মোদির আকাঙ্ক্ষা ও হিন্দুত্বের তাণ্ডব

মীযানুল করীম ।।  সম্প্রতি ভারতের হিন্দুত্ববাদী, সাম্প্রদায়িক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মেজবান হয়েছিলেন বিশ্বের ধনী ও প্রভাবশালী দেশগুলোর ফোরাম জি-২০-এর। এ উপলক্ষে রাজধানী নয়াদিল্লির ময়দানে যে জাঁকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, তাতে ‘দি প্রাইম মিনিস্টার অব ইন্ডিয়া’ না লিখে ‘দি প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত’ লেখা হয়েছে। এমনকি এই সম্মেলনের দাওয়াতপত্রেও ‘দি প্রাইম মিনিস্টার অব ইন্ডিয়া’ না লিখে দি প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত লেখা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের একটি অঙ্গসংগঠন বলেছে, ‘আমরা এ বিষয়ে বৈধকরণের আবেদন পেয়েছি। আমাদের এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। আবেদনের সাথে সংশ্লিষ্ট সব তথ্য দেয়া হলে আমরা সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেবো। এর আগেও তুরস্ক তাদের নাম তুর্কি থেকে তুর্কিয়ে করেছে। সম্প্রতি এটি কার্যকর করা হয়েছে।
কিন্তু ব্যাপার হলো তুরস্ক ও ভারতের মধ্যে বিরাট পার্থক্য আছে। ভারতের নাম ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের যেকোনো দেশে ‘ইন্ডিয়া’। ভারত নামটি শুধু স্বদেশেই ব্যবহার করা হয়। তুরস্কের নাম ইতিহাসের অনেক পর্যায়ে বিদেশে ‘তুর্কিয়ে’ ছিল। এটি কিভাবে ‘তুর্কি’ হয়ে গেল বোধগম্য নয়। আফ্রিকার দেশ দাথোমি এখন বুরকিনা ফাসো নামে পরিচিত। আফ্রিকার দেশ দক্ষিণ সুদান আলাদাভাবে নতুন রাষ্ট্র গঠন করেছে। এর আগে ইউরোপের ম্যাসিডোনিয়া দেশের নাম সাবেক যুগোশ্লোভাকিয়ার একটি প্রদেশের নামের সাথে উত্তর আর দক্ষিণ ভাগাভাগি করে নিয়েছে। এশিয়ার কম্বোডিয়া নাম পরিবর্তন করেছে একাধিকবার। আমাদের পাশের বার্মার নামও বদলে মিয়ানমার হয়েছে। সামরিক বাহিনী এটি করলেও জাতিসঙ্ঘ আপত্তি করেনি। কিন্তু এগুলোর সাথে ভারতের নাম বদলানোর খায়েশের বিরাট পার্থক্য।

ভারত তার উগ্র সম্প্রসারণবাদী আকাক্সক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে নরেন্দ্র মোদির পাওয়ার কিছু নেই। কারণ ভারতের অবস্থান উপমহাদেশের প্রায় সবটুকু নিয়েই। বাকি কিছুটার মধ্যে পাকিস্তান ছোট রাষ্ট্র হলেও ভারতের সাথে সম্পর্ক মোটেও ভালো না। আর উত্তর সীমান্তে ক্ষুদ্র নেপাল পৃথিবীর একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র হয়েও এখন ধর্মনিরপেক্ষ। অন্য দিকে ভারত ধর্মনিরপেক্ষতার নামে হিন্দুত্ববাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে।

নেপালের প্রতিবেশী ভুটান আজো ভারতের কাছ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পায়নি। পূর্ব দিকে বাংলাদেশ সবসময় ভারতের অনুগামী থাকবে বলে মনে করা হয়। ভারত নামক বিশাল দেশটির দক্ষিণে অবস্থিত ক্ষুদ্র মালদ্বীপ। চার দিকে সাগরে ঘেরা একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপরাষ্ট্র। ভারতের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত শ্রীলঙ্কা যেন বিশাল ভারত মহাসাগরে অবস্থিত একটি পানির ফোঁটা। তাই ভারতের মনোযোগ সম্পূর্ণ ভারত মহাসাগরের দিকে। এই মহাসাগরের পশ্চিমে আফ্রিকা, পূর্বে অস্ট্রেলিয়া। এ জন্য ভারত মহাসাগর বলতে ভারত শ্লাঘা অনুভব করে। হিন্দু ধর্মকাহিনী থেকে জানা যায়, এই ধর্মসংশ্লিষ্ট একজন রাজপুরুষ ভারতের নাম থেকে ভারত ‘উপমহাদেশ’ ও ভারত ‘মহাসাগর’ আসছে। ভারত মহাসাগর পৃথিবীর পাঁচটি মহাসাগরের মধ্যে একটি। এই মহাসাগরের পশ্চিম তীরে আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব তীর অবস্থিত। এই মহাসাগরের দক্ষিণে অবস্থিত দক্ষিণ মেরুর বরফাচ্ছাদিত মহাদেশ অ্যান্টার্টিকা।

ভারতের জওয়াহেরলাল নেহরু (১৮৮৯-১৯৬৪), সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধীর বাবা। দীর্ঘ ১৭ বছর ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, রাজীব গান্ধীর নানা এবং বর্তমান কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। ভারতের অবৈধ প্রভাব বিস্তারের জন্য ‘নেহরু ডকট্রিন নামে’ তত্ত্ব বের করেছিলেন জওয়াহেরলাল নেহরু। নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রদায়িক দল বিজেপি তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের নেতা নেহরুর ডকট্রিনের এক বড় ভক্ত। নেহরু ডকট্রিনের সোজা অর্থ হলো, ভারতের প্রতিবেশী দেশ থাকবে কিন্তু দেশগুলোর সংস্কৃতি হবে অভিন্ন ও ভারতের অনুসারী। দেশগুলোর প্রকৃত সার্বভৌমত্ব থাকবে না। নেহরু ডকট্রিনে মনের কথা খুঁজে পেয়ে নরেন্দ্র মোদি সত্যিই উল্লসিত। নরেন্দ্র মোদি বিজেপির হিন্দুত্বে বিশ্বাস করেন। তাই তিনি এলাহাবাদের নাম রেখেছেন প্রয়াগ রাজ। বিহারের বিখ্যাত মোগল সরাই রেলস্টেশনের নাম রেখেছেন ‘দীন দয়াল উপাদ্দা’, বোম্বাই তার কাছে ‘মুম্বাই দেবী।’ বেঙ্গালোর এখন বেঙ্গালুরু। মোদি তাজমহলের নাম বদলাবার চক্রান্ত করছেন।

সম্প্রতি ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে। এর নাম ‘The First Paliamemtary Bluding of India’। আর পুরনো পার্লামেন্ট ভবনের নাম শ্রী স্তম্ভ The Pillar of Old Parliamemtary Bluding of India কোথাও ‘ভারত’ কথাটি নেই। ভারতের নাম ইংরেজিতে India- ই বলা হয়। তাহলে কি সব মোদির অপকৌশল? হিন্দুত্ব আর সাম্প্রদায়িকতা তার ভেক মাত্র নাকি জনমতের কাছে নতি স্বীকার করছেন?

নয়াদিগন্ত