ভোটের প্রচারে সংঘর্ষ হামলা ভাঙচুর চলছেই

ভোটের প্রচারে সংঘর্ষ হামলা ভাঙচুর চলছেই

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। বুধবার রাত ও গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে দু’পক্ষের সমর্থকদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, আগুন, বাধা ও হুমকি-ধমকির মতো ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন উভয়পক্ষের নেতাকর্মী। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে প্রচার শুরুর পর স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটুর সমর্থকরা হামলার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সর্বশেষ বুধবার রাতে সশস্ত্র মুখোশধারী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম শেখ। উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ভাড়ারুয়া গ্রামের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে কচুয়া সীমান্তের উজানী গ্রামে ফেলে যায় সন্ত্রাসীরা। তাঁকে উদ্ধার করে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। শরীফ উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। স্বতন্ত্র প্রার্থী এ হামলার জন্য নৌকার প্রার্থী ডা. প্রাণ গোপাল এমপির অনুসারীদের দায়ী করেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, আমি চিকিৎসক। সংঘাত-সহিংসতায় বিশ্বাসী নই।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের সমর্থকদের হামলায় তাহেরপুর পৌরসভার সংরক্ষিত কাউন্সিলর রিতা রানী গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় তাহেরপুর পৌরসভার সানডাল গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। রিতা রানীকে উদ্ধার করে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের সমর্থক। হামলার বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক বলেন, প্রতিদিনই আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। নৌকার লোকেরা হামলা করে আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে।

কুমিল্লার হোমনায় স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার রাতে উপজেলার দৌলতপুরে নৌকার সমর্থকরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর। এতে গুরুতর আহত বাদল নামে একজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

শেরপুর সদর উপজেলার কুসুমহাটী বাজারে বুধবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মিছিলে লাঠিসোটা ও রামদা নিয়ে হামলা করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। প্রতিবাদে রাত দেড়টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছানুয়ার হোসেন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। তবে নৌকা সমর্থিত প্রার্থীর নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ীর একাংশ) আসনের নৌকার প্রার্থী মোরশেদ আলমের নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার রাতের আঁধারে উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের খলিফাটোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক এবং তাঁর অনুসারীদের দায়ী করেছেন নৌকার প্রার্থী। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান।

পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়ার একাংশ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের সমর্থকদের সঙ্গে নৌকার প্রার্থী শামসুল হক টুকুর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় নৌকার সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর চড়াও হয়। গতকাল দুপুরে এ হামলা হয়। প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে সেখানে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের দশ হাজার নামক গ্রামে নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। ওই ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা সাইফুল তালুকদার বুধবার রাতে সহকারী রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ মোরাদ আলীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর আগে গত রোববার রাতে দুর্বৃত্তরা ক্যাম্পটি ভাঙচুর করে।

ময়মনসিংহের নান্দাইলে বুধবার নৌকার মিছিলে পিস্তলসদৃশ দুই আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর গতকাল ভোররাতে ওই অস্ত্রসহ এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার ওয়াহিদুজ্জামান তানভীর মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে মিছিলে অস্ত্র প্রদর্শনকারী শাহ-আলম পলাতক রয়েছেন। অস্ত্র প্রদর্শন করা ওই যুবক বা তাঁর সহযোগীরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নন বলে দাবি করেছেন নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শাহান।

গোপালগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাবির মিয়ার সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার বিকেলে মুকসুদপুর উপজেলার মোচনা ইউনিয়নের নওহাটা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর তিন সমর্থক আহত হয়েছেন। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নৌকার সমর্থক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান টুটুল।

ঢাকা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাক্তার হাবিবুর রহমান তাঁর ৫৭ হাজার পোস্টার বিভিন্ন স্থান থেকে ছিঁড়ে বস্তায় ভরে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া তাঁর কর্মীদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তবে কারা পোস্টার ছিঁড়েছে, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি তিনি।
নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক এমপি আরিফ খান জয়ের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার রাতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তবে তিনি কাউকে দোষারোপ করেননি।

পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর-ইন্দুরকানী) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের এক কর্মীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। হুমকির শিকার সদানন্দ মিস্ত্রী নাজিরপুর উপজেলার গড়ঘাটা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে নৌকার কর্মীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) শফিকুল ইসলামের কর্মীদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি, ঈগল প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং প্রচার মাইক বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল এ বিষয়ে পৃথক চারটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এ আসনে ঈগলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থী ডাক-টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের বেলকুচিতে ঈগল সমর্থকদের মারধর ও অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বিকেলে মুকুন্দগাঁতী বাজার কড়িতলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিবের নেতৃত্বে ওই হামলায় নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর এবং ঈগল প্রতীকের দুই সমর্থককে পেটানো হয়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিন হাসান রকি বলেন, ঈগল প্রতীকের লোকজন নিজেদের অফিসের চেয়ার-টেবিল এলোমেলো করে আমাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।

সমকাল