এদিকে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদন বলছে, শুধু সেপ্টেম্বরেই ৫০টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন–পরবর্তী একটি সহিংসতার ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৯০১ জন। তাঁদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ২৮ জন। পুলিশ ২৯ জনকে আটক করেছে।
এমএসএফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৮০৫ জন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী ও সাধারণ মানুষ, ৬ জন সাংবাদিক। এদিকে পুলিশের ভাষ্যমতে, এ সময়ে সহিংসতার ঘটনায় তাদের ৭৬ জন সদস্য আহত হয়েছেন।
আসকের প্রতিবেদন বলা হয়, গত ৯ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, জোরপূর্বক অপহরণ ও রহস্যজনক নিখোঁজ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে হয়রানি, সীমান্তে নির্যাতন, হত্যাসহ নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে।
২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাব এবং এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল উল্লেখ করে আসক বলেছে, গত এপ্রিলে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবার নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। গত ৯ মাসে বিচারবহির্ভূতভাবে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ১৫ জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে এমএসএফের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বরে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা বিচারবহির্ভূত তিনটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
ভুক্তভোগীদের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ অনুযায়ী, এই সময়ে সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে চারজনকে অপহরণ করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন ফেরত এসেছেন এবং একজনকে পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। দুজন এখনো নিখোঁজ। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বরাবরের মতো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে পাঁচজনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আসকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৯ মাসে দেশে দুটি পৃথক ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের চারটি ঘরসহ আটটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা ঘটে। ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলি, নির্যাতন ও ধাওয়ায় নিহত হন ১২ বাংলাদেশি। এ ছাড়া আহত হন সাতজন। অপহৃত হন আটজন। একই সময়ে কারা হেফাজতে ৫৪ জন মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েদি ২০ জন ও হাজতি ৩৪ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ২৮ জন। ঢাকা বিভাগে গণপিটুনিতে সবচেয়ে বেশি ১৫ জন নিহত হন।
এ ছাড়া ৯ মাসে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ৬৬ জন সাংবাদিক। আসকের তথ্যমতে, আরও ১৭৯ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। আর দুর্বৃত্তদের গুলিতে কুমিল্লায় একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
যৌন হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২০৯ জন নারী–পুরুষ। আসকের তথ্য বলছে, তাঁদের মধ্যে ১৩৬ জন নারী ও ৭৩ জন পুরুষ। বখাটেদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন ১২০ জন। যৌন হয়রানির কারণে সাতজন নারী আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটেদের হাতে ছয়জন পুরুষ নিহত হয়েছেন।
ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩৪ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৪ জনকে। ধর্ষণের পর সাতজন নারী আত্মহত্যা করেছেন। ১২৮ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে।
এই সময়ে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৬৭ জন নারী। তাঁদের মধ্যে ২২৮ নারীকে হত্যা করা হয়। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৬৭ জন নারী। ঘটনাগুলোর মধ্যে যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৪৮ নারী। যৌতুকের জন্য নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৬৯ জনকে ও একই কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৬ নারী।
এ ছাড়া গত ৯ মাসে ১৯ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অ্যাসিড–সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ১১ নারী। তাঁদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন।