মুক্তিযোদ্ধা কোটা চিরস্থায়ী করলে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করা হয়

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের

বীর মুক্তিযোদ্ধা সবাই অনগ্রসর নন, তাই সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা সংবিধানসম্মত নয় বলে মনে করেন বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের। এই কোটার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বড় আকারে মুক্তিযোদ্ধা কোটা চিরস্থায়ী করলে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করা হয়।

আজ বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের (বাজেট অধিবেশন) সমাপনী ভাষণে জি এম কাদের এসব কথা বলেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, আগে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। ৪৪ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে হতো। ২০১৮ সালে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সব কোটা বাতিল করা হয়। আদালতের একটি রায়ের ফলে শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলনে নেমেছে।

কোটা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরে জি এম কাদের বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত হলো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মের চাকরির জন্য বিশেষ বড় অঙ্কের কোটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা স্বাধীনতার চেতনার নামে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য, বৈষম্যমুক্ত ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গঠন–এই মূল উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করে।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দাবি ছিল ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা—এমনটা উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা দাম দেবো; কিন্তু তাঁদের বংশপরম্পরায় নাতি–নাতনিসহ তাঁদের সবাইকে দিতে হবে, বিষয়টি সম্পর্কে ছাত্রদের মধ্যে দ্বিমত আছে। তাঁরা এর সাথে একমত হতে পারছেন না।’

জি এম কাদের বলেন, ‘সংবিধানে সুযোগ–সুবিধার ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে বলা আছে, নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা থাকবে। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী ও জন্মস্থানের কারণে কাউকে প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োগে অযোগ্য করা যাবে না। সংবিধানে সরকারকে একটি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সরকার নাগরিকদের অনগ্রর অংশের প্রজাতন্ত্রের কাজে নিযুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ বিধান করতে পারবে। অনগ্রসর অংশ হলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু গোষ্ঠী ইত্যাদি; কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজন্ম যাঁরা থাকবেন, তাঁরা সবাই অনগ্রসর, এটা আমি মানতে রাজি না।’

সংবিধানের বিধান উল্লেখ করে জি এম কাদের এ–ও বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা সবাই অনগ্রসর বা এ রকম পিছিয়ে পড়া অবস্থানে নেই। কাজেই বিষয়টি (মুক্তিযোদ্ধা কোটা) ওইভাবে দেখাটা সংবিধানসম্মত নয়।’

একই সঙ্গে জি এম কাদের বলেন, কোটা রাখা যেতে পারে আর বিভিন্ন কোটায় প্রার্থী না থাকলে সেখানে মুক্তিযোদ্ধা কোটা দেওয়া যেতে পারে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের। তিনি বলেন, প্রথমে যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম দেওয়া হয়েছিল, সেটাতে  খুব একটা  সাড়া পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে আবার নতুন স্কিম করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা বেশির ভাগ সরকারের সমর্থক। তাঁরা সরকারের কাছের লোক; কিন্তু তাঁরা এই স্কিম মানতে চাইছেন না।

আস্থাহীনতার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বিরোধীদলীয় নেতা। জি এম কাদের বলেন, ‘বললে খারাপ শোনায়, সেটা হলো মানুষের আস্থাহীনতা হচ্ছে যে সরকার যেটা কমিট (অঙ্গীকার) করছে, আলটিমেটলি সেটা দিতে পারবে কি না, দেবে কি না, মানুষ পাবে কি না। এটা বড় ধরনের একটা আস্থাহীনতা। এটা আমাদের জন্য, সরকারের কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়।’

prothom alo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here