মেট্রোরেল লাইন-১ নির্মাণে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে সড়কের অনেক স্থানে ভাঙতে হবে: ডিএমটিসিএল

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এমআরটি লাইন -১ এর প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কাসেম ভূঁঞার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ডিএমটিসিএল।

মেট্রোরেল লাইন-১ করতে গিয়ে ৩০০ ফুট পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের সড়কের অনেক স্থানে ভাঙতে হবে বলে জানিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এমআরটি লাইন -১ এর প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কাসেম ভূঁঞার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ডিএমটিসিএল।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের কাজে দুটো অংশ। একটি আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল বা পাতাল মেট্রোরেল, অন্যটি এলিভেটেড মেট্রোরেল বা উড়ালপথে মেট্রোরেল। পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের পশ্চিম প্রান্ত অর্থাৎ কুড়িল ফ্লাইওভারের কাছাকাছি থেকে উড়ালপথে মেট্রোরেলের শুরু এবং শেষ হবে পূর্বপ্রান্তে কাঞ্চন সেতুর কাছে গিয়ে। ভায়াডাক্ট কিছুদূর পর পর পিয়ার-কলামের উপর স্থাপিত হবে। ভায়াডাক্টের স্প্যান অর্থাৎ, একটা পিয়ার থেকে আরেকটি পিয়ারের দূরত্ব সড়কের অ্যালাইনমেন্ট বরাবর ৩০ মিটার থেকে ৪৫ মিটার অন্তর হবে। এই পিয়ারগুলো পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যবর্তী জায়গায় প্রশস্ত মিডিয়ান বা সড়ক বিভাজকে নির্মাণ করা হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, উড়াল অংশের নির্মাণকালীন সময়ে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের কোনো অংশ কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না করে উড়াল রুটের পিলারসমূহ সম্পূর্ণভাবে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের রাস্তার মেডিয়ানের উপর নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েতে কোনোরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মেট্রোরেলের এলিভেটেড স্টেশনগুলো সড়কে আড়াআড়ি বরাবর তিনটি করে কলামের উপর স্থাপিত হবে। এখানে দুই পাশের দুটো কলাম এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে গ্রিনবেল্ট বা সবুজ ভূমির উপর থাকবে, আর মাঝখানের কলামটি সড়ক বিভাজকের উপর নির্মাণ করা হবে। সুতরাং, স্টেশনগুলো এক্সপ্রেসওয়ের মূল ক্যারেজওয়ের পেভমেন্টের কোনো জায়গা দখল করবে না এবং বিদ্যমান সড়ককে ক্ষতিগ্রস্তও করবে না। বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পূর্বাচল রুটের অংশ পাতালের পরিবর্তে উড়ালভাবে নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যা সরকারের যথাযথ পর্যায়ে অনুমোদিত হয়েছে।

২০১৫ সালে প্রণীত আরএসটিপি (রিভাইজড স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান)-তে এমআরটি লাইন-১ এর রুট এলাইনমেন্ট প্রস্তাব করা হয় এবং সেই মোতাবেক ২০১৭-১৮ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়। ঢাকায় অবকাঠামো নির্মাণ উপযোগিতার বিষয় বিবেচনা করে এমআরটি লাইন-১ এর উড়াল এবং পাতাল পথ চূড়ান্ত করা হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজউক ভবনে রাজউক চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আন্তঃপ্রকল্প সভায় এমআরটি লাইন-১ এর কুড়িল থেকে কাঞ্চন রুটের ডিটেইল্ড ডিজাইন ডিএমটিসিএল -এর প্রতিনিধি উপস্থাপন করেন। এই রাস্তায় ৫টি ইন্টারসেকশন আছে, এগুলোর নিচে পানির রিজার্ভার রয়েছে।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, রাজউকের কন্সালটেন্ট ড্যাটেক্স যখন ৫টি ইন্টারসেকশন ডিজাইন করছিল, তখন মেট্রোরেল প্রকল্প থেকে বলা হয়েছিল যে মেট্রোরেলের পাইল নির্মাণকাজ আগে হয়ে যাক, এরপর পানির রিজার্ভার নির্মাণ করা হোক।

অর্থাৎ মেট্রোরেল প্রকল্পের পাইলের ড্রাইভিংয়ের কাজ আগে এবং পানির রিজার্ভার নির্মাণ পরে করা হলে ভালো হবে। কিন্তু এই পর্যায়ে রাজউকের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ড্যাটেক্স এর মত ছিল, বরং আগে রাজউক পানির রিজার্ভার নির্মাণ করুক, এরপরে মেট্রোরেল কাজ করার সময় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এই প্রসঙ্গে তখন কীভাবে কাজ করা যেতে পারে এই প্রশ্ন আসায় মেট্রোরেল কন্সালটেন্ট জানান, সে ক্ষেত্রে শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ রিজার্ভারে যখন পানি থাকবে না সেই সময় রিজার্ভারের ছাদ (যা মূলত গাড়ি চলার সড়ক পেভমেন্ট) কেটে পাইলের কাজ করা হবে। এরপরে ছাদের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেট্রোরেল থেকে মেরামত করে দেওয়া হবে।

বিষয়টি রাজউক কন্সালটেন্ট এবং মেট্রোরেল কন্সালটেন্টের পারস্পরিক সমন্বয় ও সমঝোতার মাধ্যমেই চূড়ান্ত হয়েছে এবং সেই মোতাবেক মেট্রোরেলের ডিজাইন করা হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, বিদ্যমান সড়ক কার্যত কোনোরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা। তবে পিয়ার ও ভায়াডাক্ট নির্মাণকালীন এক্সপ্রেসওয়েতে চলমান যানবাহন নিরাপদে চলাচলের জন্য সড়ক বিভাজকের দুই পাশে উভয় মুখে প্রশস্ত মিডিয়ানের উভয় পাশে ৩ মিটার করে অর্থাৎ একটি করে লেন বন্ধ রাখা হবে। উভয় পাশে তিন লেন করে উম্মুক্ত থাকবে, ফলে জনগণের দুর্ভোগের কোনো সম্ভবনা নেই। এক্ষেত্রেও সড়ক পেভমেন্টের কোন লক্ষণীয় ক্ষতি হবেনা।

তিনি আরও বলেন, পেভমেন্টের উপরিভাগে সীমিত পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে নির্মাণ শেষে পেভমেন্ট সারফেসকে মেরামত ও সংস্কার করে ঝকঝকে তকতকে করে দেয়া হবে – যেমনটা করা হয়েছে এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পে ।

তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের এলিভেটেড স্টেশনগুলো সড়কে আড়াআড়ি বরাবর তিনটি করে কলামের উপর স্থাপিত হবে। এখানে দুই পাশের দুটো কলাম এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে গ্রিনবেল্ট বা সবুজ ভূমির উপর থাকবে, আর মাঝখানের কলামটি সড়ক বিভাজকের উপর নির্মাণ করা হবে। সুতরাং স্টেশনগুলো এক্সপ্রেসওয়ের মূল ক্যারেজওয়ের পেভমেন্টের কোনো জায়গা দখল করবে না। এছাড়াও বিদ্যমান সড়ককে ক্ষতিগ্রস্তও করবে না।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েতে পাঁচটি আন্ডারপাস রয়েছে। কিন্তু এই আন্ডারপাসগুলো ও মেট্রোলাইনের মধ্যে কোনো সাংঘর্ষিক কর্মকাণ্ড নেই। কারণ ভায়াডাক্টের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যে, আন্ডারপাসের উপর কোনো পিয়ার থাকবে না এবং এমআরটি লাইন-১ আন্ডারপাসগুলো কোনো ক্ষতি করবে না।

অন্যদিকে, এই এক্সপ্রেসওয়েতে পাঁচটি রাউন্ডএবাউট রয়েছে। এই রাউন্ডএবাউটগুলোর বৃত্তের ঠিক কেন্দ্র বরবার একটি করে ভায়াডাক্টের পিয়ার বসানো হবে। এইখানে কংক্রিট সার্ফেস কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে পিয়ার নির্মাণ শেষে ভেঙে যাওয়া কংক্রিট মেরামত করে দেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here