‘যে চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে, প্রকৃত রিজার্ভ তার তুলনায় অনেক কম’: রিজার্ভের পরিমাণ কত?

Logo

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

 ০৭ জুলাই ২০২৩sharethis sharing button

বৈশ্বিক মহামারি করোনার মধ্যেও ২০২১ সালের আগস্টে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এরপর থেকেই রেমিট্যান্স, রফতানি আয়ে পতনের সাথে সাথে আমদানির খরচ বাড়ায় রিজার্ভে ধারাবাহিক পতন দেখা দেয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এই অবস্থার আরও অবনতিই হয়। দেশে দেখা দেয় ভয়াবহ ডলার সংকট। ডলার সংকটের উত্তোরণ ঘটানো এবং যথাযথ পরিমাণে রিজার্ভ ধরে রাখার লক্ষ্যে সরকার গত বছর এপ্রিল থেকে বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়, এতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার অনেকটাই কমে। পাশাপাশি ডলার খরচ করতে হয় এমন সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) এলসি খোলার পরিমাণ ২৫ শতাংশের বেশি কমে ৬২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার হয়। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৮৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ১১ মাসেই প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার এলসি কমেছে। অথচ এই সময়ে রিজার্ভ বাড়েনি, বরং কমেছে। গত বৃহস্পতিবার রিজার্ভ কমে ২ হাজার ৯৯৭ কোটি ডলারে নামে, যা গত বুধবার ছিল ৩ হাজার ১১৬ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (আকু) আমদানি দায় বাবদ ১০৯ কোটি ৬৭ লাখ ডলার পরিশোধ করার কারণে রিজার্ভ কমেছে। রিজার্ভের অর্থে এবার মে-জুন সময়ের আমদানি দায় পরিশোধ করা হয়। বর্তমানে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়নে। বা ৩০ বিলিয়নের কম। নয়টি সদস্য দেশের আঞ্চলিক আমদানির আর্থিক লেনদেনের কাজ করা হয় আকু পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে। দেশগুলো হলোÑ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। প্রতি দুই মাস অন্তর এ বিল পরিশোধ করা হয়। এর আগে মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক আকু’র ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করে, যার ফলে রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। অবশ্য গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে, প্রকৃত রিজার্ভ তার তুলনায় অনেক কম।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস বাংলাদেশ বা এবিবি এবং বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন বা বাফেদা গত সোমবার এক বৈঠকের পর টাকার বিপরীতে ডলারের মান এক লাফে ২ দশমিক ৮৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৮ দশমিক ৮৫ টাকা। ডলারের বিপরীতে টাকার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় দরপতন। এতে বলা হয়, আন্তঃব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলার ১০৮ দশমিক ৮৫ টাকা করে কেনাবেচা করা হবে। একই দামে কেনা হবে রেমিট্যান্সও। রফতানির ক্ষেত্রে এক টাকা কমে ১০৭ দশমিক ৫০ টাকা এবং আমদানির ক্ষেত্রে ১০৯ টাকা করে কেনাবেচা করা হবে।

অথচ ১৯৭২ সালে দেশে ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৭ দশমিক ৮৭৬৩ টাকা। আর ২০০৪ সালে তা বেড়ে হয় ৫৯ দশমিক ৬৯ টাকা। অর্থাৎ ৩২ বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমেছে ৮৭ শতাংশ। আর ২০২২ সালের মে মাসেও ডলারের মূল্যমান ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ পরের ১৮ বছরে টাকার মান কমেছে আরও ৩২ শতাংশ। আর গত বছরের ১ জুন এক মার্কিন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল ৮৯ টাকা। আর ২০২৩ সালের ৪ জুলাই ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৮ দশমিক ৮৫ পয়সা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে ডলার প্রতি দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৮৫ টাকা। গত এক বছর ধরে ডলারের বিপরীতে টাকার দর ধারাবাহিকভাবে কমছেই। নানা পদক্ষেপ নিয়েও এই দরপতন ঠেকানো যাচ্ছে না। এতে আমদানি কমলেও মূল্যস্ফীতি ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে রিজার্ভ থেকে ঠিকই অতিরিক্ত বিল গুনতে হচ্ছে সরকারকে। এর অর্থ হচ্ছে ডলার ক্রমশ শক্তিশালী হয়েছে, টাকা সেভাবে শক্তিশালী হয়নি। ফলে এখনো টাকার মান ধরে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। গত সোমবারও রিজার্ভ থেকে বৈদেশিক পেমেন্টের জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে ৭২ মিলিয়ন ডলার নতুন আন্তঃব্যাংক দরে বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

যদিও চলতি মাস থেকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ হিসাবায়নে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পদ্ধতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই পদ্ধতিতে রফতানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) সরবরাহ করা সাড়ে ৪ বিলিয়ন ও শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ২০ কোটি ডলার রিজার্ভে দেখাচ্ছে। এছাড়া গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) ২০ কোটি, লং টার্ম ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (এলটিএফএফ) তহবিলে ৩ কোটি ৮৫ লাখ, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানকে ৪ কোটি ৮০ লাখ এবং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) আমানত রিজার্ভে দেখাচ্ছে। সবমিলিয়ে বর্তমানে রিজার্ভে যে অর্থ দেখানো হচ্ছে, সেখান থেকে ৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার বাদ যাবে। আর তাহলে বর্তমানে রিজার্ভ দাঁড়াবে ২৪ বিলিয়নের কম। আর গত বছর যদি বাংলাদেশ ব্যাংক পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা না দিতো বা স্বাভাবিক এলসি অব্যাহত থাকত তাহলে আরও কমপক্ষে ২১ বিলিয়ন এলসি বাড়তো। এই হিসাব ধরলে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৩ বিলিয়নে দাঁড়াত। এছাড়া আগামী ৩৬০ দিনের ডলারের সকল পেমেন্ট রিজার্ভের হিসাব থেকে বাদ যাবে বলে মনে করে আইএমএফ। তাদের মতে, এগুলো রিজার্ভে দেখানো যাবে না। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শর্ট টার্ম ঋণ রয়েছে ১৪ বিলিয়নের বেশি (যদিও এটি প্রকাশিত নয়)। রিজার্ভের হিসাব থেকে এগুলোও বাদ দিতে বলেছে আইএমএফ। আইএমএফ’র সকল হিসাব অনুযায়ী সেই অর্থ বাদ দিলে রিজার্ভ কত দাঁড়াবে এ হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললেও সঠিক হিসাব দিতে পারেনি কেউই।

যদিও ধাপে ধাপে টাকার অবমূল্যায়ন করাটাই যথাযথ পদক্ষেপ বলেও মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তা না হলে এটা বাজারে এক ধরনের শক বা চাপ তৈরি করবে, মূল্যস্ফীতি হঠাৎ করে বেড়ে যাবে এবং মানুষ এর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে না। একই সঙ্গে রিজার্ভের হিসাব নিয়েও বড় ধরনের গড়মিল রয়েছে। আসলে রিজার্ভ কত তা বাংলাদেশ ব্যাংককে তুলে ধরা দরকার বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।

সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এতো দিনে জোর করে ডলারের দাম টাকার বিপরীতে কমিয়ে ধরে রেখেছিল। কারণ ডলারের দাম বাড়লে তা আমদানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তাদের ধারণা ছিল। ডলারের দাম ধরে রেখে কাক্সিক্ষত মাত্রায় রেমিট্যান্স এবং রফতানি আয় করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। একই সাথে রয়েছে আইএমএফ’র শর্তও। যার কারণে সেই অবস্থান থেকে তাদেরকে সরে আসতে হচ্ছে। বাংলাদেশের মুদ্রা, চীন, ভারত, ভিয়েতনাম-এ দেশগুলোর তুলনায় ডলারের বিপরীতে টাকা অতিমূল্যায়িত ছিল। এখন হঠাৎ করেই ছেড়ে দেয়ার কারণে টাকার মান দ্রুত নেমে যাচ্ছে।

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে, প্রকৃত রিজার্ভ তার তুলনায় অনেক কম। তিনি বলেছেন, সরকারের হাতে ৩০ বিলিয়ন ডলার আছে বলে বলা হচ্ছে, আমাদের ধারণা আমরা রিজার্ভের যে হিসাবটি পাই, সেটা একধরনের আপাত হিসাব। কি পরিমাণ বকেয়া রয়েছে, যার পেমেন্ট করতে হবে, সেগুলোর পেমেন্ট ঠিকমতো করতে হলে নেট রিজার্ভে এখন যেটি আসছে (তুলে ধরা হচ্ছে), সেখানে বড় রকমের ঘাটতি রয়েছে। একই সঙ্গে এই ঘাটতির কারণে আগে থেকেই বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির রি-পেমেন্ট পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকাররে তরফ থেকে তাদের অনুরোধ করা হয়েছে, এই মুহূর্তে তারা যেন বিদেশি মুদ্রায় পেমেন্ট না করে। বড় কোম্পানির রয়্যালটি এবং অন্যান্য পেমেন্ট পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি কোম্পানির বিদেশি ঋণের কিস্তি পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এগুলো যদি হিসাব করে, তাহলে সরকারের যে রিজার্ভ ২৩ বা ২৪ বিলিয়ন ডলার নেট বলা হচ্ছে, সেটি আসলে আরও অনেক কম। সুতরাং আমরা আপাত যে হিসাব পাচ্ছি, প্রকৃত রিজার্ভটি আরও সংকটকালীন। সেখানে যদি উপযুক্ত রকমের উন্নতি না হয়, তাহলে আইএমএফ বা এডিবির পরবর্তী কিস্তিগুলো না এলে বৈদেশিক পেমেন্টের ক্ষেত্রে সংকট চলতেই থাকবে বলে উল্লেখ করেন ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

আর্থিক খাত নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ইনকিলাবকে বলেন, যে হারে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে সেটা বাড়তে দিলে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাবে। এরই মধ্যে নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে। এর পরে যদি মূল্যস্ফীতি আরো বাড়ে, তাহলে নিম্নবিত্ত অনেক সমস্যায় পরে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ব্যাংকগুলোর কাছে নতুন আন্তঃব্যাংক হারে ডলার বিক্রি করা হয়েছে।

সূত্র মতে, মহামারীতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে এগোতে শুরু করলে সরকারের আমদানির চাপ বেড়ে যায়। আমদানি খরচ বাড়লেও রফতানি আয় ততটা না বাড়ায় অস্থির হতে থাকে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার। এতে বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ে ক্রমাগত চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে চলছিল বাংলাদেশের। এর মধ্যে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয় ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ। এর প্রভাবে মান হারাতে শুরু করে টাকা, মূল্যস্ফীতির পারদ বাড়তে বাড়তে ৯ শতাংশের ঘরে পৌঁছে যায়। যদিও বাস্তবে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক ছাড়িয়েছে অনেক আগে বলে মত আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞদের।

সূত্র জানায়, চলতি হিসাবের ঘাটতি পূরণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গত বছরের জুলাইয়ে আইএমএফ’র কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ সরকার। বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকের পর গত জানুয়ারি মাসে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে বৈশ্বিক এ আর্থিক সংস্থা, যার প্রথম কিস্তি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে। ওই ঋণের সঙ্গে বেশ কিছু কাঠামো ও নীতি সংস্কারের শর্ত আইএমএফ বেধে দিয়েছে, যার পরিপালন ইতোমধ্যে শুরু করেছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা এবং রিজার্ভ গণনার পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়টিও এর মধ্যে রয়েছে।

আইএমএফ’র সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাব করার একটি নীতিমালা জারি করে এর নাম দেয়া হয়েছে বিপিএম৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন)। বিশ্বে এটি বিপিএম৬ নামেই পরিচিত।

রিজার্ভ হিসাবের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। একটি হচ্ছে গ্রস, অন্যটি নিট হিসাব। আইএমএফ-এর পদ্ধতিতে হিসাব করলে বৈদেশিক সম্পদ গণনায় সকল বৈদেশিক দায় ও ঋণ এবং রিজার্ভের অর্থ অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করলে তা মূল রিজার্ভ থেকে বাদ যাবে।

বাংলাদেশ সরকার রিজার্ভের অর্থে ৭ বিলিয়ন ডলারের রফতানি উন্নয়ন তহবিল গঠন ছাড়াও একাধিক তহবিল পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ বিমান ও শ্রীলঙ্কাকে কিছু অর্থ ঋণ দিয়েছে। আবার ইডিএফ ছাড়াও আরো দুটি তহবিল গঠন করে পরিচালনা করছে বৈদেশিক মুদ্রায়। সব মিলিয়ে এর পরিমাণ ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ছিল গত জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর ইডিএফ এর পরিমাণ আড়াই বিলিয়ন ডলার কমিয়ে এনেছে। আইএমএফ-এর হিসাব পদ্ধতি মানলে ৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে বাদ দিতে হবে। এছাড়াও আরো দায় থাকলেও বাদ দিয়ে রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতিতে যেতে হবে বাংলাদেশকে।

এদিকে রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ব্যয় সংকোচনের পথ বেছে নেয় সরকার। অতি প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের কর্তাদেরও বিদেশ সফর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কম গুরুত্বপূর্ণ আমদানিনির্ভর প্রকল্পের বাস্তবায়ন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তারপরও বাড়ছে না রিজার্ভ। যদিও গত মাসে ঈদ-উল-আজহার কারণে রেমিট্যান্স বাড়ায় এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থার ঋণ যোগ হওয়ায় রিজার্ভ অগের থেকে কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ভালো উদ্যোগ যেমনÑ সরকার
প্রথমবারের মতো বৈদেশিক ঋণ-অর্থায়নে (অধিকাংশ) পরিচালিত নির্মাণাধীন ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের বিলের ২টি কিস্তি টাকায় পরিশোধ করেছে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণে আরও একটি ধাপের সূচনা হলো। এছাড়া ভারতীয় রুপিতে লেনদেন শুরু করতে যাচ্ছে প্রতিবেশী দুই দেশ। মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশ ও ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই লেনদেনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ফলে রুপিতে লেনদেনে প্রস্তুত বাংলাদেশ ও ভারত। আগামী ১১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে এই লেনদেন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে। এতে তৃতীয় কোনো মুদ্রার সংশ্লিষ্টতা ছাড়া সরাসরি রুপি ব্যবহার করে আমদানি-রফতানির মূল্য বিনিময় করতে পারবে এই দুই দেশ। এতে দুই দেশের লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের ওপর চাপ কমবে।