ভোটের পর ইসলামি দল ও সংগঠনগুলো কার্যত নিষ্ক্রিয়। বিশেষ করে ভোটে অংশ নেওয়া ইসলামপন্থী দলগুলোর কোনো তৎপরতাই মাঠে দৃশ্যমান নয়। তবে চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলনসহ ভোট বর্জনকারী কয়েকটি ইসলামি দল এখন ট্রান্সজেন্ডার ও পাঠ্যপুস্তকে নানা অসংগতির অভিযোগে সভা-সেমিনার ও বিবৃতিতে সক্রিয় রয়েছে।
ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংসের অভিযোগে ঘরোয়া কর্মসূচি পালন করছে। সর্বশেষ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিনষ্টের অভিযোগ করে দলটি সরকারবিরোধী বক্তৃতা-বিবৃতিতে তৎপর রয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ইসলামী আন্দোলনের ‘দাওয়াতি পক্ষ’ রয়েছে।
দলটির নেতারা বলছেন, তাঁরা সাংগঠনিক তৎপরতার পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুধু ভোট বর্জন নয়, এই সংসদ, এই সরকারকেও বর্জন করছি। কারণ, এটা শুধু একদলীয় নয়, এক ব্যক্তির সংসদ। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ডান হাতও তাঁর, বাঁ হাতও তাঁর। অর্থাৎ সরকারও তাঁর, বিরোধী দলও তাঁর।’
রাজনীতিতে পরিচিত ধর্মভিত্তিক পাঁচটি দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। সেগুলো হলো জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস। যদিও নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন নেই। এই মুহূর্তে সব কটি দলই জাতীয় পাঠ্যক্রম নিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতিতে সরব রয়েছে।
এর বাইরে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এই মুহূর্তে কোনো কর্মসূচিতে নেই। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২৯ ডিসেম্বর সংগঠনটি কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তিসহ আরও কিছু দাবিতে ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সমাবেশ স্থগিত করা হয় অজ্ঞাত কারণে। এ নিয়ে তখন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের একটি অংশে প্রতিক্রিয়া হয়।
এ বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, তখন নির্বাচন এসে গেছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সমাবেশ করা হয়নি।
সংগঠনের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এই মুহূর্তে দুটি বিষয়ে আপত্তি তুলেছে হেফাজতে ইসলাম। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বার্ষিক সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। অন্যটি হচ্ছে জাতীয় পাঠ্যক্রমে ট্রান্সজেন্ডার মতবাদের বিষয়। হেফাজতে ইসলাম ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ওই দুটি বিষয়ে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ চাইবে। এর মধ্যে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সম্মেলনের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে হেফাজত। এটি ‘সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে করা হয়।
ভোট বর্জনকারী দলগুলো নির্বাচন ও পাঠ্যক্রম নিয়ে কমবেশি তৎপর থাকলেও ভোটে যাওয়া ইসলামপন্থী দলগুলো অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। ভোটের পর তাদের কোনো প্রকাশ্য তৎপরতা নেই। ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছয়টি নিবন্ধিত দল এবারের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়। দলগুলো হলো বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি। এর মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী ঐক্যজোট কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দল।
খেলাফত আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী (হাফেজ্জী হুজুর)। তাঁর ছেলে আতাউল্লাহ হাফেজ্জী এই দলের আমির। ইসলামী ঐক্যজোটের প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ্জী হুজুরের জামাতা প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এখন তাঁর ছেলে আবুল হাসানাত আমিনী এই দলের চেয়ারম্যান। দুটি দল ৪৯টি আসনে নির্বাচন করে ৬৮ হাজার ২৯৩ ভোট পেয়েছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) ৩৫টি আসনে নির্বাচন করে ৬৯ হাজার ৩৩ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯ আসনে ৫৬ হাজার ৫৬৬ ভোট, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন (ফুলের মালা) ৩৭ আসনে ২৪ হাজার ৬৮৩ ভোট এবং জাকের পার্টি আটটি আসনে ৮ হাজার ৩০৩ ভোট পায়।
এবার ইসলামপন্থী ছয়টি দল যে ভোট পেয়েছে, তা দলগুলোকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। ছয়টি দলই সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ভোটের পর এমন ফলাফল নিয়ে দলগুলোর নেতারা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও ব্যক্তিগত আলোচনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
prothom alo