ভারত-মালদ্বীপের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনার আশঙ্কা

মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সৈন্যদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কড়া বার্তা দিয়েছেন দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট ও চীনপন্থী নেতা মোহাম্মদ মুইজ্জু। তিনি বলেন, ‘আমরা মালদ্বীপের মাটিতে কোনো বিদেশি সামরিক বুট চাই না। আমি মালদ্বীপের জনগণকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এবং আমি প্রথম দিন থেকেই আমার প্রতিশ্রুতি পালন করে যাব।’ খবর-বিবিসি

মুইজ্জু গত মাসে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই মালদ্বীপ থেকে ভারতের সৈন্যদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তিনি আগামী নভেম্বর মাসের শেষ দিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন।বিবিসিকে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি তার বিজয়ের কয়েকদিন পরই ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে খুব স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, মালদ্বীপে থাকা প্রত্যেক ভারতীয় সেনা সদস্যকে সরিয়ে নিতে হবে।

কূটনৈতিক উত্তেজনার আশঙ্কা: মালদ্বীপ দীর্ঘদিন ধরে ভারতের প্রভাবে রয়েছে। এখন চীনপন্থী মুইজ্জু’র এ আহ্বানে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত মাসে মুইজ্জু যখন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন, তখন এটি ভারতের জন্য একটি সতর্ক হিসেবে দেখা হয়েছিল।

ভারত মহাসাগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ পর্যবেক্ষণের জন্য কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থিত এ দ্বীপরাষ্ট্রকে পাশে রাখতে চায় ভারত। এজন্য দেশটিকে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে নয়া দিল্লি। এখন যদি ভারতের সৈন্যদের চলে যেতে বাধ্য করা হয় তবে তা হবে দিল্লির জন্য একটি বড় ধাক্কা।

মুইজ্জুকে সমর্থনকারী জোটভুক্ত দল ও নেতারা সলিহের ভারত নীতিকে মালদ্বীপের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে থাকেন। মুইজ্জুর জোট চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পক্ষে। চীন দেশটির অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ঋণ এবং অনুদানের আকারে মালদ্বীপে কয়েক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ ২০১৮ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মালদ্বীপকে দিল্লির প্রভাবের কাছাকাছি এনেছিলেন। তিনি দিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্য উদ্যোগী হন। দেশটির সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করেন এবং মালদ্বীপের ভূখণ্ডে ছোট্ট সামরিক বাহিনী পরিচালনায় ভারতকে অনুমতি দেন।

পূর্বসূরি ইয়ামিন আবদুল গাইউমের নীতি থেকে বের হয়ে এসে সলিহ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের এসব উদ্যোগ নেন। ইয়ামিন ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন এবং চীনের সঙ্গে মালদ্বীপের ঘনিষ্ঠতা বাড়ান। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় মালদ্বীপের প্রধান প্রধান অবকাঠামোগত প্রকল্পে সহায়তা আনেন।

এবারের ভোটে এশিয়ার ছোট্ট দেশ মালদ্বীপে ভারত ও চীনপন্থি শিবিরের বিভাজন বেশ স্পষ্ট। ভারত মহাসাগরের এই দেশটিতে ভারত ও চীন তাদের প্রভাব খাটাচ্ছে বেশ জোরালোভাবে। প্রায় পাঁচ লাখ জনসংখ্যার এ দ্বীপরাষ্ট্র কৌশলগত দিক থেকে এমন জায়গায় অবস্থিত, যেটি বাণিজ্য ও নিরাপত্তা উভয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রও মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। গত মাসে প্রথমবারের মতো আমেরিকা পেশাদার কূটনীতিক হুগো ইউ-হো ইয়নকে মালদ্বীপে আবাসিক রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র সরকার শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত দেশটির দূতাবাসের মাধ্যমে মালদ্বীপের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখত।