ভোটার সংখ্যা বেশি দেখাতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো এগিয়ে আসলে বিস্মিত হবেন না

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল এবং সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন বলে যাকে দাবি করা হয়েছে তাতে ভোটারদের অংশগ্রহণের মাত্রা কি সেটা সারা দেশ থেকে পাওয়া খবরেই স্পষ্ট। শুন্য ভোটকেন্দ্রের ছবি এবং ভিডিওই শুধু দেখা যাচ্ছে তা নয়, ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন আসন থেকে প্রার্থীরা জালিয়াতি হচ্ছে এই অভিযোগে নিজেদের ‘প্রত্যাহার’ করে নিচ্ছেন, কেউ কেউ বলছেন তারা ভোট ‘বর্জন’ করছেন। স্মরণ করা দরকার যে, এই প্রার্থীরা সরকার বিরোধী কোনো দলের লোক নয়, তারা সরকারের আশ্বাসে ‘বিশ্বাস’ রেখে, বিএনপিসহ ১৬ দলের আহবান উপেক্ষা করে, ‘নির্বাচনে’ যোগ দিয়েছিলেন। এটাও স্মরণ করা দরকার যে, ৭ জানুয়ারির আগেই ২০১৪ সাল থেকে ক্ষমতাসীন দলের ‘নির্ধারিত’ দল জাতীয় পার্টির ২৬৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ২২৫ জন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলো।

জনশুণ্য ‘শান্তিপূর্ণ’ ঢাকার বাইরেও অধিকাংশ এলাকায় লোকজনের দেখা মিলছে না। সকালে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন তার কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্ট ছাড়া কাউকে দেখেননি, তা স্বত্বেও সকালেই একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে, ৫১ শতাংশ ভোট পড়বে। কয়েক ঘন্টা পরে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করা হয়েছে যে প্রথম ৪ ঘন্টায় ভোট পড়েছে ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। পুলিশের আইজিপি বলেছেন, ‘পর্যাপ্ত ভোটার উপস্থিতির খবর পাচ্ছি।’ এগুলো হচ্ছে দিন শেষে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভোট পড়েছে বলে দাবি করার পটভূমি তৈরি করা।

জনগণের প্রত্যাখ্যাত ‘নির্বাচনে’ ভোটারের সংখ্যা বেশি দেখানোর ইতিহাস বাংলাদেশে আছে। ১৯৮৮ সালে সব দলের বয়কট করার পর নির্বাচনে ৫১ দশমিক ৮১ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করা হয়েছিলো; ১৯৮৬ সালে প্রধান প্রধান দলের বয়কট করা নির্বাচনে সরকারি হিসেবে বলা হয়েছিলো ৬০ দশমিক ৩১ শতাংশ  ভোট পড়েছে । এইসব হিসেব প্রচারের জন্যে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো যদি আগ বাড়িয়ে এগিয়ে আসে তবে বিস্মিত হবেন না – এই কথিত নির্বাচনে বাংলাদেশের ১৫ জন মালিক/সম্পাদক ‘প্রার্থী’ হয়েছেন।

[লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট।

লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া]