“মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিতে ১৯৭১।পর্ব ০৩। মেজর জেনারেল(অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম ও শমশের মবিন চৌধুরী।”

 

 

মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (জন্ম: ৪ অক্টোবর, ১৯৪৯) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।তিনি বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭১ সালে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম কর্মরত ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ২৫ মার্চের পর কে এম সফিউল্লাহর নির্দেশে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। ১৯৯৬ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন।

ইব্রাহিম একজন লেখক এবং বক্তা। তিনি ঢাকার সংবাদপত্র এবং প্রোব নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাটির জন্য অনিয়মিত কলাম লেখেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্তর্গত আখাউড়া ছিলো ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথে। এর পাশেই ছিলো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা। সেখানে ১ ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পরে ৪ ডিসেম্বর ভোরে আখাউড়া মুক্ত হয়। ‘সি’ কোম্পানির দলনেতা ইবরাহিমও সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেই যুদ্ধে অংশ নেন। সেদিন যুদ্ধের রাতে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজন দলনেতা তৈরী হন মুখোমুখি যুদ্ধের জন্য। লক্ষ্য আক্রমণ করবেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে। ভয়াবহ এ সম্মুখ যুদ্ধে বেশ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিচলিত হননি। নির্ধারিত সময়ে আগেই ভারত থেকে শুরু হয় দূরপাল্লার গোলাবর্ষণ। একনাগাড়ে অনেকক্ষণ ধরে চলে তা। গোলাবর্ষণ শেষ হওয়া মাত্র ইবরাহিম সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আর শুরু হয় মেশিনগান, রাইফেলসহ অন্যান্য অস্ত্রের অবিরাম গোলাগুলি। দুই পক্ষে সমানতালে যুদ্ধ চলে। যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে যায় তবে সে সময়েও মুহাম্মদ ইবরাহিম দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন এবং সহযোদ্ধাদের মধ্যে সাহস যোগান। প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যেও নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে যান তিনি এবং সহযোদ্ধারা যাতে ছত্রভঙ্গ না হয়ে যাওয়া যায় সেদিকেও নজর রাখেন। তার প্রচেষ্টায় সহযোদ্ধারা অনুপ্রাণিত হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে পাল্টা আক্রমণ চালান। তাদের সাহসিকতায় থেমে যায় বেপরোয়া পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা।

★★★

শমসের মবিন চৌধুরী (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।  মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ শমসের মবিন চৌধুরীসহ সেনাসদস্যদের ব্যারিকেড পরিষ্কার করার দায়িত্ব দেয়া হয়। রাত ১২টায় চট্টগ্রাম ষোলশহর ক্যান্টনমেন্টের গেটে গিয়ে গুলির আওয়াজ শুনতে পান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি গাড়িতে উঠে ষোলশহরে এইট বেঙ্গলে যান। সেখানে গিয়ে শুনতে পান সকল পশ্চিম পাকিস্তানি অফিসারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৬ মার্চ ভোরে কালুরঘাটের একটু দূরে পৌঁছান তিনি এবং শপথ গ্রহণ করেন। ১১ এপ্রিল সকাল আটটার সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী কালুরঘাটে ভীষণ আর্টিলারি ফায়ার শুরু করে। এ সময়ে শমসের মবিন চৌধুরী এবং হারুন (বীর উত্তম) অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে নিজেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক ঘেরাও অবস্থায় পান। সঙ্গে থাকা অন্য সদস্যরা সবাই পুলের অপর পারে চলে যেতে সক্ষম হয়। শমসের মবিন চৌধুরী ট্রেঞ্চ থেকে বের হয়ে চারদিকে চাইনিজ স্টেনগান দিয়ে গুলি ছুড়তে থাকেন। হঠাৎ একটা গুলি এসে লাগে তার কোমরে। তারপর শমসের মবিন চৌধুরীকে ঢাকায় পাঠানো হয়। নভেম্বর মাসে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট আনা হয় এবং বলা হয় কোর্ট মার্শাল করা হবে। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর তারিখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। তিনি মুক্ত হয়ে যান। শমসের মবিন চৌধুরী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেজর পদে কর্মরত থাকাকালে তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। পর্যায়ক্রমে পররাষ্ট্রসচিব পদে উন্নীত হন এবং পরে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অবসর নেন। তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। Fb page: https://www.facebook.com/historicalof…