মৌলভীবাজার
কাঁচা চা-পাতা উত্তোলনের এখন ভরা মৌসুম। এমন সময়েই কিনা দেশের চা-বাগানগুলোয় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হয়েছে। মজুরি বাড়ানোর দাবিতে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন এই ধর্মঘট ডেকেছে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে কর্মচঞ্চল সব চা-বাগান। অথচ কাঁচা পাতা নষ্ট হলে মালিক–শ্রমিক দুই পক্ষেরই ক্ষতি।
এ রকম পরিস্থিতিতে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী শুক্রবার চা-শ্রমিক ইউনিয়নকে লেখা একটি চিঠিতে বলেন, চায়ের ভরা মৌসুমে উৎপাদন ও শান্তিশৃঙ্খলা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, যা কাম্য না। দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চলমান রেখে কর্মবিরতি পালন শ্রম আইনের পরিপন্থী। তিনি চিঠিতে দীর্ঘদিনের প্রথা অনুযায়ী পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে বলেন।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে আন্দোলন চলছে। মালিকপক্ষ কোনো ফোনই দেয়নি। উল্টো শ্রম অধিদপ্তরের ডিজি চিঠি লিখে বলেছেন, আন্দোলন অবৈধ। মালিকপক্ষকে চাপ দিচ্ছেন না। আমাদের চাপ দিচ্ছেন। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
প্রথা অনুযায়ী, প্রতি দুই বছর পরপর বাংলাদেশীয় চা-সংসদ ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় দর–কষাকষির মাধ্যমে শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু সর্বশেষ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বর। এরপর ১৯ মাসে দুই পক্ষের মধ্যে ১৩টি বৈঠক হলেও নতুন মজুরি নির্ধারিত হয়নি। এদিকে চা-শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবি করেছে। অন্যদিকে মালিকপক্ষ ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। মজুরি নিয়ে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় চা-শ্রমিক ইউনিয়ন ৯ আগস্ট থেকে চার দিন প্রতিটি বাগানে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেছে। সংগঠনটির ঘোষণা ছিল, ১২ আগস্টের মধ্যে মজুরি সমস্যার সমাধান না হলে ১৩ আগস্ট (গতকাল শনিবার) থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যাবে, যা সেই ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ধর্মঘটের প্রথম দিনেই স্থবির হয়ে পড়েছে চা-বাগানের কার্যক্রম। শ্রমিকেরা বাগানের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন। দেশের ১৬৬টি চা-বাগানে ১ লাখ ৩ হাজার নিবন্ধিত ও ৩৫ হাজার অনিবন্ধিত শ্রমিক আছেন। সব মিলিয়ে এই খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী উপদেষ্টা রামভজন কৈরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলোচনার দায়িত্ব মালিকদের। তাঁরা ডাকলে সভা হবে। কিন্তু তাঁরা মিটিং ডাকলেও এক-দুই ঘণ্টায় শেষ করে দেন। এরপরও তাঁরা যতবার ডাকবেন ততবার বসব। আমরা সহযোগিতা করব। কারণ, মালিকপক্ষ ছাড়া সমাধান হবে না। অন্য কোনো পথ না থাকায় শ্রমিকেরা আন্দোলনে নেমেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মজুরির সমাধান না হলে শ্রমিকের সন্তানেরা বাঁচবে কী করে? শ্রমিককে খেয়ে–পরে বাঁচার সুযোগ দিতে হবে।’
এদিকে বাংলাদেশীয় চা-সংসদের সিলেট শাখার চেয়ারম্যান জি এম শিবলী গতকাল বলেন, ‘আমরা তো আলোচনা বন্ধ করছি না। তারা চাইলে আমরা মিটিং ডাকব। দাবি–দাওয়ায় ১০০টা পয়েন্ট থাকে। এই জন্য আলোচনায় সময় লাগে।’
শ্রম অধিদপ্তরের শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মালিক ও শ্রমিকপক্ষ আলোচনায় আছে। অফিশিয়ালি আলোচনা থেকে কেউ বেরিয়ে যায়নি। সমঝোতা না হলে তাঁরা সালিসকারক ডিজি মহোদয়ের কাছে যাবেন।’