- আবু সালেহ আকন
- ১৮ জুলাই ২০২০
একের পর এক নৃশংস ঘটনায় মানুষের মধ্যে চরম অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বের র অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখানকার মানুষ যখন দিশেহারা, তখন অপরাধীরা যেন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। খুন-জখমে মেতে উঠেছে অপরাধীরা। অঞ্চলভিত্তিক দুর্বৃত্ত ও প্রভাবশালীরাও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এলাকার আধিপত্য, জমিজমা দখল, জলমহাল দখল নিয়েও ঘটছে নৃশংস ঘটনা। পুরো পরিবারকে খুন করে ফেলার ঘটনাও ঘটছে। মানবাধিকার কর্মী ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনা দুর্যোগের সময় মানুষ যেখানে অপরাধমুক্ত হওয়ার কথা, সেখানে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠার বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় একই পরিবারের নারী ও শিশুসহ চারজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ রোড এলাকার একটি বাড়ি থেকে গণি মিয়া (৪৫), তার স্ত্রী কাজিরন ওরফে বুচি (৩৮), ছেলে তাজেল (১৭) ও মেয়ে সাদিয়ার (৮) ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। দু’দিন ধরে বাড়িটি তালাবদ্ধ ছিল। গতকাল ভোরে গণি মিয়ার শাশুড়ি এসে বাইরে থেকে তালা লাগানো দেখে ডাকাডাকি করেন। সাড়াশব্দ না পেয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় তালা ভেঙে ভেতরে গিয়ে চারজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পুলিশ বলেছে, গলা কেটে মাথা থেঁতলিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। নৃশংস এই ঘটনায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র বলেছে, মশিয়ালী গ্রামের হাসান আলী শেখের ছেলে জাকারিয়া, জাফরিন ও মিলটনের নেতৃত্বে প্রথমে গুলির ঘটনা ঘটে। জাকারিয়া এলাকায় সুদের ব্যবসা করলেও মাদরাসা ও মসজিদ কমিটিতে তাকে সভাপতি পদে রাখার জন্য গ্রামবাসীর ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। গ্রামের লোকজন তার প্রতিবাদ করায় বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামের মানুষের ওপর গুলি চালায়। পরে গ্রামের লোকজন এক হয়ে ওই তিন ভাইয়ের বসতবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়ে দেয়। খুলনার নৃশংসতা গতকাল মানুষের মুখে মুখে ছিল।
করোনাকালেও থেমে নেই অপহরণ। ভোলার মনপুরার মেঘনা নদীতে মাছ ধরার সময় নৌকাসহ ১৬ জেলেকে গত ১৪ জুলাই রাতে অপহরণ করে জলদস্যুরা। অপহরণের এক দিন পর মুক্তিপণ দিয়ে তারা ছাড়া পেয়েছে বলে জানা গেছে। জলদস্যুদের বেদম প্রহারে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে জেলে নৌকার মাঝি মো: সেলিম মাঝি (৩৮) ও জাকির (৩০)।
এ বিষয়ে মনপুরা থানার ওসি মো: শাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। ঘটনাটি ঘটেছে মেঘনা নদীর হাতিয়া সীমানায়। রাজধানীর নাখালপাড়া এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া সুলতান হোসেন নামের এক ব্যক্তির লাশ দুই দিন পরে গত বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মী মোস্তফা সোহেল নয়া দিগন্তকে বলেন, সামাজিক সঙ্কট আর রাজনৈতিক সঙ্কট যত দিন থাকবে তত দিন নৃশংসতা বাড়বে। সামাজিক অস্থিরতা আর হতাশার কারণে এসব হচ্ছে। নীতিনির্ধারকদের কারণে মানুষের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। লাখ লাখ লোক বেকার হয়ে পড়েছে। কী খাবে সেই নিশ্চয়তা নেই। এসব কারণে স্বাভাবিক জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সত্যিকার অর্থে সরকারি সাপোর্ট পাচ্ছে না। সরকারের ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য নেই। যেখানে সামাজিক অবস্থা বিপন্ন, অস্থির ও সঙ্কটময়, সেখানে সামাজিক বিরোধ থাকবেই। দিন যত যাবে মানুষের আদিম চেহারা আরো বেড়ে উঠবে। হতাশা থেকে রাগ, ক্ষোভ আর ঘৃণার সৃষ্টি হবে। এগুলো আইন দিয়ে থামানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশে কেউ নিরাপদ নয়। করোনা পরবর্তী সময়ে যে চ্যালেঞ্জ আসবে তা আরো ভয়ঙ্কর হবে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি প্ল্যান নিতে হবে।
মানবাধিকার কর্মী রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, আইনের শাসন নেই, আইনের প্রতি আস্থা নেই; সে কারণেই এভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটছে। এসবের সাথে যারা জড়িত তাদের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কেউ তার কথা শোনে না। যে কারণে মানুষ যে যা পারছে করছে। সাইদুর রহমান বলেন, আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় ফিরতে হবে। আস্থায় ফিরতে হবে। সুশাসনে ফিরে আসতে হবে। তাহলেই নৃশংসতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।