ভারত বাংলাদেশের শীতল কুটনৈতিক টানাপোড়ন এখনও অব্যহত।

ANALYSIS - Bangladesh-India diplomatic ties passing through very critical  courses
30 July 2022
ভারত বাংলাদেশের বন্ধুত্ব অতী প্রাচীন।স্বাধীনতার পর থেকে সেই বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় ভাবে ঠেকেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের ভারতের সাহায্য অনস্বীকার্য। তখনকার সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, সাধারণ মানুষের আশ্রয় সহ যাবতীয় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো প্রতিবেশী দেশ ভারত।
কিন্তু,বিজেপি সরকার আগমনের পর সেই বন্ধুত্বের সুর ঠিক থাকলেও সাহায্যের মনোভাব আর আগের মতো নেই।২০০১ সাল থেকেই ভারতের সাথে কনফ্লিক্টের সূচনা।রৌমারি সিমান্তে তৎকালীন বিডিআর এর কাছে নাকানিচুবানি খেয়েছিলো ভারত।তারপর আবার দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের ব্যাক্তিদের মিটিংয়ে পরিস্থিতি শীতল হয়েছিলো।
বিজেপি সরকারের আগমনের পরই অভ্যন্তরিন পরিস্থিতি দিন দিন ঘোলাটে হচ্ছে।মুখে বন্ধুত্বের কথা বললেও এখন খুব একটা কাজে মিল পাওয়া যাচ্ছে না।বাংলাদেশ পূর্বে ভারত নির্ভর হওয়াতে তারা হঠাৎ ই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছিলো। যার ফলস্বরূপ আমাদের অভ্যন্তরিন বাজার ধর অস্থিতিশীল হয়ে পড়তো।
৩/৪ বছর আগেই তারা হঠাৎ করে দেশে গরু রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।যার ফলে দেশে হঠাৎ করেই গরুর অপর্যাপ্ততা দেখা দেয়।ঐ একটা বছর দেশের মানুষ কষ্ট করলেও তার পর পরই আমাদের দেশীয় খামারীরা গরুর পালন ব্যাপক ভাবে শুরু করে।ফলস্বরূপ আমরা এখন গবাদিপশু পালনে এবং নিজেদের চাহিদা পূরনে আত্মনির্ভরশীল।
গত ২ বছর আগেও একই ভাবে পেঁয়াজ রপ্তানিতে তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো।বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছিলো।কিন্তু আমাদের কৃষকরা বসে থাকেনি।এখন সিংহভাগ পেঁয়াজের চাহিদা আমরা নিজেরাই পূরন করে থাকি।দাদাদের নিষেধাজ্ঞা, আমাদের জন্য আশির্বাদ হয়ে গেছে।
এই বছরের শুরুতেই তারা নিজেদের অভ্যন্তরিন ঘাটতি দেখিয়ে দেশে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়।তার মধ্যে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে গমের বাজারে আগুন।বিশ্বের সাপ্লাই চেইন এখন আগের মতো নেই।এমন একটা কঠিন সময়ে তারা আমাদের দেশে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়।এই হচ্ছে বন্ধুত্বের উদাহরণ।
এমনকি অনেক বছর ধরে তিস্তা চুক্তি হলেও এখনও বাস্তবায়নের চেহারা দেখেনি বাংলাদেশ। খরা মৌসুমে পানি আটকে রাখা,ভারী বর্ষায় গেট খুলে দেওয়ার ফলে উত্তরাঞ্চলের কৃষকেরা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।মুখে বন্ধুত্ব থাকলেও কাগজে কলমে এখন আর তার অস্তিত্ব নেই।
এইবার আসি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে :
একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরে বাংলাদেশ আর তাদের দিকে চেয়ে থাকেনি।সরকার এখন কিছুটা নিজের বুঝ বুঝতে শিখেছে।
সর্বনাশা তিস্তা শাসন নিয়ে চীনের সাথে চুক্তি চলমান। সব ঠিক থাকলে খুব শীগ্রই দেশের উত্তরাঞ্চল তিস্তার আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাবে।এই প্রকল্পেও আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রের বিরোধিতা চলমান।
বাংলাদেশ  যখন চীন থেকে সাবমেরিন কিনিতেছিল তখন আমাদের জনৈক বন্ধুরাষ্ট্র তার বিরোধিতা করেছিলো।কিন্তু বাংলাদেশ তার তোয়াক্কা না করে ঠিকই সাবমেরিন কেনে।গতবছর তার কাউন্টার হিসেবে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার কে ফ্রি তে সাবমেরিন গিফট করে।এইটা এক প্রকার কূটনীতিক কাউন্টার।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তারা করে দিতে চাইলেও তারা কাজ পায় নি।তবে শেষমেশ কনস্ট্রাকশন সাইটের কাজ তারা পেলেও মেইন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ রাশিয়া পায়।এইটা তাদের জন্য কূটনীতিক ফেইল।
সাবমেরিন কেনার পর তার বার্থিং এর জন্য সরকার সাবমেরিন বেজ বানানোর ঘোষণা দেয়।শত চেষ্টা করেও সেটার কাজ পায়নি ভারত।চীনের সহায়তায় বাংলাদেশের একমাত্র সাবমেরিন বেজের কাজ চলমান।এতো এতো মেগা প্রজেক্ট আর গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক অপারেশনে ভারত এখন পিছিয়ে। বন্ধু এখন আর আগের বন্ধু নেই।
RAB মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ার পর বাংলাদেশ ভারতের সহায়তা চাইলেও পায়নি।তারা বরাবরই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে চলছে।
শুধু বাংলাদেশ নয়।ভারতের সব প্রতিবেশী এমন চীন মুখী। এটাই এখন তাদের বড় চিন্তার কারন।এইভাবে আর বেশীদিন চলতে থাকলে ভারত তার প্রতিবেশীদের উপর একচ্ছত্র অধিকার হারাবে,তা আর বেশী দূরে নেই।