মোসাদের কথিত এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সাথে বৈঠকের কথা দলীয় ফোরামে স্বীকার করেছিলেন নূর

গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সংবাদ সম্মেলন
 আমার দেশ
৬ জুলাই ২০২৩

গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সংবাদ সম্মেলন

গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিনিধি

ইসরায়েলের নাগরিক কথিত ‘মোসাদ’ এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের কথা দলের অভ্যন্তরীণ ফোরামে স্বীকার করেছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নূর। তবে কী বিষয়ে ইসরায়েলি এই নাগরিকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সেটা দলকে জানাননি তিনি।

বৃহস্পতিবার (৬ই জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান। সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের প্রকৃত গণঅধিকার পরিষদ দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে দলটির পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, খালেদা জিয়া, জামায়াত নেতা শফিকুর রহমানের মুক্তি ও পাসপোর্টে অ্যাক্সেপ্ট ইসরায়েল লেখাটি পুনর্বহাল করার দাবী জানানো হয়েছে।

এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেছে নতুন এই রাজনৈতিক দলটির অভ্যন্তরীণ বিরোধের ফলে ভাঙ্গনের বিষয়টি।

ফারুক হাসান বলেন, দলটির আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন থেকে কিছু অভিযোগ উত্থাপন করছিলেন সদস্য সচিব নুরুল হক নূর। এনিয়ে গত ১৮ই জুন দলের ড. রেজা কিবরিয়ার বাসার ছাদে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি সভা ডাকা হয়। সেখানে নুরুল হক নূর দলের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে ইনসাফ কায়েম কমিটির একটি সভায় অংশ নেওয়া ও তাদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। এর জবাবে ড. রেজা কিবরিয়া ইনসাফ বাস্তবায়ন কমিটির সভায় যাওয়ার ব্যাখ্যা দেন। তবে, আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন এবং প্রমাণ থাকলে তা হাজির করতে বলেন।

এই বৈঠকে ড. রেজা কিবরিয়া পাল্টা নুরুল হক নূরের বিরুদ্ধে কয়েকটি সুস্পষ্ট অভিযোগ আনেন। যার মধ্যে- ইসরায়েলি নাগরিক ও মোসাদের কথিত এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে আলোচিত বৈঠকের সত্যতা সংক্রান্ত কিছু তথ্য, আর্থিক লেন-দেন, দলীয় তহবিল নিজে গ্রহণ এবং হিসেব না দেওয়া এবং শিপন বসুসহ বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সন্দেহভাজন লোকদের সঙ্গে গোপন বৈঠকের বিষয় উত্থাপন করেন রেজা কিবরিয়া।

ফারুক হাসান জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এক পর্যায়ে নুরুল হক নূর কাতারে ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে কোনো রকম আর্থিক সুবিধা গ্রহণের বিষয়ে অস্বীকার করেন। সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও এ বৈঠকের আলোচ্য সূচি কী ছিল, তা তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের অবগত করতে অস্বীকৃতি জানান।

এমতাবস্থায় নুরুল হক নূর দলের বয়োবৃদ্ধ কয়েকজন সদস্যকে ব্যক্তিগত আক্রমণমূলক ও অশালীন ভাষা প্রয়োগ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। তখন ড. রেজা কিবরিয়া সভাস্থল ত্যাগ করেন এবং সভা মুলতবি হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই রাতেই আহ্বায়ক একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানান যে, তিনি জরুরি প্রয়োজনে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। দেশে ফিরে পুনরায় সভা ডেকে এ বিষয়ে সমাধান করবেন। কিন্তু ১৯ জুন নুরুল হক নূর দপ্তর সমন্বয়কের মাধ্যমে নোটিশ দিয়ে আরেকটি সভা ডাকেন, যা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বৈধ নয়। উক্ত সভায় নুরুল হক নূর নিজেই সভাপতিত্ব করেন এবং ওই সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে তিনি আবারও মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে এ বিষয়ে তিনি সদস্যদের আলোচনার সুযোগ না দিয়ে আহ্বায়কের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো উত্থাপন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব তোলেন।

এসময় অনেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় নিয়ে, ধীরে-সুস্থে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দেন। রেজা কিবরিয়াকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বহিষ্কার করা হয়নি বলেও জানান তিনি।