ভারত ম্যাচের আগে সাকিবকে নিয়ে ধোঁয়াশা

শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মাঠে আসতে হয় ক্রিকেটারদের। গতকাল বিকেলে এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে নির্ধারিত সময়ে সংবাদ সম্মেলনেই যোগ দিতে পারেনি দল। আধা ঘণ্টা বাড়িয়ে সাড়ে ৫টার সংবাদ সম্মেলন ৬টায় নেওয়া হলেও ফেল। ২৫ মিনিট দেরিতে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ম্যানেজার রাবীদ ইমাম। অনৈচ্ছিক এ বিলম্ব পুনের জ্যামের কারণে। পথের জ্যাম ঠেলে ক্রিকেটাররা মাঠে পৌঁছাতে পারলেও একাদশে জ্যাম ঠিকই লেগে রয়েছে। ভারতের বিপক্ষে সাকিব আল হাসান আজ খেলবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দল।

সংবাদ সম্মেলনে হাথুরুসিংহে জানান, এমআরআই রিপোর্ট দেখে সকালে নেওয়া হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। যে স্ক্যান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় করা যেত, সেটা বুধবার দুপুরে করতে যাওয়া কৌশল নয় তো? সাকিবের খেলা না-খেলার বিষয়ে একটু ধোঁয়াশা রেখে দিতে! এ রকম ভাবার কারণও আছে। নেটে ঘণ্টাখানেক ব্যাট করে ক্রিকেটার যেখানে নিজেকে ফিট ঘোষণা করেছেন, টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে এমআরআই রিপোর্ট। শেষমেশ অনেক ঘাঁটাঘাঁটির পর বাংলাদেশ দলের ভেতর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় একজন এ রকম একটি বার্তা দিলেন– ‘আশা করি, খেলবে।’ তবে পিচ্ছিল আউট ফিল্ডের কারণে মেডিকেল টিম ছাড়পত্র নাও দিতে পারে।

বিশ্বকাপে আসার পর থেকে যেভাবে রহস্য করে চলছে বাংলাদেশ দল, তাতে বিশ্বাসের জায়গাটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। দু’দিন আগেও দল থেকে বলা হচ্ছিল, পুনে থেকে ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে থাকবেন সাকিব। চোটের বিষয়টি ইস্যু হওয়ায় গতকালও তাঁকে পাওয়া হলো না সাংবাদিকদের। পথে হলো দেরির আড়ষ্টতায় কাঁচুমাচু হয়ে সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেওয়া কোচের বার্তা ছিল, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) অনুশীলনে চাঙ্গা ছিল। দৌড়ঝাঁপ করেছে, ব্যাটিং সেশনও। সেদিক থেকে সে ভালো। দেখে কোনো সমস্যা মনে হয়নি। তবে আজ স্ক্যান করা হয়েছে, চোট কতটা সেরেছে সেটা দেখার পর সিদ্ধান্ত। বিষয়টি পুরোপুরি খেলোয়াড় বা আমার হাতেও থাকে না। এ ধরনের ক্ষেত্রে মেডিকেল টিম সিদ্ধান্ত নেয়। কাল (আজ) সকালে বাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পুরো ফিট না হলে খেলবে না।’

ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ দলের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ম্যাচে সাকিব না খেললে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে বাংলাদেশের। চোট নিয়ে খেলে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলে আরও বড় ক্ষতি। যে কারণে সাকিব ইস্যুতে ঝুঁকি নিতে চায় না কেউ। বাঁহাতি অলরাউন্ডারের না খেলা মানে ভেঙেচুরে একাদশ সাজানো। তিনি খেললেও এ ম্যাচের একাদশে পরিবর্তন করা হবে। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও জানিয়েছেন বোলিং বিভাগে পরিবর্তন করবেন। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সাকিব না খেললে কপাল খুলবে শেখ মেহেদীর। বেশি ভালো হবে সাকিব খেলতে পারলে। ভারতের বিপক্ষে দু’জন বাঁহাতি স্পিনার থাকলে বোলিং পরিবর্তন করা সহজ হবে। কারণ, ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের সেরা পাঁচ ব্যাটার ডানহাতি। স্পিন বিভাগ যেমনই হোক, পেস ইউনিটে মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম থাকছেন। পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ) স্টেডিয়ামের ব্যাটিং স্বর্গে ভালো করার স্বার্থে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে একটি পরিবর্তন আনা হতে পারে। লিটন কুমার দাসের জুটি হতে পারেন মেহেদী হাসান মিরাজ বা নাজমুল হোসেন শান্ত। তরুণ তানজিদ হাসান তামিম টানা তিন ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে একাদশে রাখার যৌক্তিকতা হারিয়েছে। বরং অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহকে রেখে মিডলঅর্ডার থেকে একটি করে পজিশন নিচে আনা হলে ভালো করবে। এখানেই শেষ নয়, প্রতিপক্ষ ভারত হওয়ায় পেস ইউনিটে তানজিম হাসান সাকিবকে রাখার দাবি উঠেছিল টিম মিটিংয়ে। এ ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আজ। এশিয়া কাপে ভারতকে ছয় রানে হারানোর নায়ক সাকিব আল হাসান হলেও পার্শ্বনায়ক ছিলেন তরুণ তানজিম সাকিব।

একাদশ এবং আরও কিছু বিষয় নিয়ে ম্যাচের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত আলোচনার সুযোগ থাকবে। এগুলো নিয়মিত একটি প্রক্রিয়া। আসল কথা হলো, জয়ের ছন্দে ফেরা। বাংলাদেশ জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডের কাছে বাজেভাবে হেরে হতাশা করেছে সমর্থকদের। ঢাকায় যোগাযোগ করা হলে অনেকেই বলেছেন, খেলা দেখা থেকে বিরত থাকবেন তারা। সাকিবদের আরেকটি জয় না পাওয়া পর্যন্ত বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখবেন না। জানি, পুনেতে আজ ম্যাচ শুরু হলে অভিমানের সব বরফ গলে যাবে। কারণ, বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা উন্মুখ হয়ে আছেন ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপে উন্মাদনা ফেরাতে। ভারতীয় সাংবাদিকরা সে জয়কে আপসেট বললেও কিছু যায় আসে না। গত ১০ মাসে ভারতের বিপক্ষে চার ম্যাচ খেলে তিনটিতে জেতা দল যে কোনো দিন জিততে পারে।

হাথুরুসিংহেও ভরা সংবাদ সম্মেলনে জানালেন, নিজেদের দিনে বিশ্বের যে কোনো দলকে হারাতে পারে বাংলাদেশ। কিছুটা কৌশলী উত্তর হলেও ভারতকে হারানোর একটা প্রচ্ছন্ন হুমকি রয়েছে কোচের কথায়। পুনেতে আজ নিজেদের দিন বানাতেই তো তিন দিনের  বিশ্রাম দেওয়া। এক দিন কঠোর পরিশ্রম করে পরের দিন ঐচ্ছিক অনুশীলন রাখার পেছনেও রয়েছে ফুরফুরে হয়ে খেলতে নামার সুযোগ করে দেওয়া। গতকাল ঐচ্ছিক অনুশীলনে একাদশের বেশির ভাগ ক্রিকেটারই ছিলেন না। মুশফিকুর রহিম, তানজিদ হাসান তামিম, হাসান মাহমুদ, তানজিম হাসান সাকিব ও শেখ মেহেদী এসেছিলেন মাঠে। এই পাঁচজনের যারাই আজ খেলবেন, আশা করা যায় বিশ্বকাপ জাগিয়ে তোলার স্লোগান নিয়ে ঝাঁপাবেন তারা।