যুদ্ধে হামাস : জ্বলছে ইসরায়েল । মেয়রসহ বহু নিহত । থানা, সামরিক ঘাঁটি ও বসতি দখল

 

বাংলাদেশ ক্রনিকাল ডেস্ক : ইসরায়েলের অনেক ভেতরে ঢুকে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরু করেছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। অভিযানে ইসরায়েলের ৫ সেনাকে আটক করেছেন তারা। হামাসের অগ্রযাত্রায় শত শত ইসরায়েলি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন; অনেকে হার্টঅ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গাজা থেকে ইসরায়েলে একনাগাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি রকেট ছোড়া হয়েছে। এসব রকেট আঘাত হেনেছে রাজধানী তেলআবিব, জেরুজালেম, হাইফা-সহ গোটা ইসরায়েলে। রকেটের গোলায় অন্তত ২২ জন ইসরায়েলির মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে; নিহতদের মধ্যে শায়ার হানেগেভ রিজিওনাল কাউন্সিলের মেয়র-ও রয়েছেন। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানাচ্ছে ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো। জবাবে গাজায় বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। দেশটিতে যুদ্ধাবস্থা জারি করা হয়েছে।
আলজাজিরা জানিয়েছে, শনিবার আকস্মিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের একটি থানা এবং একটি সামরিক ঘাঁটি দখলে নিয়েছে হামাস। ইসরায়েলিদের দখল থেকে তিনটি বসতিও পুনর্দখল করেন তারা। হামলার ভয়াবহতায় ইসরায়েলি বিমানবন্দরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আতঙ্কিত ইসরায়েলিরা দিক-বিদিক ছুটোছুটি করেছেন; দলে দলে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। হামাসের সশস্ত্র শাখা ‘ইজ্ আদ-দীন আল-কাস্সাম ব্রিগেড’-এর নেতা মোহাম্মদ দায়েফ স্বাধীনতাকামী সব ফিলিস্তিনি সংগঠনকে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসলামিক জিহাদও যুদ্ধে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। হামাস এই অপারেশনের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’।
আলজাজিরা ও জেরুজালেম পোস্ট জানিয়ে

ছে, গাজা সীমান্তের অনেক স্থানে বেড়া ভেঙে হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে ঢুকে পড়ার পর সেখানে ইসরায়েলের কয়েকটি সাঁজোয়া যানে আগুন ধরিয়ে দেন।


ইসরায়েলের চিকিৎসা-সংক্রান্ত সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডম জানিয়েছে, হামলার পর তারা শত শত ইসরায়েলিকে চিকিৎসা দিয়েছেন। তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দক্ষিণ ইসরায়েলের সরোকা মেডিকেল সেন্টার বলেছে, গুলিবিদ্ধ হয়ে দুপুর পর্যন্ত সেখানে অন্তত ৮০ জন ভর্তি হয়েছেন। হার্টঅ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন অনেক লোক।
এক বিরল বিবৃতিতে হামাসের সশস্ত্র শাখার নেতা দায়েফ বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যথেষ্ট হয়েছে- আর নয়। আমরা এর আগেও শত্রুকে বারবার সতর্ক করেছি। দখলদাররা এখানে শত শত বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। দখলদারদের অপরাধী কৃতকর্মের কারণে চলতি বছর শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন। এ-কারণে আমরা অভিযান শুরু করেছি।’
তিনি জানান, আল-কাস্সাম ব্রিগেডের সদস্যরা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অবস্থান, বিমানবন্দর, বিভিন্ন ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক রকেট হামলা চালিয়েছে। সব মিলিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালানো রকেটের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দখলদার শত্রুরা আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে নির্মম আগ্রাসন চালিয়েছে; তারা আমাদেরকে উচ্ছেদ করতে চায়। এই অবস্থায় পবিত্র আল-আকসার সম্মান রক্ষার জন্য আমরা যুদ্ধে নেমেছি।’
এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজাকে লক্ষ্য করে তারা হামলা শুরু করেছেন। গাজা থেকে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ইসরায়েলের অনেক ভেতরে ঢুকে পড়ার কথাও স্বীকার করেছেন তারা। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত জানিয়েছেন, প্রতিটি অবস্থানে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন আমাদের সেনারা। হামাসের অভিযান শুরু দুই ঘণ্টা পর ইসরায়েলি সেনা

রা গাজার হামলা শুরু করেছে বলে জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট।


খবরে বলা হয়, হামলার আকস্মিকতায় হতভম্ভ হয়ে পড়েন ইসরায়েলিরা। তেলআবিব-সহ মধ্য ও দক্ষিণ ইসরায়েলে সকাল সোয়া আটটা থেকে একনাগাড়ে বিপদসঙ্কেত বেজে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তড়িঘড়ি করে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ বলেছেন, ‘ইসরায়েল একটি কঠিন সময়ের মুখোমুখি। আমি আক্রান্ত ইসরায়েলিদের সঙ্গে আছি।’
১৯৭৩ সালের অক্টোবরে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর ৫০তম বার্ষিকীর একদিন পর হামাসের পক্ষ থেকে এই সর্বাত্মক হামলা শুরু হলো। তিন সপ্তাহ ধরে চলা ওই যুদ্ধে প্রায় ১৫ হাজার আরব নিহত হয়েছিলেন।
এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, আল-কাস্সাম ব্রিগেডের নিক্ষেপ করা রকেট দেশটির রাজধানী তেলআবিব পর্যন্ত পৌঁছেছে। তবে বিষয়টি যদি রকেট হামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত, তাহলে বোধ হয় খুব একটা শঙ্কার কারণ ছিল না। তেল আবিববাসীর আশঙ্কা, ইসরায়েলে ঢুকে পড়া আল-কাস্সাম ব্রিগেডের যোদ্ধারা সাধারণ নাগরিকদেরও ছাড়বে না।
ইসরায়েলের হারেজ সংবাদপত্রের তেল আবিব প্রতিনিধি উদি মুসকাফ বলেছেন, ‘অধিকাংশ ইসরায়েলি কেবল হামাসের রকেটকে ভয় করছেন না, ইসরায়েলি বসতিতে হামাস যোদ্ধাদের ঢুকে পড়া তাদের শঙ্কিত করে তুলেছে। সব মিলিয়ে সবাই এই মুহূর্তে হতভম্ব

।’
যুক্তরাষ্ট্র যথারীতি ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়িয়ে হামাসের আকস্মিক হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এ-রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো আরব দেশ এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

 

 

ছবি : আনাদুলু এজেন্সি