স্বচ্ছ পান্নাসবুজ জলে সাঁতার, বালুময় সৈকতে সূর্যস্নান, প্রবালদ্বীপের বিলাসবহুল রিসোর্টে ছুটিযাপন, স্নোরকেলিং ও স্কুবা ডাইভিংয়ের মতো নানা রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ড—বলা যায় পর্যটকদের চাহিদা পূরণে সমস্ত সম্ভার নিয়ে বসে আছে মালদ্বীপ। তাই তো হানিমুনের জন্য নবদম্পতিদের কাছে যেমন, তেমনি রোমাঞ্চপ্রিয় ও নিরিবিলি আয়েশি অবকাশযাপনসন্ধানী ভ্রমণপিপাসুদের কাছেও পছন্দের এক গন্তব্য ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্র। দেশটির সহজ ভিসানীতি, নিরাপত্তা আর নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
ঢাকা থেকে মালের সরাসরি ফ্লাইট, বিভিন্ন এয়ারলাইনসসহ ট্যুর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাশ্রয়ী ভ্রমণ প্যাকেজের ফলে দিন দিন অনেক বাংলাদেশির কাছেও পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে মালদ্বীপ। দেশটির সরকারি তথ্য বলছে, ২০২১ সালে যেখানে মাত্র ৩ হাজার ৯২৩ বাংলাদেশি ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটি ভ্রমণে গিয়েছিল, ২০২২ সালে একলাফে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৮০৭-তে। সেই বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা গত বছরও লক্ষ করা গেছে। ২০২৩ সালে মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছেন ২৮ হাজার ৩৩৬ বাংলাদেশি। অর্থাৎ ২০২২ সালের তুলনায় দেশটিতে বাংলাদেশি পর্যটক বেড়েছে ৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এই হিসাবে বাংলাদেশ এখন মালদ্বীপের ১৫তম পর্যটন বাজার।
শুধু বাংলাদেশি পর্যটকই নয়, সামগ্রিকভাবেই মালদ্বীপে পর্যটক বেড়েছে। ২০২৩ সালে দেশটিতে ১৮ লাখ ৭৮ হাজার ৫৩৭ জন বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন, ২০২২ সালে যা ছিল ১৬ লাখ ৭৫ হাজার। গত বছরের পরিসংখ্যান থেকে আরও জানা যায়, বছরজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার ভিনদেশি পর্যটক পেয়েছে মালদ্বীপ। আর একজন পর্যটক ভ্রমণে গিয়ে গড়ে ৬ দিন অবস্থান করেন। এ সময় ভারতীয় ও রুশ পর্যটক ছিল প্রায় সমান, অর্থাৎ ২০২৩ সালে ২ লাখ ৯ হাজার ১৯৮ ভারতীয় ও ২ লাখ ৯ হাজার ১৪৬ রুশ পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছেন। ভ্রমণকারী শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় এরপরই আছে চীন ১ লাখ ৮৭ হাজার, যুক্তরাজ্য ১ লাখ ৫৫ হাজার, জার্মানি ১ লাখ ৩৫ হাজার, ইতালি ১ লাখ ১৮ হাজার, যুক্তরাষ্ট্র ৭৪ হাজার, ফ্রান্স ৪৯ হাজার, স্পেন ৪০ হাজার ও সুইজারল্যান্ড ৩৭ হাজার।
যদিও চলতি বছরে নতুন বাস্তবতায় পড়েছে মালদ্বীপের পর্যটন খাত। চলমান কূটনৈতিক উত্তেজনার জেরে মালদ্বীপ বিমুখ ভারতীয়রা। লাক্ষাদ্বীপ নিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে অপমানের জবাব বেশ ভালোভাবেই দিচ্ছেন ভারতের ভ্রমণপিপাসুরা। গত বছর ভ্রমণে শীর্ষে থাকা ভারতের অবস্থান এখন পঞ্চম। তবে ভারতীয় পর্যটক হ্রাসের বিপরীতে ইতালি ও চীনের পর্যটক বেড়েছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক। গত ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ লাখ ৮৬ হাজার পর্যটক দেশটি ঘুরতে গেছেন। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৬ হাজারের বেশি।
রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ মোকাবিলা করেই পর্যটনকে এগিয়ে নিচ্ছে মালদ্বীপ সরকার। পর্যটনই দেশটির অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। মালদ্বীপে সহস্রাধিক দ্বীপ আছে, এই দ্বীপগুলোকে দুই নামে ডাকা হয়—লোকাল আইল্যান্ড আর রিসোর্ট আইল্যান্ড। লোকাল আইল্যান্ডে স্থানীয় জনগণ থাকে, তবে পর্যটকদের থাকারও ব্যবস্থা আছে আর রিসোর্ট আইল্যান্ডে শুধুই রিসোর্ট। ১৯৭২ সালে এমনই একটি দ্বীপে দুটি রিসোর্ট নিয়ে পর্যটনশিল্পের গোড়াপত্তন করে মালদ্বীপ। বর্তমানে দেশটিতে রিসোর্টের সংখ্যা ১৮০। এ ছাড়া আছে হোটেল, গেস্টহাউস, সাফারি জাহাজসহ নানা কিছু।
সূত্র : প্রথম আলো