রয়েসয়ে ভারতবিরোধী প্রচারে বিএনপি

সংসদ নির্বাচনের পর ভারত ইস্যুতে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। নির্বাচনে ভারতের ভূমিকায় আগে থেকেই অসন্তুষ্ট বিএনপি। এবার ভারতবিরোধী আন্দোলনকে আরও জোরদার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এতদিন বক্তব্য-বিবৃতিতে তারা ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেও এবার দেশটির পণ্য বর্জনের আন্দোলনেও সম্পৃক্ত হয়েছে। যদিও বিএনপির একাংশ এই আন্দোলনে সরাসরি না জড়িয়ে কৌশলী ভূমিকায় থাকার পক্ষে। তবে দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী মনে করছেন, তাদের সামনে এর বিকল্প নেই। যতই কূটনীতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করা হোক, শেষ পর্যন্ত ওই দেশটি একটি নির্দিষ্ট দলের পক্ষে কাজ করছে। তাই দেশের জনগণের অনুভূতি সামনে রেখে দেশপ্রেমকে উজ্জীবিত করে ভারতবিরোধী অবস্থান আরও জোরদার করার পক্ষে ওই সব নেতাকর্মী।

দলটির সূত্র জানায়, ঈদুল ফিতরের পর ভারতবিরোধী ইস্যু আরও জোরালো করে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়াও লিফলেট বিতরণ, সভা-সমাবেশে এই ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া সমমনা বিভিন্ন দল, জোট ও সংগঠনকেও মাঠে নামানোর ইচ্ছা রয়েছে দলটির। দলগুলো সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা সমকালকে জানান, গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের অবস্থান এবং একটি দলকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানানোর ঘটনায় তারা ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, মন্ত্রী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারতের সম্পৃক্ততা নিয়ে যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে বিএনপি নেতাকর্মীর কাছে আরও স্পষ্ট হয়েছে– দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভারত গণতন্ত্রের বিপক্ষে ভূমিকা পালন করেছে। একটি দলকে ক্ষমতায় আনতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের মতামতকে তোয়াক্কা না করে নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এখান থেকেই বিএনপিও তাদের কৌশলে দ্রুত পরিবর্তন আনে। ভারতবিরোধী অবস্থানকে আর রাখঢাক না করে প্রকাশ্য বিরোধিতায় নেমেছে দলটি। এতদিন বিএনপির গুটিকয়েক নেতা ভারতবিরোধী বক্তব্য-বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার বেশির ভাগ নেতা মাঠে নেমেছেন।

বিএনপির একাংশের মতো সমমনা দল গণতন্ত্র মঞ্চেরও সরাসরি ভারতবিরোধী অবস্থান কৌশলের সঙ্গে দ্বিমত রয়েছে। তাদের মতে, ভারতের মতো প্রতিবেশীর সঙ্গে সরাসরি বিরোধী অবস্থানে গিয়ে কতটুকু সুফল পাওয়া যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির হাইকমান্ডকে আরও ভেবেচিন্তে এগোনো উচিত হবে বলে মত দেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণতন্ত্র মঞ্চের একজন শীর্ষ নেতা সমকালকে বলেন, সরাসরি ভারতের মুখোমুখি হওয়া ঠিক হচ্ছে না। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে ভারতকে মোকাবিলা করা উচিত।
গতকাল শনিবার এক ইফতার মাহফিলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের খুঁটির জোর জনগণ নয়, একটি দেশ। সেই দেশের জনগণ নয়; তার পরিচালকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ ফুঁসে উঠছে। তারা ওই দেশের পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। জনগণ কবে বলে বসে– ওই দেশেই আর যাব না।

ভারতের আনুগত্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশ চালাচ্ছে অভিযোগ করে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ গতকাল বলেছেন, একটি রাষ্ট্রের প্রতি নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বর্তমান শাসক দলের অভ্যাস। ‘দিল্লি আছে, তারা আছে’ এ ধরনের কথা বলতে আওয়ামী লীগের লজ্জাবোধ হয় না।

ভারতবিরোধী প্রচারণায় পণ্য বর্জনের আন্দোলনকে প্রসারিত করতে গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমমনা ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভারতের পণ্য বর্জনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। এর আগে গত বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে দিয়ে তিনি দেশটির পণ্য বর্জনের আন্দোলনকে সমর্থন জানান। এরপর থেকেই এই আন্দোলনে বিএনপির সরাসরি সম্পৃক্ততার বিষয়টি সামনে আসে।

রিজভীর ভারতের পণ্য বর্জনের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের ঘটনাকে বিএনপির অবস্থান মনে করলেও শুরুতে এটি মানতে নারাজ ছিলেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলের সব নেতাই এখন এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে স্পর্শকাতর এ বিষয়ে বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতা প্রকাশ্যে কথা বলছেন না।

samakal