যত ‘অছিলায়’ বন্ধ করা হয় খুলনার সঙ্গে যোগাযোগ

Newspaper – SSNETWORK

তৌহিদী হাসান

কুষ্টিয়া

গত বুধবার সকালে খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতির বৈঠকের পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধভাবে নছিমন, করিমন, মাহিন্দ্রা, ইজিবাইক ও বিআরটিসির গাড়ি চলাচল করছে। ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রশাসন যদি সড়কে ওই অবৈধ যান চলাচল ও কাউন্টার বন্ধ না করে, তাহলে পরবর্তী দুই দিন ২১ ও ২২ অক্টোবর (শুক্র ও শনিবার) মালিক সমিতির সব রুটের গাড়ি বন্ধ থাকবে। ‘ধর্মঘটের’ সঙ্গে একাত্মতা জানায় খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন। প্রশাসন ‘দাবি না মানায়’ শুক্র ও শনিবার সব রুটের গাড়ি বন্ধ ছিল।

বাসমালিকেরা কেন খুলনার বাস বন্ধ রেখেছেন, সে বিষয়ে তাঁরা আমাদের অফিশিয়ালি কিছু জানাননি। কোনো দাবিদাওয়াও উপস্থাপন করা হয়নি। আমরা এ ব্যাপারে জানি না।

নুর মোহাম্মদ মজুমদার, চেয়ারম্যান, বিআরটিএ

খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি হলেন মো. মিজানুর রহমান। তিনি খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের খুলনা মহানগর শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক। মিজানুর রহমান বলেছিলেন, ধর্মঘটের সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই।

বাংলাদেশ লঞ্চ শ্রমিক ইউনিয়ন খুলনা জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, লঞ্চশ্রমিকদের বেতন বাড়ানো, ভৈরব থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত নদের খনন, ভারতগামী জাহাজের ল্যান্ডিং পাস দেওয়ার দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে ধর্মঘট পালন করছেন যাত্রীবাহী লঞ্চের শ্রমিকেরা।

পরিবহনসংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, তাঁদের কিছু দাবিদাওয়া ছিল, যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়নের জন্য বলা হচ্ছে। সেগুলো না মেনে নেওয়ায় তাঁরা যানবাহন বন্ধ করে ‘আন্দোলন’ করছেন। তবে তাঁদের এই আন্দোলন কাকতালীয়ভাবে বিএনপির সমাবেশের আগের দিন থেকে সমাবেশের পরের দিন পর্যন্ত পড়ে গেছে।

বাস ও লঞ্চের সঙ্গে খুলনা শহরের পাশে রূপসা ঘাটেও নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই ঘাটের মাঝি সংঘের সভাপতি মো. রেজা ব্যাপারী বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে জনপ্রতি ভাড়া বাড়ানোর দাবি করা হয়েছে। ওই দাবি মেনে না নেওয়ায় তাঁরা ধর্মঘটের কর্মসূচি দিয়েছেন। তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও তাঁদের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে এর আগে সিটি করপোরেশনের মেয়র, খুলনা জেলা প্রশাসক, রূপসা উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কেউ সাড়া দেননি।

খুলনা ছাড়া বাকি ৯টি জেলার বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির নেতারা বলেছেন, খুলনা মালিক সমিতির ডাকা ধর্মঘটের সমর্থনে তাঁরা ওই রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন।
কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী বাস যশোর টার্মিনালে এসে থেমে যায়। সেখানেই নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের। যশোরের পরিবহনশ্রমিকেরা বলেন, খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ থাকায় যশোর থেকে খুলনাগামী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কী কারণে বাস চালানো বন্ধ রয়েছে, তা তাঁরা বলতে পারেন না।

আন্তজেলা বাস সিন্ডিকেট যশোরের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র কাপুড়িয়া বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা নিজেরাই বিএনপিকে বাস ভাড়া দিচ্ছি না। একই কারণে খুলনা রুটে বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে।’

আজ সকালে খুলনা শহরে প্রবেশের আগে পুলিশের তৎপরতা
আজ সকালে খুলনা শহরে প্রবেশের আগে পুলিশের তৎপরতা  ছবি: সাদ্দাম হোসেন

আজ সকাল থেকে বন্ধ রাখা হয় খুলনামুখী সব ট্রেন। এ কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও যশোরের মানুষ বিভাগীয় শহর খুলনায় যেতে পারেননি।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার মিজানুর রহমান আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস পাবনার ঈশ্বরদী জংশনে অবস্থান করছে। সেটি কখন সেখান থেকে ছাড়বে বা আদৌ ছাড়বে কি না, তা বলতে পারেননি এই কর্মকর্তা। মহানন্দা এক্সপ্রেসের বিষয়েও কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।

বিএনপির সমাবেশের আগে খুলনায় গণপরিবহন চলাচল কেন বন্ধ, সে বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ‘কিছু জানে না’। তবে এ ধরনের বিষয় তাঁদের নজরে এলে তাঁরা ব্যবস্থা নেন বলে জানান সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘বাসমালিকেরা কেন খুলনার বাস বন্ধ রেখেছেন, সে বিষয়ে তাঁরা আমাদের অফিশিয়ালি কিছু জানাননি। কোনো দাবিদাওয়াও উপস্থাপন করা হয়নি। আমরা এ ব্যাপারে জানি না। পরিবহনমালিকেরা আমাদের বলে ধর্মঘট করেন না। তবে এ ধরনের কোনো বিষয় যখন আমাদের নজরে আসে, আমরা ব্যবস্থা নিই।’

তবে দুই দিন ধরে দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় শহর খুলনা কার্যত যোগাযোগহীন হয়ে থাকলেও বিআরটিএর চেয়ারম্যান আদৌ কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না, ১০ জেলা ঘুরেও সেটি জানা যায়নি।