ভোট চুরির সুযোগ না থাকায় বিএনপি নির্বাচনে আসেনি

ভোট চুরির সুযোগ  না থাকায় বিএনপি  নির্বাচনে আসেনিপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোটের মালিক জনগণ। এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। এ দেশে ভোটের অধিকার আওয়ামী লীগই প্রতিষ্ঠিত করেছে। সেটা অব্যাহত থাকবে। দেশের মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যাতে নির্বাচনকে ঘিরে সংঘাত-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করতে না পারে, মানুষের ক্ষতি যেন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি আসন্ন নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে দলীয় নেতাকর্মীর সহযোগিতা কামনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, নির্বাচনকে আমরা উন্মুক্ত করেছি। এখানে নৌকার প্রার্থী আছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন এবং অন্যান্য দলও আছে। প্রত্যেকে জনগণের কাছে যাবেন। কেউ কারও অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেন না। কোনো রকম সংঘাত- সহিংসতা হলে, দলের কেউ করলেও তাদের রেহাই নেই। যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

গতকাল বৃহস্পতিবার রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট, রাজশাহী বিভাগের নাটোর ও পাবনা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন প্রান্ত থেকে জনসভাগুলোতে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে যাতে কেউ কোনো অভিযোগ আনতে না পারে, সেজন্য শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচনে জনগণ ও ভোটারের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। কোন দল এলো না এলো, তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। বিএনপি তো ভোট চুরির সুযোগ পাবে না দেখে আসবেই না। তাই এখন তারা ভোট বাতিল করতে চায়, বর্জন করতে চায়। সেটা তাদের ইচ্ছা, যার যার দলের ইচ্ছা। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি, জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। জনগণের ক্ষমতায়ন আমরাই নিশ্চিত করেছি।

তিনি বলেন, জনগণ যাকে খুশি তাকে পছন্দ করবে, তাকে ভোট দেবে। গণতন্ত্রকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে বাংলাদেশ শেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশে যতটুকু উন্নতি করেছি, তা থাকবে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘনকারী, সেনা আইন লঙ্ঘনকারী ও ক্ষমতা দখলকারী এক জেনারেলের পকেট থেকে যে দল তৈরি হয়েছে, সেই দল বিএনপি ভোটের কি বোঝে? তারা গণতন্ত্রের মানে বোঝে?

তিনি বলেন, বিএনপি মানুষকে মানুষ মনে করলে পুড়িয়ে মারত না। নইলে আপনারা দেখছেন রেলে আগুন দিয়ে কীভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। একটা মা তার সন্তানকে বাঁচাতে বুকে ধরে রাখছে। বাসের ভেতরে হেলপার ঘুমিয়ে আছে আগুন দিচ্ছে, ট্রাকে আগুন দিচ্ছে। একটি ছেলেকে ট্রাকে বসিয়ে রেখে বাবা পানি আনতে গিয়ে দেখে ছেলে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। একইভাবে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস ও আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, আর একটা কুলাঙ্গার আছে, ২০০১ সালে তার হাওয়া ভবন ছিল। চাঁদা না দিলে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারতেন না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হতো। সে অবৈধ যত কাজ আছে, সবই করেছে। মানি লন্ডারিং থেকে শুরু করে অস্ত্র চোরাকারবার, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান, দুর্নীতি সবই করেছে। আমেরিকা থেকে এফবিআই এসে তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। এ জন্য তার সাজাও হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন আবার বিদেশে বসে ভোটের কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে। সে তো রাজনীতি করবে না। আবার বিদেশে বসে থেকে হুকুম দিয়ে উস্কানি দিয়ে নেতাদের দিয়ে মানুষ হত্যা করাচ্ছে। নির্বাচন বানচাল করার পাঁয়তারা করছে।

আগামীতেও ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতিমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বাংলাদেশকে আমরা দুর্নীতিমুক্ত করতে চাই। সুষম উন্নয়ন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কারণ, দুর্নীতি সব থেকে সমাজকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিছু লোক হঠাৎ আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়। সৎভাবে যারা জীবনযাপন করেন, তাদের জীবনটা দুর্বিষহ হয়। সে কারণে দুর্নীতির বিরুদ্ধের জিরো টলারেন্স আমরা ঘোষণা দেব। দুর্নীতিমুক্ত ন্যায় ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা, অর্থনীতিকে ন্যায় ও সমতাভিত্তিক করা এবং মানুষের জীবনমান উন্নত করা আমাদের লক্ষ্য।

জনসভায় সূচনা বক্তব্যের পর সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাকর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। সব শেষ তিনি খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
এ সময় ঢাকা প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।

অন্যদিকে, পাঁচ জেলার জনসভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারাসহ এসব জেলার আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সব জনসভাই জনারণ্যে পরিণত হয়।

পাবনা অফিস জানায়, পাবনার জনসভায় বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল ও পাবনা-৫ আসনের নৌকার প্রার্থী গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি। পাবনা প্রান্তে আরও উপস্থিত ছিলেন পাবনা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, পাবনা-৪ আসনের প্রার্থী গালিবুর রহমান শরিফ, পাবনা-৩ আসনের প্রার্থী মকবুল আহমেদ, পাবনা-২ আসনের প্রার্থী আহমেদ ফিরোজ কবির এবং পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম পাকন প্রমুখ।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোর শহরের বড়হরিশপুর শেরেবাংলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
জনসভায় জেলার চারটি আসনের নৌকার প্রার্থী নাটোর-৩ আসনের জুনাইদ আহমেদ পলক, নাটোর-২ আসনের শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর-১ শহিদুল ইসলাম বকুল এবং নাটোর-৪ আসনের ডা. সিদ্দিকুর রহমানকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।

আগামীকাল আরও ছয় জেলায় জনসভা
আগামীকাল শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন প্রান্ত থেকে আরও ছয়টি জেলার নির্বাচনী জনসভায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন। খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরা, বরিশাল বিভাগের বরগুনা, ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙামাটি জেলার নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে ভার্চুয়াল জনসভা সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সমকাল