রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলাকে ‘সৌভাগ্য’ বলে মন্তব্য করছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। বর্ষীয়ান এই আলেম বলেছেন, ‘এটাই আমাদের নাযাতের উছিলা হবে। এটাই আমাদের সৌভাগ্য’।
অপরদিকে, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মুহাম্মাদ মামুনুল হক মামলার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, তথাকথিত ভুঁইফোড় সংগঠন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চেতনার ব্যবসা করতে চায়। বাংলাদেশে মদিনার নাম যাতে উচ্চারিত না হয়, মদিনার আদর্শ যাতে বাস্তবায়িত না হয়, মদিনার প্রভাব যাতে না থাকে, সেজন্য মদিনার নাম মুছে ফেলার জন্য এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এটাই হলো মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের উগ্রবাদী সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
উল্লেখ্য, মদিনা সনদে দেশ চালানো এবং ভাস্কর্যের বিরোধিতার নামে শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননার অভিযোগ এনে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মুহাম্মাদ মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সোমবার (০৭ ডিসেম্বর) দুটি মামলা হয়। একটি মামলায় শুধু আল্লামা মামুনুলকে আসামি করা হয়। অপরটিতে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির ফয়জুল করিমকেও আসামি করা হয়।
তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটা অখ্যাত সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও আইনজীবী আব্দুল মালেক বাদী হয়ে এই দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দুটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মামলার প্রতিক্রিয়ায় আল্লামা বাবুনগরী যা বললেন:
তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মামলার প্রতিক্রিয়া বর্ষীয়ান আলেম আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বিষয়টিকে ‘সৌভাগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন।
সোমবার বাবুনগরীর একান্ত সচিব ইনামুল হাসান ফারুকী তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আমার প্রাণপ্রিয় শায়েখ ও মুরশিদ কায়েদে আজম শাইখুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে যখন বললাম, ভাস্কর্য ইস্যুতে আপনাকেসহ আল্লামা মামুনুল হক ও আল্লামা ফয়জুল করীম সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে’।
‘হুজুর হেসে বললেন, কোরআন-হাদীসের বাণী পৌঁছাতে গিয়ে ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ায় আমাদের নামে মামলা হয়েছে। এটাই নাজাতের উছিলা হবে, আর এটাই আমাদের সৌভাগ্য’।
আল্লামা মামুনুল হকের প্রতিক্রিয়া:
মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চালানোর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহীতা মামলাটিকে দু:খজনক ও অনভিপ্রেত হিসেবে মন্তব্য করেছেন আল্লামা মামুনুল হক।
সোমবার তিনিসহ ৩জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর ফেসবুক লাইভে মামুনুল হক বলেন, এই মামলা ও এই মামলার প্রেক্ষাপট তৈরী করা ও পেছন দিক দিয়ে যে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। শুধু আমাকে বা অন্য দুইজন আলেমকে নিয়েই নয়- আমি উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের স্বার্থ নিয়ে। এই মামলার মধ্যে আমি বাংলাদেশ-বিরোধী একটি কূটিল ষড়যন্ত্রের স্পষ্ট আভাস পাচ্ছি।
মামুনুল হক বলেন, মদিনা সনদ নিয়ে আল্লামা বাবুনগরীই যে প্রথম কথা বলছেন বিষয়টা এমন না। এর অনেক আগেই মদিনা সনদ নিয়া কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সেই বক্তব্য এখনও ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। সুতরাং, মদিনা সনদ নিয়ে যারা বিরুদ্ধাচারণ করছেন, এটা কেবল বাবুৃনগরীর বিরুদ্ধেই নয়, রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধেও।
মামুনুল হক বলেন, এখন তারা বাবুনগরীর বিরুদ্ধে মামলা করছে, তাদের এই অসুভ তৎপরতা বন্ধ করা না হলে ভবিষ্যতে তারা শেখ হাসিনাকে বিবাদী করবে এবং তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অপতৎপরতা চালাবে। এতেই বুঝা যায় যে এই ষড়যন্ত্রটি আসলে কতটা গভীর!
মামুনুল হক বলেন, সরকার দলীয় সকল নেতা-কর্মীদেরকে বিশেষভাবে বলবো আপনারা যারা আপনাদের নেত্রীকে ভালোবাসেন , তার আদর্শ অনুসরণ করেন এবং তার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আপনারা যারা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালনা করেন, আপনারা বিষয়টির গভীরতা উপলব্ধি করবেন। এই ষড়যন্ত্র শুধু বাবুনগরীর বিরুদ্ধে নয়, এই ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে। যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর করতে চায়। এবং বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে, ইসলামের ঐতিহ্যকে এবং মদিনার মর্যাদাকে বাংলাদেশ ভুলুণ্ঠিত করতে চায় এটা সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের ভুইফোড় সংগঠনের এ ধরণের তৎপরতায় আমি উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম এখনও কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো প্রোগ্রাম দেয় নাই। যা হয়েছে তা বিচ্ছিন্ন ভাবে। অথচ এমন সময়েই মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের সংগঠনটি মাঠে নেমে আলেমদের বিরুদ্ধে উস্কানিকমূলক কথা বলা এবং বড় বড় আলেমদের বিরুদ্ধে অকথ্য ভাষায় বিষোদ্গার করে চলেছে। যা কোটি মুসলমানের হৃদয়ে আঘাত করেছে। এছাড়াও তারা বর্ষীয়ান আলেমদের বিরুদ্ধে কুরুচিকর ও জঘন্য ভাষা ব্যবহার করেছে।
মামুনুল হক বলেন, তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আস্ফালন দেখে ২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। তখনও সারাদেশে মঞ্চ তৈরীর মাধ্যমে ইসলামবিরোধী পরিবেশ তৈরী করা হয়েছিলো। ২০২০ সালে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে এজেন্ডা নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে তারা। এই ধরণের সংগঠন দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরী করে থাকে।
তিনি বলেন, যত্রতত্র কোনো ব্যক্তির ভাস্কর্য নির্মাণ তাদের সম্মান ও মর্যাদাহানিকর। যেখানে-সেখানে ভাস্কর্য হলে দেখা যাবে মানুষ সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করবে। সেখানে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়া হবে।
উল্লেখ্য, ভুঁইফোড় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের সংগঠনটি নাস্তিক শাহরিয়ার কবীর, কট্টর হিন্দুত্ববাদী পিযুষ বন্দোপাধ্যায় ও শেখ হাসিনাপুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় এর বন্ধু মোহাম্মদ আরাফাত গংদের প্রত্যক্ষ মদদে পরিচালিত হচ্ছে। সারাদেশে ভাস্কর্যের নামে মূর্তির সার্বজনীর প্রচার ও প্রসারের যে উদ্যোগ নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার, তার প্রতিবাদ করায় হেফাজতে ইসলামের বর্ষীয়ান নেতাদের পেছনে এই সংগঠনটিকে লেলিয়ে দিয়েছেন ইসলাম-বিদ্বেষী এসব ব্যক্তি।
ইসলাম-বিদ্বেষী এই অপতৎপরতার সমর্থনে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশে এরই মধ্য মাঠে নেমেছেন মন্ত্রী-এমপি-যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। বিভিন্ন ওয়াজে আলেমদের গালাগালি ও অপমানের ঘটনাও এরই মধ্যে ঘটিয়েছেন তারা। ঘাড় মটকে দেয়, বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়, খেলা হবে – টাইপের হুমকি-ধামকি অব্যাহত রয়েছে আলেমদের বিরুদ্ধে।
আর সবশেষ ইসলাম-বিদ্বেষে যোগ হয়েছে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্য।
সেতুমন্ত্রী বলেছেন, রাজধানীর দোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ কাজ চলবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, নির্মাণাধীন ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ চলবে। আমরা ভাস্কর্য নির্মাণ করব।
সোমবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১২টায় সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সমসাময়িক ইস্যুতে প্রেস ব্রিফিংয়ে এভাবেই ভাস্কর্যের নামে মূর্তির পক্ষে আওয়ামী লীগ সরকারের অবস্থান ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের।