ভোটাধিকারই অর্থনৈতিক সংকট মুক্তির পথ

চলমান অর্থনৈতিক সংকট রাজনৈতিক সংকটের সঙ্গে জড়িত। এই সংকট থেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা। অর্থনীতির বেহাল দশা একদিনে তৈরি হয়নি। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট শিগগির কাটবে না। আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়বে। একতরফা, সাজানো ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হলে রাষ্ট্রে জবাবদিহি থাকে না, লুটপাট বেশি হয়। খারাপ নির্বাচন হলে রপ্তানিতে প্রভাব পড়বে।

বৃহস্পতিবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের ‘দমন, আন্দোলন ও অর্থনীতি: বাংলাদেশের পথরেখা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে আলোচকরা এসব কথা বলেছেন। সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক আলী রীয়াজ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ, মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, সূচনা বক্তব্য দেন মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান।

সরকারের উদ্দেশ্যে আলী রীয়াজ বলেছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের হওয়ার একটাই পথ। সবাইকে ভোট দিতে দিন। অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা ছাড়া অংশগ্রহণমূলক অর্থনীতি হবে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি হবে না। অর্থনৈতিক সংকটকে বিচ্ছিন্ন ভাবতে পারবেন না। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাই সংকট থেকে বের হওয়ার পথ।

দুর্নীতিকে রাজনৈতিক অবক্ষয়ের ফল বলে মনে করেন আহসান মনসুর। তিনি বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সহজে দূর হবে না। কোনোভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও যারা অপকর্ম করেছে, তাদের ঝেঁটিয়ে বের করতে পারবে না। কারণ, তাদের দিয়েই নির্বাচনে জিতে আসবে।  সরকার শুধু বললে হবে না, নির্বাচনের পরে সব ঠিক করে ফেলব। খারাপ নির্বাচন হলে রপ্তানি ক্ষতিতে পড়বে। পশ্চিমা অর্থনীতির অবস্থাও ভালো নয়। রপ্তানি ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। যদিও এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।

শ্রমিকদের মজুরির আন্দোলন সরকার ঠিকভাবে সামাল দিতে পারেনি বলে মনে করেছেন আহসান মনসুর। তিনি বলেছেন, ছয় মাস আগেই মজুরি নির্ধারণ করে বিষয়টিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে পারত। নির্বাচন আসন্ন হওয়ায় শ্রমিকরা দাবি শক্তিশালী করতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হাত মেলাতে পারে। শ্রমিক আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করলে, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। রপ্তানি কমবে। গুলি করে আন্দোলন মোকাবেলা সমাধান নয়।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন চান না জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সময় শেষ হয়ে আসছে। কীভাবে রাজনৈতিক সমঝোতায় হতে পারে, তা চিন্তা করতে হবে। সরকার ও বিরোধী দুই পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। লন্ডন থেকে কলকাঠি নড়ুক, চাই না। সুন্দর নির্বাচন হোক।

২৮ অক্টোবর সহিংসতার তদন্ত ছাড়াই পুলিশ বিএনপিকে দায়ী করছে বলে অভিযোগ করেছেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, ঘটনা না ঘটলেও গায়েবি মামলা করছে। পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারে ক্ষুন্ন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রীয় চরিত্র হারাচ্ছে, সরকারি দলের ইচ্ছাপূরণের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এইসব প্রতিষ্ঠান ও বাহিনী দিয়ে কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে? আরেকটি সাজানো নির্বাচনের দিতে অগ্রসর হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম যদি ভূমিকা রাখতে না পারে. তাহলে সবাই মিলে গণআত্মহত্যার প্রস্তুত হচ্ছে। শুধু গণতন্ত্র নয়, অর্থনৈতিক বিকাশেরও আত্মহত্যা হবে।

বাংলাদেশে যেভাবে সংবিধান লঙ্ঘন হয়, তা আর কোথাও হয় না বলে দাবি করেছেন ইকতেদার আহমেদ। তিনি বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দলীয় রূপ ধারণ করেছেন। তাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সচেষ্ট। গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে ১০ দিন পর আদালতে উপস্থাপন করলেও প্রশ্ন করার কেউ নেই। এস আলম গ্রুপের বিষয়ে আদালতের যে আদেশ এসেছে, তা দেশ ও জাতির জন্য দুঃখজনক।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট রাজনৈতিক সংকটের সঙ্গে জড়িত। রাজনীতি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করায়, তারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।