ভোটের আগে টানা কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি

৭ই জানুয়ারি নির্বাচন সামনে রেখে আগামী সপ্তাহে টানা কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি।  একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে ভোটবিরোধী অবস্থানে থাকবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।

আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত টানা কর্মসূচিতে যাচ্ছে তারা। অসহযোগের পাশাপাশি হরতাল-অবরোধ দেয়ার চিন্তা করছে দলটির হাইকমান্ড। ইতিমধ্যে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ১লা জানুয়ারি থেকে ৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এ ছাড়া সরকারি ও আধা-সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে ‘জনতার মঞ্চের’ আদলে আন্দোলনের নতুন মঞ্চ গড়ার চেষ্টা চলছে। সেলক্ষ্যে কাজ করছে জাতীয়তাবাদী সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নগুলো।

এদিকে তিনদিনের লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি শেষে আজ বিকালে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।  নতুন কর্মসূচি প্রণয়নে গতকাল সন্ধ্যায় দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। এরপর জেলার নেতাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

ইতিমধ্যে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। অসহযোগের পক্ষে জনমত গড়তে দু’দফা দেশব্যাপী গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছেন দলটির নেতারা। বিএনপি’র আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে একই কর্মসূচি পালন করছেন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা ৩৬টি দল ও জামায়াত।

এ ছাড়া বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ইসলামী আন্দোলনও ভোট বর্জনের আহ্বানে প্রচারপত্র বিলি কর্মসূচি পালন করছে। 

বিএনপি’র সিনিয়র এক নেতা মানবজমিনকে বলেন, বিএনপিসহ আন্দোলনরত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর চেষ্টা থাকবে ১৪ সালের মতো এবারের নির্বাচনকে ভোটারবিহীন করা। ভোটকেন্দ্রগুলো যাতে ফাঁকা থাকে সেই চেষ্টা করবে বিএনপি। গণসংযোগের পাশাপাশি ঘোষিত কর্মসূচি কঠোরভাবে পালন করা হবে। দলের সর্বশক্তি নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। কেন্দ্র থেকে দলের নেতাকর্মীদের সেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

শরিক দলের এক শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে জানান, থার্টিফার্স্ট নাইট ও  ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে রোববার ও সোমবার লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ এবং মঙ্গলবার থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত তিনদিন অবরোধ ও তিনদিন হরতাল দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। হরতাল অবরোধের ঘোষণা ভিন্ন নামেও আসতে পারে।

এদিকে গতকালও একতরফা নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতারা। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান লিফলেট বিতরণ করেন। নোয়াখালীর মাইজদীতে ব্যবসায়ী ও পথচারীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেন সদ্য কারামুক্ত বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান। এ ছাড়া সকালে শান্তিনগর বাজারে বিএনপি’র সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, মিরপুর ১১ নম্বর কাঁচাবাজারে পল্লবী থানা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা, পোস্তগোলা লৌহ মার্কেট থেকে পোস্তগোলা রেলগেট পর্যন্ত শ্যামপুর থেকে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা,  দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকা ও আশপাশে যুবদল কেন্দ্রীয় জনসংযোগ এবং প্রচারপত্র বিতরণ করেন। খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি, ইস্কাটন (বাংলামোটর) এবং হাতিরঝিল এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেন ছাত্রদল নেতারা। এদিকে শান্তিনগর মোড়, মালিবাগ ও মৌচাক এলাকায় গণঅধিকার পরিষদ (নুর), বিজয়নগরে (এবি পার্টি), মালিবাগ হোসাফ টাওয়ারের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, শান্তিনগর, কাকরাইল এলাকায় ১২ দলীয় জোট  প্রচারপত্র বিলি করে। এদিকে আজও বিএনপি ও সমমনা দলের নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করবে।

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন, ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়তে আমরা লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করছি। ইতিমধ্যে আমাদের আহ্বানে সাধারণ মানুষ সাড়া দিয়েছে। আগামীতেও আমাদের অবিরাম প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ‘একতরফা ডামি নির্বাচন’ প্রত্যাখ্যানে জনগণকে সচেতন করতে রাজপথেই থাকবে বিএনপি।

মানব জমিন