৩ মে ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধি
ফ্যাসিবাদী সরকারের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতাদের (আওয়ামী এবং ইন্ডিয়াপন্থি) সাথে আলোচনা করেই এই আইন তৈরি করা হয়েছে।
বুধবার (৩রা মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২৩ উপলক্ষে আওয়ামীপন্থী ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘অধিকারের ভবিষ্যৎ গঠন (শেপিং এ ফিউচার অফ রাইটস)’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
আনিসুল হক দাবি করেন, এখন অভিযোগ আসলেই তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয় না। এটা একটি বিশেষ সেলে পাঠানো হয়, এরপর যাচাই-বাছাই শেষে আদালতে মামলা দাখিল করা হয়। আর এখন কিন্তু সাংবাদিকদের হয়রানি বা অযথা গ্রেপ্তার করা হয় না।
প্রথম আলো নিয়ে সংসদে শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাক স্বাধীনতা সবারই আছে। প্রধানমন্ত্রী এর বাইরে নন। তারও বাক স্বাধীনতা আছে। তাই তিনি তার বক্তব্য দিয়েছেন। একটা বিষয় স্বাধীন সাংবাদিকতা করার অধিকার সকলের আছে। কিন্তু সংবাদ সত্য যেটা সেটা প্রকাশ করতে হবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশ তলানিতে, এ বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে আফগানিস্তানের পরে যদি বাংলাদেশ থাকে, তাহলে যারা এটা নির্ণয় করেন তাদের গবেষণা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
তাঁর ভাষায় শেখ মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা কখনোই গণমাধ্যম তথা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করবেন না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য প্রণয়ন করা হয়নি। এটা সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল আইন যখন করা হয় তখন সাংবাদিক ও সম্পাদকদের সাথে কথা বলে ও তাদের অবজারভেশন নিয়েই আইন করা হয়েছে। তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করেই আইনটি করা হয়েছে। তারা তখন ২১ ধারার সাজা কমানোর সুপারিশ করেছিল। আমরা সেটা করেছি।
আনিসুল হক বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের একটা টেকনিক্যাল (কারিগরি) নোট পাঠানো হয়েছে। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি, তাদের কিছু ধারা বাদ দেওয়া এবং সংশোধনের বিষয়ে পরামর্শ ছিল। যদিও আমাদের মতভেদ রয়েছে। আমরা বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যেই, অক্টোবরের পরে নয়। আমরা সেপ্টেম্বরের মধ্যেই প্রয়োজনীয় সংশোধনীটা করব।’
গত বছরের জুনে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভায় সংবাদকর্মী ও মুক্ত মত প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা যাবে না বলে দাবি তোলে সম্পাদক পরিষদ।
এ বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘আর দেশের প্রচলিত আইনে বহু ধারা রয়েছে, যাতে সাংবাদিকেরা সুরক্ষা পান।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. গীতি আরা নাসরিন বলেন, বেশি গণমাধ্যম থাকলেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে না, সেটা আমরা দেখছি। সবচেয়ে জরুরি মুক্তভাবে কাজ করতে পারা। বিভিন্ন গবেষণায় এসেছে, যে দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বেশি, তথ্যের প্রবাহ বেশি সে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়নি। তিনি বলেন, গবেষণায় প্রমাণিত যেসব দেশে বৈষম্য বেশি, সেসব দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কম। অর্থাৎ বৈষম্য বেড়ে গেলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কমে যাবে। তিনি আরও বলেন, একসময়ে বাংলাদেশে অ্যাসিড সন্ত্রাস বড় ধরনের সমস্যা ছিল। গণমাধ্যমের অবদানে সেটা আজ কমে গেছে। ভয় কিংবা সুবিধা পাওয়ার জন্য গণমাধ্যমের কাজ করা উচিত নয়। নানা ধরনের সমস্যা থাকতে পারে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্স বার্গ ফন লিন্ডে, ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের ইনচার্জ সুজান ভাইজ, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. গীতি আরা নাসরিন, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।