মেজর জেনারেল (অব.) কেএম শফিউল্লাহ বললেন, ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পর শেখ সেলিম মার্কিন দুতাবাসে সময় কাটান, খন্দকার মোশতাক সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে গণভবনে ছিলেন

দেবদুলাল মুন্না : গতকাল দুপুরে বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিউজ টুয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকাারে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা- নিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কেএম শফিউল্লাহ বললেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এ হত্যাকা-ের দায় এড়িয়ে যেতে পারবেন না।’পরে এ সংক্রান্ত নিউজটি ওই টিভি চ্যানেলের নিউজ সাইট থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। গতকাল সন্ধ্যায় সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কেএম শফিউল্লাহ’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘শেখ সেলিমের সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের ভালো যোগাযোগ ছিলো। খোন্দকার মোশতাক সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি গণভবনে গিয়েছিলেন। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ওইদিনই তিনি মার্কিন দুতাবাসে গিয়েছিলেন।

’ আপনি কি তবে বলতে চান ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের সঙ্গে শেখ সেলিম জড়িত ছিলেন-এমন প্রশ্নের জবাবে শফিউল্লাহ বলেন, ‘না , আমি সেটি বলছি না। অতীতেও এ নিয়ে উনার সাথে বাহাস হয়েছে। তবে তিনি জড়িত বলিনি। তার ভুমিকা সেসময় কেমন ছিলো সেটি অতীতেও জানিয়েছি। আজও জানালাম।’ এর আগেও কেএম শফিউল্লাহ ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম এ হত্যাকা-ের বিষয়ে পরস্পরকে দোষারুপ করেছেন। ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের এমপি ছিলেন শফিউল্লাহ । তখন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৪০তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিউল্লাহ বলেছিলেন, ‘আপনাদের সবার মনে একটা প্রশ্ন আছে আপনিতো তখন সেনাপ্রধান ছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারেননি কেন? এই প্রশ্নটা অনেকের কাছেই আছে। আপনি জানেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট গুলি খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এত বড় দেশ যার সেনা সদস্য অনেক।

সেই দেশের রাষ্ট্রপতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল রাস্তার মাঝখানে। আমি শুধু বলবো সেনাপ্রধান একজন ব্যক্তি যে কি-না সৈন্য পরিচালনা করে যুদ্ধকালে এবং পিস টাইম কিন্তু সে এককভাবে কোনো সৈন্য পরিচালনা করে না। সেই সৈন্য পরিচালনা করে তার আন্ডার কমান্ড অফিসারদের দ্বারা কর্মকর্তাদের দ্বারা। সেই দিন সেই কর্মকর্তারা তার সেনাপ্রধানের কথা শোনে নাই।’ এর সপ্তাহখানেক আগে শেখ ফজলুল করিম সেলিম ঢাকায়এ ক অনুষ্ঠানে সাবেক সেনাপ্রধান কেএম শফিউল্লাহর কড়া সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ওই দিন কিসের জন্য শফিউল্লাহ নীরব ছিলেন? জাসদ এ হত্যাকা-ের পথ পরিষ্কার করে দিয়েছিল। শফিউল্লাহ বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন, আপনি বাসা থেকে একটু বেরিয়ে যাইতে পারেন না? বঙ্গবন্ধুকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন! বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আর্মির ভয়ে বাসা থেকে পালাননি, আর নিজের বানানো আর্মি দেখে পলায়ন করবেন!’ শেখ সেলিম সাবেক তৎকালীন সেনাপ্রধানকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ক্যান তুমি সেদিন আসতে পারলা না?’ শেখ মণি মারা যাওয়ার দেড়-দুই ঘণ্টা পর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। শফিউল্লাহ, মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে। সে আর্মি চিফ ছিল। মণি ভাই মারা যাওয়ার দেড়-দুই ঘণ্টা পর বঙ্গবন্ধু মারা গেলেন। কেউ বলে ৬টা ৪৭ মিনিট। বঙ্গবন্ধু সবার কাছে ফোন দিয়েছেন।

কর্নেল শাফায়াত ছুটে আসছিলেন। আর উনি (কেএম শফিউল্লাহ) বসে বুড়ো আঙুল চুষেছেন।’ নারায়ণগঞ্জের ওই অনুষ্ঠান চলাকালে শফিউল্লাহকে প্রশ্ন করা হয় ‘১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু আপনার কাছে সাহায্য চেয়েছিল কিন্তু আপনি করেন নাই।’ এ প্রশ্নের জবাবে শফিউল্লাহ বলেন, ‘ওইদিন আমি নিজে বঙ্গবন্ধুকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট টেলিফোনে কথা বলার চেষ্টা করি। প্রতিবারই অ্যাংগেজ পাই বঙ্গবন্ধুর টেলিফোনটি। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর বঙ্গবন্ধু ফোন ধরে বলে তোমার সেনাবাহিনী আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। শেখ জামালকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমি শুধু বলেছিলাম ‘ডুয়িং সামথিং’ এ কথা বলার পরে টেলিফোনের রিসিভার রাখার শব্দ বুঝতে পারি তারই ২০ সেকেন্ড পরে গুলি শব্দ শুনেতে পাই। হয়তো সেটাই শেষ ছিল।’