কামরুল হাসান
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২২ । ০১:৫১ । প্রিন্ট সংস্করণ
১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নেয়ামুল হক নাহিদসহ আরও পাঁচজন ঢাকায় এসেছেন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিতে। গত ১ ডিসেম্বর তাঁদের বিরুদ্ধে ককটেল বিস্ম্ফোরণের মামলায় ২৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৬০ থেকে ৬৫ জনকে আসামি করা হয়। আসামির তালিকায় থাকা নেতাকর্মীরা ঢাকায় এসেছেন জামিন নিতে। অন্য নেতাকর্মীরাও গ্রেপ্তার এড়াতে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা চলে এসেছেন। তাঁদের একটাই উদ্দেশ্য, বিএনপির গণসমাবেশ সফল করা।
নেয়ামুল হক নাহিদ জানান, পদধারী ও দায়িত্বশীল নেতা কিংবা অনেক কর্মী-সমর্থক মামলার কারণে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে অংশ নেওয়া এখন বাধ্যতামূলক মনে করছে। ছোট-বড় নেতা কিংবা কর্মী-সমর্থকরা সবাই এলাকাছাড়া। তাঁদের বেশিরভাগই ঢাকায় এসেছেন।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোলায়মান খান উজ্জ্বল জানান, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব সাইদুর রহমান রুবেলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলায় যাঁরা সাক্ষী, তাঁরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া এলাকায় গত রোববার উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ককটেল বিস্ম্ফোরণের অভিযোগে মামলায় বিএনপির ১০২ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এলাকাছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা। জামিন নিতে ও গণসমাবেশে অংশ নিতে তাঁরা ঢাকামুখী হচ্ছেন।
উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ফেরদৌস আহমেদ রুম্মন জানান, তাঁদের হারানোর আর কিছু নেই। কোনো কিছু না করে ঘরে বসে থাকলেও গ্রেপ্তার হতে হবে। তার চেয়ে দলের কর্মসূচিতে গিয়ে মৃত্যুও সম্মানের।
শুধু এই দুই উপজেলার নেতাকর্মীই নন, সারাদেশের জেলা, মহানগর, থানা, ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মামলার কারণে এখন ঢাকামুখী। গ্রেপ্তার এড়াতে ঢাকাতেও তাঁরা বিভিন্ন কৌশল নিচ্ছেন। সমাবেশে যোগদানই তাঁদের মূল উদ্দেশ্য।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, মামলার ইস্যু ছাড়াও লক্ষাধিক নেতাকর্মী ইতোমধ্যে ১০ ডিসেম্বর টার্গেট করে ঢাকায় পৌঁছেছেন। বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা জানান, পরিবহন ধর্মঘট, পুলিশি চেকপোস্ট, ক্ষমতাসীনদের পাহারা থাকতে পারে- এজন্য আগেভাগেই নেতাকর্মীরা ঢাকায় চলে আসছেন।
খুলনা থেকে ঢাকায় এসেছেন যুবদল নেতা শাহীন হাওলাদার। বর্তমানে তেজগাঁও এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় অবস্থান করছেন। দুইদিন আগে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন বিএনপি নেতাকর্মীর মধ্যে আলোচিত ‘হেকমত আলী চাচা’। সত্তরোর্ধ্ব এই হেকমত আলী কুড়িগ্রাম থেকে ৬০ কিলোমিটার পথ হেঁটে রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। বিএনপির সমর্থক হেকমত আলী নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। দলের নেতাকর্মীরাই তাঁর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। শীতের পোশাক দিয়েছেন। নেতাকর্মীর সঙ্গে মিছিল-সমাবেশেই দিন পার করছেন হেকমত আলী।
তিনি জানান, প্রয়োজনে লাশ বা গ্রেপ্তার হবেন তারপরও নয়াপল্টনে ঢাকার সমাবেশ সফল করে বাড়িতে ফিরবেন, তার আগে নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল ছাত্রদল সভাপতি নাছির উদ্দিন শাওন জানান, হেকমত আলী চাচার দেখভাল তাঁরাই করছেন। তিনি তাঁদের অনুপ্রেরণার জায়গা।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে মতবিনিময় সভা, প্রস্তুতি সভা, বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে বৈঠক করছেন নীতিনির্ধারকরা। গঠন করা হয়েছে মিডিয়া সেল, প্রচার সেল, শৃঙ্খলা সেলসহ বিভিন্ন সেল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে ব্যাপক প্রচারণা।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, যে কোনো মূল্যে তাঁরা ঢাকার গণসমাবেশ সফল করবেন। বাধা এলেও সর্বকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ হবে। এ সমাবেশ থেকেই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচিও থাকতে পারে। আবার দাবি মেনে নিতে সরকারকে আলটিমেটামও দেওয়া হতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের মানুষ তাকিয়ে আছে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের দিকে। যে কোনো মূল্যে এই সমাবেশ সফল করতে হবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে জনগণের। সামনে সবার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনরোষের ভয়ে সরকার আতঙ্কিত হয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করতে সারাদেশে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিচ্ছে।
এদিকে পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট ও ঝিনাইদহে তিন শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও টাঙ্গাইলে নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
খুলনা ও কয়রা : বিটিসিএলএ ভবন ধ্বংসের ষড়যন্ত্র ও নাশকতার অভিযোগে খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পীসহ বিএনপির ৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) : মঠবাড়িয়ায় ১৫১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবুলও রয়েছেন। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন দুলাল বলেন, মামলাটি মিথ্যা।
বাগেরহাট : বাগেরহাট জেলা জামায়াত নেতা মঞ্জুরুল হক রাহাতসহ ২০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে পুলিশ। বিভিন্ন স্থান থেকে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসআই রফিকুল ইসলামের করা মামলায় অজ্ঞাত ৩৫-৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : কালীগঞ্জে গত রোববার রাতে বারবাজার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে বোমা বিস্টেম্ফারণের ঘটনায় অর্ধশত নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) :আড়াইহাজারে নাশকতার মামলায় গতকাল সোমবার ভোরে নাসির মোল্লা ও কবির হোসেন নামে বিএনপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
টাঙ্গাইল : ককটেল বিস্টেম্ফারণ ও নাশকতার মামলায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান তালুকদার সেলুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।