যুবলীগ-ছাত্রলীগের হাতে মাওলানা মামুনুল হক স্ত্রীসহ লাঞ্ছিত

প্রতিবাদে সোনারগাঁওয়ে হেফাজতের বিক্ষোভ

যুবলীগ-ছাত্রলীগের হাতে মাওলানা মামুনুল হক স্ত্রীসহ লাঞ্ছিত – ছবি : নয়া দিগন্ত

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে সোনারগাঁওয়ের একটি রিসোর্টে দ্বিতীয় স্ত্রীসহ অবরুদ্ধ করে রেখে লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মামুনুল হক ও তার স্ত্রীকে উদ্ধার করে। খবর পেয়ে হেফাজতকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাঙচুর চালায় এবং পুলিশের কাছ থেকে মামনুল হককে উদ্ধার করে। এ সময় হেফাজতকর্মীরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।

সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি, পৌরসভা ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান রবীনসহ স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা তাকে লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনার লাইভ দেখায় তারা। খবর পেয়ে সোনারগাঁও থানা পুলিশের একটি টিম রয়েল রিসোর্টে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। পুলিশ মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে আমিনা তাইয়েবা (২৫) তার দ্বিতীয় স্ত্রী।

এ দিকে খবর পেয়ে সোনারগাঁও উপজেলা প্রশাসনের ইউএনও মো: আতিকুল ইসলাম, এসিল্যান্ড গোলাম মোস্তফা মুন্না এবং সোনারগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) তবিদুর রহমানসহ কয়েকজন পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

ঘটনাটি মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এ ভাইরালের খবরে হেফাজতের কয়েক শত লোকজন মাগরিবের নামাজের পর রাত ৭টায় রয়েল রিসোর্টে হামলা চালায় এবং ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ প্রশাসনের লোকজন মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে হেফাজতকর্মীরা মামুনুল হককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারা রয়েল রিসোর্টের ভেতরে প্রবেশ করে মামুনুল হককে বের করে নিয়ে এসে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। হাজার হাজার নেতাকমী জড়ো হয় এ বিক্ষোভে। তারা ঘটনার বিচার দাবি করে।

এ সময় রিসোর্টের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সোনারগাঁওয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম, এসিল্যান্ড গোলাম মোস্তফা মুন্না, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টি আই মোশাররফ হোসেন, সোনারগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) তবিদুর রহমানসহ এবং সাংবাদিকরা। হেফাজতের লোকজনের আসার খবরে পালিয়ে যায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান জানান, হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হক তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টে এসেছিলেন। যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদেরকে লাঞ্ছিত করে। ধস্তাধস্তিতে মামুনুল হকের পরনে থাকা জামাটিও ছিঁড়ে গেছে।

সোনারগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তবিদুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যায়, তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এখানে এসেছেন। পরে কিছু লোক তার সাথে খারাপ আচরণ করে।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মুক্ত হয়ে মামুনুল হক তৌহিদি জনতার উদ্দেশে বলেন, আপনাদের ভালোবাসার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। সাংবাদিক ও পুলিশ আমার সাথে কোনো খারাপ আচরণ করেনি। কিছু বাইরের লোক খারাপ আচরণ করেছে।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টের একটি কক্ষে নারীসহ অবস্থান করছেন- এমন খবরে স্থানীয় লোকজন রিসোর্ট ঘেরাও করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। মামুনুল হক পুলিশকে জানিয়েছেন, সাথে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। পরে পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিয়ে সেখান থেকে উদ্ধার করে।

মামুনুল হকের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হয়েছে :

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। শনিবার এক বিবৃতিতে সংগঠনের আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী, নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, মাওলানা আফজালুর রহমান, মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা আলী উসমান, মুফতি সাঈদ নূর বলেন মাওলানা মামুনুল হকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকারদলীয় ক্যাডার বাহিনী তাকে হেনস্তা করেছে। এ ধরনের আচরণ দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। মামুনুল হকের সাথে অশোভন আচরণকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। নেতৃদ্বয় বলেন, হামলা মামলা করে মামুনুল হকের আওয়াজকে বন্ধ করা যাবে না। এ ধরনের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এর দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।