রিশ্চিয়ান পালিসিক। কিন্তু আমেরিকান উইঙ্গারের দারুণ ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি ম্যাসন মাউন্ট। অবিরত আক্রমণের ফল ৮৫তম মিনিটে গিয়ে পায় চেলসি। সাজানো আক্রমণে বুঝেশুনে মাউন্টের দিকে বল বাড়ান পালিসিক। এবার আর ভুল হয়নি মাউন্টের, প্লেসিং শটে বল জালে পাঠান ইংলিশ এই মিডফিল্ডার (২-০)।

দাপুটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে চেলসি। দলটির চোখে এখন ফাইনাল জেতার স্বপ্ন। যেখানে তাদের সামনে অপেক্ষা করছে ম্যানচেস্টার সিটি।