রাজধানীর টার্মিনালে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই

logo

প্রকাশ : সোমবার ৩ নভেম্বর ২০২৫, ২০:৩২

সহযোগী এক দৈনিকে রাজধানী ঢাকায় বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। ওই প্রতিবেদন পড়ে সহজে অনুমেয়, চাঁদাবাজিকে আমরা বৈধ ও স্বাভাবিক হিসেবে নিয়েছি। বৈধ-অবৈধ কর্তৃপক্ষের অংশগ্রহণে এটি এখন প্রকাশ্যে দিবালোকে সংঘটিত হচ্ছে। দূরপাল্লার যানবাহন টার্মিনালে প্রবেশ-প্রস্থানের সময় এটি করা হচ্ছে। জনপ্রত্যাশা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে আসবে; কিন্তু বাস্তবে ঘটছে তার ঠিক উল্টোটি। চাঁদাবাজির আরো বিস্তার ঘটেছে।

রাজধানীর তিন টার্মিনাল- গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালীতে নির্বিঘেœ চাঁদাবাজি চলছে। বছরে তিন টার্মিনালে চাঁদা তোলা হচ্ছে ৩৬৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, প্রতিদিন এক কোটি টাকা করে চাঁদা তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হয় সায়েদাবাদে, ২৩০ কোটি ৪০ লাখ। মহাখালীতে ৮৯ কোটি ৬৪ লাখ, আর গাবতলীতে ৪৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। তবে সহজেই অনুমেয়, চাঁদা তোলার পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি।

সংশ্লিষ্ট সবার জানা, মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর নামে চাঁদাবাজি সংঘটিত হয়। বাস্তবে এর ভাগ পান রাজনৈতিক নেতা, টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণকারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন। প্রকৃত বাস্তবতায় ভাগবাটোয়ারার দুষ্টচক্রে আটকা পড়ে আছে দেশের পরিবহন খাত। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার পরও চাঁদার ভাগাভাগি আগের মতোই রয়ে গেছে। হাতবদলের মাধ্যমে শুধু পুরনোদের জায়গায় নতুনরা এসেছে।

অবাক করার মতো বিষয় হলো- প্রকাশ্যে রাখঢাকহীনভাবে চাঁদা আদায় করা হয়। এ কাজে রীতিমতো রসিদ ব্যবহারও হয়ে থাকে। এর পরও চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো উদ্যোগ নেই।

শেখ হাসিনার অপশাসনকালে পরিবহনে চাঁদাবাজির যে তীব্রতা ছিল, ক্ষেত্রবিশেষে তা আরো বেড়েছে। রাজধানীতে এ ধরনের চাঁদাবাজ চক্র আরো বহু রয়েছে। সরেজমিন বোঝা যায়, চাঁদাবাজির আওতা ও পরিমাণ কত বেড়েছে। ফুটপাথ, শপিং সেন্টার, কাঁচাবাজার অর্থাৎ- ব্যবসার এমন কোনো কেন্দ্র নেই, যেখানে চাঁদাবাজি নেই। চাঁদাবাজরা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নিয়ে জায়গা বরাদ্দ দিয়ে গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানীর সব ব্যস্ত এলাকার ফুটপাথে হকার বসিয়েছে। হকারদের দাপট আগের চেয়ে বেড়েছে। ফলে হাঁটার জায়গা অবশিষ্ট নেই। এ ধরনের চাঁদাবাজিতে সবদিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। অন্যদিকে ফুলেফেঁপে উঠছে একটি অবৈধ চক্র।

গণপরিবহনে চাঁদাবাজির কারণে এর ভার সরাসরি যাত্রীদের কাঁধে গিয়ে পড়ছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা-কুমিল্লা রুটে দূরপাল্লার একটি গাড়িকে কমলাপুরে ৮৫০, টিকাটুলি ৬০০ ও কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করতে দিনে এক হাজার ৭৫০ টাকা দিতে হয়। ৪০ সিটের একটি গাড়িকে তিন হাজার ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। দূরপাল্লার সব রুটের গাড়িকে এভাবে উচ্চহারে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে যাত্রীপ্রতি ভাড়া বেশ কমে আসত। ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহনের চাঁদার প্রভাব পড়ে পণ্যের দামে। এ কারণে বাজারে বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়। দেখা যাচ্ছে, সবদিক দিয়ে ক্ষতির শিকার সাধারণ মানুষ।

চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেকাংশে কমে যেত। তবু চাঁদাবাজিমুক্ত করার কঠোর পদক্ষেপ প্রশাসন নিচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারও এ কাজে ব্যর্থ হচ্ছে, পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের সময় নিঃসন্দেহে চাঁদাবাজি সব সীমা ছাড়িয়ে যাবে। দুর্ভাগ্যজনক হলো- দেশের মানুষের চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি নেই। এটিই যেন সবার নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here