রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন শেখ হাসিনার একান্ত অনুগত চুপ্পু

 আমার দেশ
২৪ এপ্রিল ২০২৩

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনার একান্ত অনুগত মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনার একান্ত অনুগত মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

নিজস্ব প্রতিনিধি

বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনার একান্ত অনুগত মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তিনি শেখ হাসিনার কতটা অনুগত সেটা প্রমান করেছেন ‘এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি বইয়ে। এই বইয়ে তিনি শেখ হাসিনা ও তাঁর ফ্যাসিবাদী সরকারের কর্মকাণ্ড এবং শেখ মুজিবুর রহমানের বন্দনা করেছেন।

সোমবার (২৪শে এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে শেখ হাসিনার মনোনীত শাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ পাঠ করার জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরিন শারমিন চৌধুরী।

শপথ গ্রহণ মঞ্চে নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার এর মাঝে উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

শপথ গ্রহণের পর পরই নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে চেয়ার ছেড়ে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ার বদল করেন তারা। এরপর নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ নথিতে স্বাক্ষর করেন।

গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি ৭৩ বছর বয়সী মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করেন শেখ হাসিনা।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরুর আগে নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাকে স্বাগত জানান।

সকাল ১০টা ৫৪ মিনিটে রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা।

নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মন্ত্রীপরিষদ সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

নতুন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা ও ছেলে আরশাদ আদনান রনিসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনীতিক, সিনিয়র সাংবাদিক এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা।

শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ই ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংক পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম চুপ্পু। পিতা শরফুদ্দিন আনছারী, মাতা খায়রুন্নেসা। মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে এলএলবি ও বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

রাজনৈতিক জীবনে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। জেলা বাকশালের যুগ্ম-সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

সাবেক এই ছাত্রনেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সাহাবুদ্দিন আহমদকেই ২০০১ সালে চার দলীয় জোট ক্ষমতা গ্রহনের পর কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সহিংসতার অভিযোগ তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে চার দলীয় জোটের বিশাল বিজয়ের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ উঠে। এই অভিযোগ তদন্তের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছিল তাঁকে। তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় না নিয়ে কমিটি গঠন করার পর চার দলীয় জোটকে দায়ী করেই উদ্দেশ্য প্রণোদিত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল তখন। এনিয়ে ব্যাপক প্রচারণায় নেমেছিল আওয়ামী লীগ।

কর্মজীবনে তিনি জেলা ও দায়রা জজ এবং দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

সাহাবুদ্দিন পরপর দুবার বিসিএস (বিচার) অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। চাকরি থেকে অবসরের পর হাইকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন।

দুদক কমিশনার হিসেবে সাহাবুদ্দিন পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে ব্যাপক সহায়তা করেন।

আবদুল হামিদ সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে ৪১ দিনসহ টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসাবে ১০ বছর ৪১ দিন রাষ্ট্রপতির চেয়ারে ছিলেন।