- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৬ মার্চ ২০২৩, ১২:৩৯, আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৩, ১২:৪০
সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও শেখ মুজিবকে সরকার গঠনে আহ্বান করার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। প্রতিবাদে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। পরিণতিতে ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা চালায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং শুরু হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ।
তেলিয়াপাড়ায় বৈঠক এবং চারজন সিনিয়র কমান্ডারের ওপর অপারেশনের দায়িত্ব
গণহত্যা শুরুর পর সামরিক বাহিনী, ইপিআর, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর বাঙালি সদস্য এবং তরুণ দেশপ্রেমিকেরা স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
এর মধ্যে ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল সামরিক বাহিনীর বাঙালি কর্মকর্তারা সিলেটের তেলিয়াপাড়া চা বাগানে এক বৈঠকে মিলিত হন। সেখানেই প্রণীত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রণকৌশল, যা তেলিয়াপাড়া স্ট্র্যাটেজি নামে পরিচিত।
ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ মোট ২৭ জন সেনা কর্মকর্তা ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।
‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র’ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাঁচটি বাঙালি রেজিমেন্ট ছিল।
এর মধ্যে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গণহত্যার আগে থেকেই বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ করে এবং প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করে।
বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাইরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে প্রশিক্ষণরত সেনা সদস্যসহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত বাঙালি সেনাদের বড় অংশ পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন।
অসংগঠিত ও বিচ্ছিন্নভাবে শুরু হওয়া এই প্রতিরোধযুদ্ধকে সংগঠিতভাবে পরিচালনা করার জন্য তেলিয়াপাড়া বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল।
সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, এম এ জি ওসমানী যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন এবং বাংলাদেশকে চারটি সামরিক অঞ্চলে ভাগ করে সশস্ত্র যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া হবে। এর দায়িত্ব দেয়া হয় চারজন সিনিয়র কমান্ডারকে।
ওই বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাহিনী সম্পর্কিত সাংগঠনিক ধারণা এবং কমান্ড কাঠামোর রূপরেখা প্রণীত হয়।
এপ্রিলের ১০ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার তথা মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়।
তারপর আরো চারটি সামরিক অঞ্চল ঘোষণা করে সেগুলোর সেক্টর কমান্ডারদের নাম ঘোষণা করেন তাজউদ্দিন আহমদ।
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তার বেতার ভাষণে জানান, বিভিন্ন অঞ্চলে আটজন সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছে এতে যুদ্ধের গতি আরো বেড়ে যায়।’
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের শুরুটা যখন হয় তখন তো কোনো সেক্টর, অস্ত্রপাতি ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের সরকার অর্থাৎ মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙ্গালির প্রতিরোধ যুদ্ধ সুসংগঠিত করার চেষ্টা করল।’
এর মধ্যে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ প্রথম বেতার ভাষণ দিলেন মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি দেশবাসিকে জানানোর জন্য, তাতে চারজন আঞ্চলিক অধিনায়কদের কথা বললেন, যাদের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছে।
কলকাতায় সম্মেলনে ১১টি সেক্টর গঠনের সিদ্ধান্ত
১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত কলকাতাস্থ ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সদর দফতরে সেক্টর কমান্ডার এবং উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ বাহিনীর নেতৃত্ব, সংগঠন, প্রশিক্ষণ, অভিযান, প্রশাসন ইত্যাদি বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে মোট চারটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল সেখানে।
সেসব সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রধানতম ছিল সুষ্ঠুভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা এবং প্রতি সেক্টরের জন্য একজন করে সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়।
পাশাপাশি প্রতিটি সেক্টরকে অঞ্চল ভেদে ভাগ করা হয় কয়েকটি সাব-সেক্টরে।
‘সেক্টরগুলো প্রধানত যুদ্ধের কৌশল ভেবে করা হয়েছিল’
আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে লড়াই করার জন্য পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম এদেশের মানুষের কাছে ছিল না।
এমন অবস্থায় স্বাধীনতা যুদ্ধ চালিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন রণকৌশল গ্রহণ করতে হয়েছিল।
আর পুরো বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে ফেলা ছিল এসব রণকৌশলেরই একটি অংশ।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেছেন, সেক্টরগুলো প্রধানত যুদ্ধের কৌশল ভেবে করা হয়েছিল।
‘মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বেসামরিক সরকারের অধীনে ও নেতৃত্বে। তারাই ঠিক করেছিলেন অবশ্যই সমরবিদদের নিয়ে কিভাবে সারাদেশে যুদ্ধটা করবেন। সেই কৌশল নিয়ে তারা সারা দেশকে ১১টা সেক্টরে ভাগ করেছিলেন,’ বলেন তিনি।
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব বলেছেন, সেক্টর ভাগ করার পর যুদ্ধের গতি বেড়ে গিয়েছিল।
তিনি বলেছেন, মার্চের শেষদিক থেকে জুলাই পর্যন্ত যুদ্ধ পরিকল্পনা অনুযায়ী চলেছে। এর মধ্যে যুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন অংশে মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং চলছিল এবং ভারতীয় অংশ থেকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা হচ্ছিল।
কিন্তু যখন সেক্টরগুলা গঠন করা হয়, তখন থেকে যুদ্ধের গতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।
হারুন হাবীব মনে করেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ছোট ছোট ভাগ করার কারণে প্রশাসনিক এবং সামরিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।
সেক্টর কমান্ডার নির্ধারণ করা হয়েছিল কিসের ভিত্তিতে?
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলছেন, সেক্টর কমান্ডার নির্বাচন করা হয়েছিল তাদেরই যারা সেসময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ছিলেন।
তিনি বলছিলেন, ‘পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন তারা এবং তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে যারা সিনিয়র ও অভিজ্ঞ তাদেরই মূলত ১১টি সেক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।’
প্রথমদিকে সেক্টরগুলো সীমান্ত এলাকা বরাবর কাজ করেছে।
যখন মূল যুদ্ধ শুরু হলো যৌথ বাহিনীর সাথে, তখন তারা একটা বড় ভূমিকা রেখেছেন।
তবে সেক্টর কমান্ডার বা অধিনায়ক নির্বাচন সে সময় একটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার সবাই ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার।
হারুন হাবীব বলেছেন, সেই সময় অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় বেঙ্গল রেজিমেন্টের সবাই হয়ত যোগ দিয়েছিলেন।
‘কিন্তু পাকিস্তানে যারা ছিল তারা যোগ দিতে পারেনি। অনেকে আবার যোগ দেয়নি। কাজেই অধিনায়কের একটা বড় সমস্যা দেখা দিয়েছিল সেই সময়,’ বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেছেন, ব্রিগেডিয়ার, কর্নেল তখন ছিলই না যারা মুক্তিযুদ্ধে জয়েন করেছিল। মূলত মেজর র্যাঙ্কের যারা ছিলেন তারাই মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সেক্টর নেতৃত্ব দিয়েছেন।
‘এভেইলেবল যেসব মেজর এবং ক্যাপ্টেন সাহেবরা পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে ডিসাইড করে মুক্তিযুদ্ধে জয়েন করেছিলেন, তাদেরই কিন্তু দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। পরের দিকে অবশ্য অনেকেই পালিয়ে এসেছেন যারা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন,’ বলছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের হারুন হাবীব।
‘জেড ফোর্স’, ‘এস ফোর্স’ ও ‘কে ফোর্স’ গঠন
মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত ও অনিয়মিত দু’টি ভাগে বিভক্ত ছিল। অনিয়মিত বাহিনী গণবাহিনী নামে পরিচিত ছিল।
নিয়মিত বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের সৈন্যরা।
এর বাইরে ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণের পর বিভিন্ন সেক্টরে গণবাহিনীতে নিয়োগ করা হতো।
গণবাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শত্রুর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য পাঠানো হয়।
নিয়মিত বাহিনীর সদস্যরা সশস্ত্রবাহিনীর প্রথাগত যুদ্ধে নিয়োজিত ছিলেন।
‘জেড ফোর্স’ নামে পরিচিত নিয়মিত বাহিনীর প্রথম ব্রিগেডটি জুলাই মাসে গঠিত হয়। ব্রিগেডটি প্রথম, তৃতীয় এবং অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে গঠিত হয়।
‘এস ফোর্স’ নামে পরিচিত দ্বিতীয় নিয়মিত ব্রিগেডটি দ্বিতীয় ও একাদশ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের নিয়ে অক্টোবরে গঠিত হয়। এ ব্রিগেডের অধিনায়ক ছিলেন মেজর কেএম সফিউল্লাহ।
মেজর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ‘কে ফোর্স’ গঠিত হয় চতুর্থ, নবম এবং দশম ইস্ট বেঙ্গলের সদস্যদের নিয়ে।
পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি আরো অনেক বাহিনী সংগঠিত হয়।
এ সকল বাহিনীর মধ্যে টাঙ্গাইলের কাদের বাহিনী, সিরাজগঞ্জের লতিফ মির্জা বাহিনী, ঝিনাইদহের আকবর হোসেন বাহিনী, ফরিদপুরের হেমায়েত বাহিনী, বরিশালের কুদ্দুস মোল্লা বাহিনী ও গফুর বাহিনী এবং ময়মনসিংহের আফসার বাহিনী ও আফতাব বাহিনী উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন সাধারণ মানুষ ও গেরিলা যোদ্ধারা। যাদের অনেকেই হয়তো সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলছেন, ‘সেক্টর কমান্ডাররা মূলত মুজিবনগর সরকারের অধীনে থেকে কাজ করেছেন। সেখানে যারা ছিলেন যোদ্ধা তাদের নিয়ে তারা কাজ করেছেন, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছেন। আলাদাভাবে কোনো সেক্টরের গুরুত্ব চিহ্নিত করা যাবে না।’
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ছিল সমন্বিত একটা ব্যাপার। সবাই মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন এর মধ্যে দুই ধরনের মানুষ ছিলেন। একটা হচ্ছে- যারা পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা অন্য কোনো নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন, যেমন পুলিশ হতে পারে সীমান্ত রক্ষী হতে পারে।
আরেকটা হচ্ছে- নিছক ছাত্র কৃষক জনতার একটা অংশ। তারা গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু তাদের মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে বলেছেন। এবং তারা দেশ স্বাধীন করতে গিয়েছিলেন। পুরস্কারের আশায় তারা যান নাই।
এই স্বতস্ফুর্ততা, দেশপ্রেম দেশকে মুক্ত করার ব্যাপার, এটাই তাদের ঐক্যবদ্ধ করেছিল বলে বলছিলেন অধ্যাপক মামুন।
যুদ্ধে তাদের সুযোগ সুবিধা কম ছিল, অস্ত্রের তেমন যোগান ছিল না।
অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেছেন, ‘সেক্টর ভাগ করা হয়েছে যুদ্ধের জন্য। সেক্টর কমান্ডাররা যেহেতু পেশাদার সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তারা সেজন্য নেতৃত্ব দিয়েছেন।’
এক নজরে ১১টি সেক্টর এবং সেক্টর কমান্ডার
সেক্টর নং ১
ফেনী নদী থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি এবং ফেনী পর্যন্ত ছিল ‘সেক্টর নং ১’। ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান এবং জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর রফিকুল ইসলাম। আর এই সেক্টরকে পাঁচটি সাব সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছিল।
সেক্টর নং ২
ঢাকা, কুমিল্লা, আখাউড়া–ভৈরব, নোয়াখালী ও ফরিদপুরের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ‘সেক্টর নং ২’। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর এটিএম হায়দার। এই সেক্টরে ছয়টি সাব-সেক্টর ছিল।
সেক্টর নং ৩
হবিগঞ্জ, আখাউড়া–ভৈরব রেললাইন থেকে পূর্ব দিকে কুমিল্লা জেলার অংশবিশেষ এবং কিশোরগঞ্জ এবং ঢাকার কিছু অংশ ছিল ‘সেক্টর নং ৩’ এর আওতায়। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর কেএম শফিউল্লাহ। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন মেজর এএনএম নুরুজ্জামান। আর এই সেক্টরে ছিল সাতটি সাব-সেক্টর।
সেক্টর নং ৪
সিলেট জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ‘সেক্টর নং ৪’। এই সেক্টরেও ছিল ছয়টি সাব-সেক্টর। মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর সিআর দত্ত (পরে মেজর জেনারেলা) এবং পরে ক্যাপ্টেন এ রব।
সেক্টর নং ৫
বৃহত্তর ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং সিলেট জেলার অংশ বিশেষ নিয়ে ‘সেক্টর নং ৫‘ গঠিত হয়। মেজর মীর শওকত আলী ছিলেন সেক্টর কমান্ডার। এই সেক্টরকেও ছয়টি সাব-সেক্টরে ভাগ করা হয়ছিল।
সেক্টর নং ৬
দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহাকুমা এবং ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী অঞ্চল ব্যতীত সমগ্র রংপুর নিয়ে গঠিত হয় ‘সেক্টর নং ৬’। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন উইং কমান্ডার এমকে বাশার। এই সেক্টরে ছিল পাঁচটি সাব-সেক্টর।
সেক্টর নং ৭
রাজশাহী, পাবনা, ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরবর্তী এলাকা ব্যতীত সমগ্র বগুড়া, দিনাজপুরের দক্ষিণ অঞ্চল এবং রংপুরের কিছু অংশ ছিল ‘সেক্টর নং ৭’ এর অন্তর্ভুক্ত। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তিনজন -মেজর নাজমুল হক, সুবেদার মেজর এ রব ও মেজর (পরে লে. কর্নেল) কাজী নুরুজ্জামান। এই সেক্টরে ছিল নয়টি সাব-সেক্টর।
সেক্টর নং ৮
কুষ্টিয়া, যশোর, দৌলতপুর সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত খুলনা জেলা ও ফরিদপুরের কিছু অংশ ছিল ‘সেক্টর নং ৮’ এর অন্তর্ভুক্ত। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর (পরে লে. কর্নেল) আবু ওসমান চৌধুরী ও আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর (পরে মেজর জেনারেল) এম এ মঞ্জুর। এই সেক্টরে ছিল সাতটি সাব-সেক্টর।
সেক্টর নং ৯
পটুয়াখালী, বরিশাল ও খুলনার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয় ‘সেক্টর নং ৯’। ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর এম এ জলিল এবং তারপর মেজর জয়নাল আবেদীন। এছাড়াও অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন মেজর এম এ মঞ্জুর। এই সেক্টরে ছিল তিনটি সাব-সেক্টর।
সেক্টর নং ১০
সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল, নৌ কমান্ডো ও আভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন ছিল ‘সেক্টর নং ১০’ এর অধিনে। এ সেক্টরে নৌ কমান্ডোরা যখন যে সেক্টরে মিশনে নিয়োজিত থাকতেন, তখন সে সেক্টরের কমান্ডারের নির্দেশে কাজ করতেন। এই সেক্টরে কোনো সাব-সেক্টর ছিল না এবং ছিল না নিয়মিত কোনো সেক্টর কমান্ডার। প্রধান সেনাপতির নিয়ন্ত্রণাধীন বিশেষ বাহিনী ছিল এটি।
সেক্টর নং ১১
কিশোরগঞ্জ বাদে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা নিয়ে গঠিত হয় ‘সেক্টর নং ১১’। ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান । নভেম্বর পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু তাহের ও তারপর ফ্লাইট লেফট্যান্যান্ট (পরে উইং কমান্ডার) এম হামিদুল্লাহ খান। এই সেক্টরকে সাতটি সাব-সেক্টর ভাগ করা হয়েছিল।
সূত্র : বিবিসি