মানুষের জীবনের মূল্য কাঁচামরিচের নিচে

  • ড. নূর জাহান সরকার
  •  ১৬ আগস্ট ২০২৩, ১৯:৪৮
মানুষের জীবনের মূল্য কাঁচামরিচের নিচে। – প্রতীকী ছবি

পয়লা আগস্টে দৈনিক নয়া দিগন্তের খবরে প্রকাশ- কাঁচামরিচ কম দামে কেন বিক্রি করল? জানা যায়, ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি কাঁচামরিচের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ২৫০-৩০০ টাকা। এই দামেই সবাইকে বিক্রি করতে হবে। কোনো এক বিক্রেতা নাকি মাইকিং করে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করাতে কাঁচামরিচ বিক্রেতাদের মধ্যে গণ্ডগোলের জের ধরে দু’জন বিক্রেতার জীবন চলে যায় এবং আরো কয়েকজন আহত হয়। এসব কিসের লক্ষণ? দেখার কি কেউ নেই? মানুষের জীবন কি এতই মূল্যহীন?

কিছু দিন ধরে কাঁচামরিচের বাজারে আগুন। আমি সচরাচর ২৫০ গ্রামের নিচে কাঁচামরিচ কিনি না। কেননা, আমরা কাঁচামরিচের রান্না খাই। শুকনা লাল মরিচের রান্নার রেওয়াজ আমাদের বাসায় কখনোই ছিল না এবং নেইও। অতএব রোজা, পূজা, কোরবানি সামনে চলে এলে নিদেনপক্ষে এক কেজি কাঁচামরিচ কিনে ডিপে রেখে দেই। এবার দেশে ছিলাম না বিধায় কেনা হয়নি। দেশে ফেরা অবধি ১০০ গ্রাম করে কাঁচামরিচ কিনি এবং প্রায় ঝালবিহীন সালুন খাই। জীবন যখন যেমন তেমন করেই চালাতে হবে, মায়ের কাছ থেকে শিখেছি।

কয়েক দিন আগে আমার সাহায্যকারী মিনারাকে বললাম, দেশে এত এত কাঁচামরিচের উৎপাদন অথচ দাম নিচে নামছেই না। ঘটনা কী? ও অকপটে বলল, আপা অনেক দামে বিক্রি হয় এ জন্য কেউ তেমন আগের মতো কেনে না। প্রায় সবই পচে যায় এবং গরিব মানুষদের দিয়ে ব্যবসায়ীরা বাছাই করে কিছু কিছু ভালোগুলো রেখে দেয় আর সবই ফেলে দেয়। শুনে আমার মাথা ঘুরে গেল! বললাম, পচার আগেই কম দামে কেন বিক্রি করে না? ও বলল, তাহলে নাকি তাকে আস্ত রাখবে না, অন্য সবাই। দেশে এ কোন অরাজকতা! ও কখনো মিথ্যা কথা বলেছে বলে আমার মনে পড়ে না। ভেবেছি ও কী শুনে কী বলে কে জানে। তবে খবরের কাগজের খবর তো আর বিশ্বাস না করে পারা গেল না। তাহলে আমরা কোথায় যাচ্ছি ? এ প্রশ্নের জবাব কে দেবে?

ইদানীং অবশ্য এটিও দেখা যাচ্ছে যে, ৫০ টাকা কেজি কেনা আলু, ২০০ টাকা কেজি আদা প্রভৃতিরও অনেকটাই পচা। তাহলে সব ক্ষেত্রেই ওই একই বিধি, নির্দেশিত মূল্যে বিক্রি করো, নয়তো পচিয়ে ফেলো। অন্যদিকে নিজেরা নিজেরা মারামারি করে জান হারায়। এ কোন অরাজকতা! নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন বটে, তার গবেষণার ফলাফলে দুর্ভিক্ষ ঘটার নয়, ঘটানোর।

একে তো সব নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। মূল্যের চাপে আমজনতার প্রাণ যায় যায়। তদুপরি ব্যবসায়ীরা নিজেরা নিজেরা আঁতাত করে মূল্য বেঁধে দেয়। আগে তো জানতাম, বড় বড় ব্যবসায়ীরা অনেকে লোভী, টাকা পাচারকারী। এখন তো দেখা যায় ছোট, বড়, মাঝারি সবার এক ব্যারাম! দেশটা কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে?

লেখক : প্রফেসর ও সাবেক চেয়ারম্যান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়