রাজনীতিতে উত্তাপ : নয়া পল্টনের সমাবেশ থেকে চূড়ান্ত বার্তা বিএনপি’র

সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজপথে থাকা বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি শেষ হচ্ছে আজ। শেষদিনে রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগের জন্য চূড়ান্ত বার্তা দেবে বিএনপি। দুর্গাপূজার পর শুরু হবে বিরোধী জোটের চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলন। সেই ধাপের কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে গত এক সপ্তাহ ধরে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা জোট ও দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা। এ ছাড়া বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও কর্মসূচির খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ঘণ্টা বেঁধে আল্টিমেটাম দেয়ার পথে এবার হাঁটবে না বিএনপি। তবে আজকের সমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগের জন্য চূড়ান্ত একটি বার্তা দেবে দলটি। একইসঙ্গে রাজধানীতে আরও একটি মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয়া হবে। সেই মহাসমাবেশের সম্ভাব্য তারিখ হতে পারে ২৭ বা ২৮শে অক্টোবর।

সারা দেশ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের ঢাকায় এনে মহাসমাবেশে বড় জমায়েত করার আপাতত পরিকল্পনা রয়েছে। সেই মহাসমাবেশ থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন বিএনপি মহাসচিব। প্রথমে সচিবালয়মুখী পদযাত্রা কিংবা ঘেরাও দিয়ে শুরু হতে পারে লাগাতার কঠোর কর্মসূচি। এরপর ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, অবস্থান কর্মসূচি, আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী রোডমার্চ, সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি আসতে পারে। তফসিলের আগেই রাজপথে দাবি আদায়ে ঝড় তুলতে চায় বিএনপি। আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চায় তারা। তবে পরিস্থিতি বুঝে কর্মসূচির ধরন পাল্টানো হতে পারে বলে নেতারা জানিয়েছেন। সরকারকে বাধ্য করতে আসতে পারে আরও কঠোর কর্মসূচি। রাজনৈতিক সমাধান না হলে তফসিল ঘোষণার দিন থেকেই হরতাল বা ঢাকা অবরোধের মতো হার্ডলাইনের কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হতে পারে।বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এক সদস্য মানবজমিনকে জানান, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচির খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০ থেকে ২৪শে অক্টোবর দুর্গাপূজার ছুটির মধ্যে বিএনপি’র কোনো কর্মসূচি থাকবে না। চূড়ান্ত কর্মসূচি শুরু হবে পুজোর ছুটির পর। সবগুলো কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। তবে ১৮ তারিখের সমাবেশে কী ঘোষণা দেয়া হবে সেটা চূড়ান্ত হয়নি। এই বিষয়টি মঙ্গলবার রাতে কিংবা বুধবার দুপুরে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মহাসচিবকে জানাবেন। মহাসচিব হয়তো সমাবেশ শেষে সেটা ঘোষণা করবেন। এ ছাড়া বৈঠকে বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অনেককে ইতিমধ্যে ফেরানো হয়েছে। যারা বাইরে রয়েছেন তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় করা হবে।

এদিকে বিএনপি’র কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে আজ রাজধানীতে সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ, সমমনা ১২ দলীয় জোট, সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট, এলডিপি ও লেবার পার্টি। বেলা সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, বেলা ৩টায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে ১২ দলীয় জোট, বিকাল ৫টায় আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট, বেলা ১১টায় ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশনে লেবার পার্টি, বেলা তিনটায় এফডিসি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপি সমাবেশ করবে। এসব সমাবেশ থেকে কি কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হবে সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেননি দলগুলোর দায়িত্বশীল নেতারা। তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত বিএনপি থেকে চূড়ান্ত কর্মসূচির বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। মঙ্গলবার রাতে বা বুধবার সকালে হয়তো বিএনপি’র নীতিনির্ধারণী ফোরাম থেকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করে আমাদের পাঠাবে।

এর আগে সরকার পতনের একদফা দাবিতে গত ১৯শে সেপ্টেম্বর থেকে ৫ই অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম ধাপের লাগাতার কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ৭টি বিভাগীয় রোডমার্চ, শ্রমিক কনভেনশন, মহিলা সমাবেশ ও কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ৫ই অক্টোবরের চট্টগ্রামের রোডমার্চ থেকে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। এর মধ্যে পেশাজীবী কনভেনশন, ছাত্র সমাবেশ এবং যুব সমাবেশ হয়েছে। আজকের নয়াপল্টনের সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান মানবজমিনকে বলেন, আমরা এই সরকারকে অনেক সময় দিয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকার উপলব্ধি করতে পেরেছে তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার সুযোগ নেই, তাদের ওপর জনগণের আস্থা উঠে গেছে। আগামীতে পুজোর সময়টা সাময়িক বিরতি চলবে। তারপরই বিশাল গণজোয়ারে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ এই সরকারকে বিদায় দিতে বাধ্য করবে, এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।