মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ফ্যাসিবাদের পক্ষে রাশিয়ার অবস্থান!

গুম শিকার ব্যক্তির বাড়িতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যাওয়া নিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতি

 আমার দেশ

২৫ ডিসেম্বর ২০২২

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা

নিজস্ব প্রতিনিধি

র‌্যাব-১ এর সদস্যরা তুলে নিয়ে গুম করা বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যাওয়াকে কেন্দ্র করে এবার রাশিয়ান পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের চেষ্টা।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা মস্কোর স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এই মন্তব্য করেন। ঢাকার রুশ দূতাবাস রবিবার (২৫শে ডিসেম্বর) সকালে মারিয়া জাখারোভার বিবৃতিটি প্রচার করেছে।

এর আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত বলেছিল মানবাধিকারের কথা বলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোন দেশের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।

রবিবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষার কথা বলে ক্রমাগত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, গুম, খুন করে একটি ফ্যাসিবাদি শেখ হাসিনার সরকার টিকে আছে। বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের তুলে নিয়ে গুম করার ঘটনা নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা গুলো দীর্ঘদিন থেকেই উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। গুম ও খুনের অভিযোগে র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক ৭ জন কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে যখন দেশের মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে তখন আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা কিছুটা হলেও স্বস্তির নি:শ্বাস নেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছিল। কিন্তু রাশিয়া এবার সরাসরি ফ্যাসিবাদের গুম ও খুনকে সমর্থন দিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পদক্ষেপ গুলোকে সমালোচনা করছে। এতে স্পষ্ট রাশিয়া মানবাধিকারের পক্ষে অবস্থান না নিয়ে ফ্যাসিবাদের নিপীড়নে সহযোগিতা ও উস্কানি দিচ্ছে।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১৪ই ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর শাহীনবাগে গুম বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলামের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় বাসার বাইরে একদল লোক তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করেন। তিনি নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় সেখান থেকে বেরিয়ে যান।

সেদিন দুপুরে শাহীনবাগের ঘটনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করেন পিটার হাস। সেখানে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার কথা উল্লেখ করে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানান।

ঘটনাটি নিয়ে ওয়াশিংটনেও আলোচনা হয়েছে। ১৫ই ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে আলোচনায় পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

২০১৩ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর সুমন ও তার খালাতো ভাইসহ ৮ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে তুলে নিয়ে যায় র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। এই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন র‌্যাব-১ এর তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার কিসমত হায়াৎ। এরপর থেকে তাঁদের সন্ধান আর মেলেনি।

গুম হওয়া সুমনের বোন গড়ে তুলেছেন ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠন। গত কয়েক বছর ধরে এই সংগঠনটি গুমের সন্ধান চেয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছে।