জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে ফের রাজপথে নামছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। ‘একতরফা’ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ বাতিলের দাবিতে আজ জেলায় জেলায় কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি। এ ছাড়া আগামীকাল শনিবার রাজধানীসহ সব মহানগরে একই কর্মসূচি করবে তারা। পর্যায়ক্রমে বিক্ষোভ, গণমিছিল, সমাবেশসহ আরও বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দেয়া হবে। ইতিমধ্যে শনিবারের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
এদিকে বিএনপি’র পাশাপাশি সমমনা শরিক দলগুলোও একই কর্মসূচি পালন করবে। ওদিকে ভিন্ন ইস্যুতে শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আর বিএনপি’র দাবির সঙ্গে মিল রেখে আগামী রোববার দেশের সকল মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতও।
এদিকে বিএনপি’র মহাসচিবসহ দলটির নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ কারাগারে। অনেকে মামলার আসামি। অনেকে সাজাপ্রাপ্ত। অনেকের জামিন হয়নি। এসব কারণে কর্মসূচিতে ব্যাপক সমাগম ঘটানো নিয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। কুষ্টিয়াসহ অনেক জেলা বিএনপি’র সভাপতি-সেক্রেটারি দু’জনই কারাগারে। ভোটের পর ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখনো ১৮টি জেলার কার্যালয় খোলা হয়নি। তবে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই কর্মসূচিতে অংশ নেবে নেতাকর্মীরা।
নির্বাচনের পরপরই নতুন কর্মসূচি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম, গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকে সবগুলো দলই নতুন কর্মসূচি দেয়ার জন্য বিএনপিকে প্রস্তাব দেয়। শরিকদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠকের পর দু’দিনের কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এদিকে রাজধানীতে শনিবারের কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচিকে কেন্দ্রে করে ঢাকা বিভাগীয় জেলায় নেতাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির দুই সিনিয়র সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। জেলা পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, টাঙ্গাইল বাদে ঢাকা বিভাগীয় সকল জেলাগুলো কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সঙ্গে শনিবার রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিল করবে। সকল জেলা থেকে সর্বোচ্চ নেতাকর্মীদের নিয়ে এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে বিএনপি’র হাইকামান্ড থেকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের মধ্যে ৫ জনের সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের। তারা বলেন, ঢাকা বিভাগে বিভিন্ন জেলায় আজ কালো পতাকা মিছিল করতে সমস্যা হবে। এজন্য এসব জেলাগুলোকে শনিবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সঙ্গে মিছিলে আসতে বলা হয়েছে। এরমধ্যে শুধু টাঙ্গাইল জেলায় শুক্রবারই কালো পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। বাকি সব জেলাগুলোকে ঢাকায় কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
ওদিকে রাজধানীর কালো পতাকা মিছিল সফল করতে গত ২২শে জানিয়ারি ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র নেতারা। ২৩শে জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণের ৮টি জোনের নেতারা ওয়ার্ডের নেতাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করে নানা নির্দেশনা দেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদক সাইদুর রহমান মিন্টু বলেন, শনিবারের কর্মসূচি সফল করতে দক্ষিণের বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। ইতিমধ্যে নেতাকর্মীদের নানা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি’র সভাপতি এমএ মজিদ মানবজমিনকে বলেন, স্থান ভেদে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী জেলে। অনেকে জামিন নিতে পারেননি। তবে বিএনপি সবসময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই কর্মসূচি পালন করেছে।
গাজীপুর জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান মানবজমিনকে বলেন, গত ৭ই জানুয়ারি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। আর শনিবার কালো পতাকা মিছিলে সর্বোচ্চ সমাগমের মধ্যদিয়ে আরেকবার আমরা প্রমাণ করবো যে, এই সরকার জনগণের ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেনি। তারা বন্দুকের জোরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে।
ইতিমধ্যে নয়াপল্টনে কালো পতাকা মিছিলের মৌখিক অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। বেলা ২টায় মিছিলটি নয়াপল্টনস্থ বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল, মালিবাগ হয়ে মগবাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হবে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি মানবজমিনকে বলেন, এই বারের (কালো পতাকা মিছিল) কর্মসূচি একটু আলাদা। কারণ অনেক দিন পরে কর্মসূচি হচ্ছে। আর অনেক নিপীড়ন এবং নির্যাতনের পরেও আমরা আশা করছি যে, উপস্থিতি খারাপ হবে না।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান মানবজমিনকে বলেন, কালো পতাকা মিছিলের প্রস্তুতি আমাদের ভালো। লোকসমাগমও খুবই ভালো হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। আমি চট্টগ্রাম যাচ্ছি। শুক্রবার চট্টগ্রামের কালো পতাকা মিছিলে থাকবো।
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রহসনের ডামি নির্বাচন বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবিতে দেশের সকল মহানগরে আগামী রোববার বিক্ষোভ মিছিল করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে বিক্ষোভ মিছিলের জন্য তারা এখনো অনুমতি চায়নি। অনুমতি চাইবেও না। তবে যার যার অবস্থা থেকে আগামী রোববার দেশের সকল মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত।
ওদিকে শিক্ষা কারিকুলাম বাতিল ও ট্রান্সজেন্ডার প্রমোটের প্রতিবাদে আজ বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এই কর্মসূচি সফল করতে দলটি ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের এই কর্মসূচিতে উপস্থিত হতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান মানবজমিনকে বলেন, প্রস্তুতি আছে। কিন্তু কতো লোকের সমাগম ঘটবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ভালোই হবে। আর নতুন কর্মসূচির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। শুক্রবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মানব জমিন