মার্চেও আইএমএফের শর্ত পূরণ হয়নি

মার্কিন ডলার

চলতি বছরের মার্চ মাসেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী নিট বা প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে, তার শর্ত অনুযায়ী মার্চের শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ১ হাজার ৯২৬ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের কম। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রকৃত রিজার্ভ হলো দায়হীন রিজার্ভ। প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব কীভাবে হবে, সেই সূত্রও ঋণ দেওয়ার সময় বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছিল আইএমএফ। সংস্থাটি ঋণের শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রকৃত রিজার্ভ কী পরিমাণে থাকতে হবে, তা ঠিক করে দেয়। সে অনুযায়ী, প্রতি তিন মাস পরপর আইএমএফের শর্ত মেনে বাংলাদেশকে রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হচ্ছে।

এর আগে গত ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর আর ডিসেম্বরের শেষেও আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে বাংলাদেশের অনুরোধে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্য কমিয়ে দেয় সংস্থাটি। সদ্য সমাপ্ত মার্চের শেষে সংশোধিত লক্ষ্যও অর্জন হয়নি।

আইএমএফের এসডিআর খাত, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে রাখা ডলার ও এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিলের জন্য জমা থাকা ডলার বাদ দিয়ে যে হিসাব হয়, সেটিই প্রকৃত রিজার্ভ। এর বাইরে রিজার্ভের আরও দুটি হিসাব রয়েছে। তার একটি হলো, মোট রিজার্ভ। আরেকটি আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রক্ষিত রিজার্ভ। গত মার্চের শেষে মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৮১ কোটি ডলার। তবে আইএমএফের চাওয়া শুধু নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ কত হবে, সেটি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইএমএফ কত রিজার্ভ রাখতে বলেছিল, আর আমরা কত রেখেছি, এটা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কথা বলবে না। আইএমএফের দল ঢাকায় এলে তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হবে। তখন দেখা যাবে কী হয়।’

দেশে ডলার-সংকটের মধ্যে আর্থিক হিসাব ও চলতি হিসাবে ঘাটতি হওয়ায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। ছয় মাস পর সংস্থাটি গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও গত ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।

আইএমএফ সাধারণত ঋণ দেওয়ার সময় আর্থিক খাতে নানা সংস্কারের পাশাপাশি বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দেয়। তাদের শর্ত অনুযায়ী গত বছরের জুনের শেষে নিট রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার। কিন্তু ওই সময় তা ছিল ২ হাজার ৪৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংস্থাটিকে তখন জানানো হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের পর রিজার্ভ ও রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য অর্জনের শর্ত পূরণ করা সম্ভব হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ রিজার্ভ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে শর্ত কিছুটা শিথিল করে।

আইএমএফের নতুন শর্ত অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের প্রকৃত রিজার্ভ রাখার কথা ১ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার। এ ছাড়া চলতি বছরের মার্চে তা ১ হাজার ৯২৬ কোটি ডলার ও জুনে ২ হাজার ১০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে বলা হয়। তবে ডিসেম্বর ও মার্চের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি সরকার।

এদিকে রিজার্ভ বাড়াতে গত দেড় মাসে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ১৭০ কোটি ডলার অদল-বদল (সোয়াপ) করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে মোট রিজার্ভ বাড়লেও প্রকৃত রিজার্ভ বাড়েনি। কারণ, এই রিজার্ভ দায়হীন নয়। তবে সোয়াপ–সুবিধা চালুর ফলে ব্যাংকগুলোর টাকার সংকট কিছুটা দূর হয়েছে, আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও মোট রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে।

আইএমএফের ঋণপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, ‘আগের মতো শর্ত মানা নিয়ে আইএমএফের কড়াকড়ি নেই। তারা দেখতে চায়, বাংলাদেশ আর্থিক সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করছে কি না। আমরা চেষ্টা করছি, সংকট অনেকটা কেটে গেছে। শর্ত পূরণ না হলেও তারা ঋণের কিস্তি ছাড় করবে।’

এদিকে দুই বছর ধরে চলা ডলার-সংকট এখনো কাটেনি। ব্যাংকে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কেনায় ডলারের দাম এখন ১১০ টাকা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যাংকগুলো ১১৪-১১৫ টাকা দামে ডলার কিনছে।

prothom alo