যে কোনো উপায়ে ‘ক্ষমতা’ চায় ওরা

যে কোনো উপায়ে ‘ক্ষমতা’ চায় ওরা

যে কোনোভাবে ক্ষমতা দরকার। দরকার প্রভাব-প্রতিপত্তির। তাই সদ্যসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনে এমপি হতে চেয়েছিলেন তারা। নেমেছিলেন ভোটের মাঠেও। শেষ পর্যন্ত এমপি হতে পারেননি। তাই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আবার প্রার্থী হচ্ছেন তারা। এটাকে পদাবনতি ধরা হলেও ক্ষমতার প্রয়োজনে সেই পথেই হাঁটছেন তারা।

তাদের একজন হচ্ছেন কক্সবাজারের সাবেক এমপি জাফর আলম। আরেকজন নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদৌস। তারা দু’জনই উপজেলা নির্বাচন করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘কিছু মানুষ আছে ক্ষমতার বাইরে থাকতে পারে না। যে কোনোভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকতে চায়। আবার কিছু মানুষ আছে নির্বাচন এলেই নেমে পড়ে ভোটের মাঠে। একবার এমপি হয়ে যারা আবার উপজেলা নির্বাচন করতে যাচ্ছে, তারা আসলে জনগণের সেবা করতে যাচ্ছে না। চাচ্ছে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকতে।’

চকরিয়ার সাবেক এমপি জাফর আলম সমকালকে বলেন, ‘আমি জনগণের ভোটে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একাধারে পৌরসভার মেয়র, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, এমপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সাধারণ জনগণ আমাকে ভালোবাসেন। তাই তাদের ভালোবাসা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চাই না। পাশাপাশি আমার সংসদীয় আসনে নতুন এমপি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চাই।’

সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদৌস বলেন, ‘আমার স্বামী মোহাম্মদ আলী এখন হাতিয়ার এমপি। আমাদের ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবে। আমিও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। তবে ছেলে নির্বাচন করলে আমি প্রত্যাহার করে নেব। পারিবারিক সিদ্ধান্তের কারণেই আমরা মা-ছেলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি, যাতে একজন বাদ পড়লে অন্য জন টিকে থাকে।’

জাফর-আয়েশাকে নিয়ে নানা মত

এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হলেও এখন আবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নেমেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ আসনে (চকরিয়া-পেকুয়া) আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। এলাকায় নিজের অবস্থান ধরে রাখতে তিনি আবারও উপজেলায় প্রার্থী হচ্ছেন। আজ বৃহস্পতিবার তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

জানুয়ারিত অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সমঝোতা হিসেবে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন জাফর আলম, তবে পরাজিত হন। তিনি ২০০৩ সালে চকরিয়া পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালে হন উপজেলা চেয়ারম্যান।

চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম লিটু বলেন, কক্সবাজার-১ আসনে দলের সংসদ সদস্য না থাকায় নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এর আগে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম, আগুন সন্ত্রাস মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন জাফর আলম। সে কারণে দলের নেতাকর্মী চান তিনি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করুক।

হাতিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে আশিক আলী। আয়েশা ফেরদৌস এর আগে দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য ছিলেন। আশিক আলী হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। ১৫ এপ্রিল মা-ছেলে মনোনয়নপত্র জমা দেন। একই পদে প্রার্থী হতে মুশফিকুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তবে তার কোনো পদ-পদবি নেই। তিনি গত সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন।

মা-ছেলের মনোনয়নপত্র জমা দানের ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে হাতিয়াতে। দুবারের সাবেক এমপি কেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমা দিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীও।

উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হাতিয়াতে আওয়ামী লীগ একটি পরিবারের কাছে জিন্মি হয়ে আছে। স্বামী-স্ত্রী ঘুরেফিরে এমপি হন এখানে। এখন আবার ছেলে আসছে উপজেলা নির্বাচন করতে। তার মানে তাদের বাইরে এখানে দলের কারও আর ভবিষ্যৎও নেই।’

samakal

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here