মন্ত্রিপাড়ার বাংলো ছাড়তে সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি

মন্ত্রিপাড়ার সরকারি বাসভবনে থাকেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। রাজধানীর হেয়ার রোডে
মন্ত্রিপাড়ার সরকারি বাসভবনে থাকেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। রাজধানীর হেয়ার রোডেছবি: প্রথম আলো।

মন্ত্রিসভায় স্থান না পেলেও মন্ত্রিপাড়ার বাড়িতে এখনো থাকছেন সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। তাঁকে বাড়িটি ছাড়তে ২১ মার্চ আবার চিঠি দিয়েছে সরকারি আবাসন পরিদপ্তর। সময় দেওয়া হয়েছে ৩০ মার্চ পর্যন্ত।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান খুলনা-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মন্নুজান সুফিয়ান। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিপাড়া হিসেবে পরিচিত রাজধানীর হেয়ার রোডের সরকারি বাংলো ৬ নম্বর ছায়াবীথি বরাদ্দ পান তিনি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত) পর নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয় গত ১১ জানুয়ারি। এই মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নও পাননি। তবে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন পেয়ে তিনি আওয়ামী লীগ থেকেই সংসদ সদস্য হন। তিনি সরকারি বাংলোতেই বাস করছেন।

সরকারি আবাসন পরিদপ্তর গত ২৪ জানুয়ারি মন্নুজান সুফিয়ানের বাংলোটির বরাদ্দ বাতিল করে। চিঠি দিয়ে তাঁকে বিষয়টি জানিয়ে সেটি ছাড়তে অনুরোধ করা হয়। বাংলোটি ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য মন্নুজান সুফিয়ান বাংলোটি না ছাড়ায় ২১ মার্চ তাঁকে আবার চিঠি দেওয়া হয়।

মন্নুজান সুফিয়ান গতকাল রোববার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ৩০ মার্চের মধ্যে বাসা ছেড়ে দেওয়ার চিঠি পেয়েছেন। তিনি জোর করে থাকতে চান না।

সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোজার মধ্যে এত মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া বেশ কঠিন কাজ। তাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর বাড়ি ছাড়বেন তিনি। সেটা আবাসন পরিদপ্তরকে জানিয়ে দেবেন।

মন্ত্রিপাড়ার সরকারি বাংলোগুলো বরাদ্দ পেতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের চেষ্টা থাকে। কারণ, দোতলা বাংলোগুলো আকর্ষণীয়। ভেতরে ফুলের বাগান, গাছপালা, খোলা জায়গা রয়েছে। পাশাপাশি রাস্তাঘাট প্রশস্ত, নিরাপত্তা বেশি।

নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন পুরোনো ১৫ জন মন্ত্রী ও ১৩ জন প্রতিমন্ত্রী। তাঁদের প্রায় সবাই সরকারি বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। মন্নুজান সুফিয়ানের পাশের বাংলোয় থাকতেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। নতুন মন্ত্রিসভায় তাঁকে রাখা হয়নি। এরপরই তিনি বাংলো ছেড়ে দেন।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বরাদ্দ পাওয়া বাংলোয় ওঠার জন্য একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। তাঁর প্রতিনিধি হেয়ার রোডে গিয়ে বাংলোটি দেখেও এসেছেন। তবে মন্নুজান সুফিয়ান বাংলোটি না ছাড়ায় তাতে উঠতে পারছেন না নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।

২১ মার্চ মন্নুজান সুফিয়ানকে দেওয়া চিঠি সরকারি আবাসন পরিদপ্তর বলেছে, ভূমিমন্ত্রীকে বাংলোটি বুঝিয়ে দিতে সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কারের কাজ করা বেশ সময়সাপেক্ষ। বাড়িটি সংস্কার করতে গিয়ে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সেবা বন্ধ করার প্রয়োজন হতে পারে।

সরকারি কোনো পদে না থেকেও ছয় বছর মিন্টো রোডের একটি বাংলোয় বসবাস করেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ)। এ নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি ‘মন্ত্রী না হয়েও মন্ত্রিপাড়ার বাংলোয় গোলাপের বাস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর নামে বাড়ির বরাদ্দ বাতিল করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

সমাজকল্যাণমন্ত্রী হওয়ার পর রাজধানীর বেইলি রোডে মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে পাঁচ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট পেয়েছিলেন নুরুজ্জামান আহমেদ। এর বাইরেও তিনি সমান আয়তনের আরেকটি সরকারি বাসা নিজের দখলে রাখেন। বিগত পাঁচ বছর বাসা দুটির একটিতে তিনি নিজে, অন্যটিতে তাঁর আত্মীয়স্বজন বসবাস করেন। গত ২১ জানুয়ারি ‘সরকারি দুটি বাসা দখলে রাখেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়। পরে তিনি দুটি বাসা ছেড়ে দেন।

PROTHOM ALO