মার্চ মাসে দেশে কারা হেফাজতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। এ নিয়ে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কারা হেফাজতে ৫০ জনের মৃত্যু হলো। এর আগে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কারা হেফাজতে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়।
রোববার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায় এমএসএফ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চে মারা যাওয়া ১২ জনের মধ্যে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৪ জন, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ১, বাগেরহাট কারাগারে ১, শেরপুর কারাগারে ১, মেহেরপুর কারাগারে ১, চুয়াডাঙ্গা কারাগারে ১ ও নওগাঁ কারাগারে ১ জন কারাবন্দীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক কয়েদি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রতিবেদন দেয়। দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। রোববার দেওয়া প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে ১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনার ভিত্তিতে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফের সংগ্রহ করা তথ্যানুযায়ী মার্চে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তিনজনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর তাঁদের কোনো না কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহত
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতার ২১টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৭টি ঘটনা ঘটেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অন্তর্দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে। অন্য চারটি ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। এতে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৮১ জন। তাঁদের মধ্যে ১ জন নিহত ও ৮০ জন আহত হয়েছেন। এ মাসে পুরোনো রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৯৩ জন বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে ৮৪ জনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিএনপির নেতা-কর্মী।
নরসিংদী, কুমিল্লা, বরগুনা ও নারায়ণগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। মার্চে নির্বাচনী সহিংসতার ১০টি ঘটনায় ১০১ জন ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২ জন নিহত হয়েছেন, ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছেন। এমএসএফ মনে করে, নির্বাচনোত্তর ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্দ্বন্দ্বমূলক সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে আইনের শাসনের পরিপন্থী পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে।
সীমান্তে হত্যা
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না, বরং বাড়ছে। মার্চে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে চার বাংলাদেশি নাগরিক নিহত ও পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের লঙ্ঘন
মার্চ মাসের ১৫টি ঘটনায় ৪০ সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে শেরপুরের নকলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে তথ্য চাইতে গেলে অসদাচরণের অভিযোগে সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
এমএসএফ মনে করে, যেভাবে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, বরং বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠ রোধ করার পাশাপাশি স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র ও বাক্স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ।
prothom alo