ভারত ও চীনের প্রতিযোগিতা বাংলাদেশে প্রভাব ফেলছে

ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে সেমিনার

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়াল অ্যাডমিরাল (অব:) খুরশীদ আলম বলেছেন, ইন্দো-প্যাসেফিক নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগিতা থেকেই নানা ধরনের কৌশল ঘোষিত হয়েছে। ভারত ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতা এর অন্যতম, যা বাংলাদেশের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। এ অঞ্চলের দেশ হিসেবে নানাবিধ পরিবর্তনের সাথে আমাদের খাপ খাওয়াতে হয়। আর এ জন্যই বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসেফিক আউটলুক (আইপিও) ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, ইন্দো-প্যাসেফিকের পরিস্থিতির ওপর বাংলাদেশ কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তা নির্ভর করেছে আমাদের সক্ষমতার ওপর। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে, আমরা তা পারব না। রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতি এ ক্ষেত্রে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের আইপিও এখনো পর্যন্ত পশ্চিমা দেশ বা চীন কোনো দিক থেকে সমালোচনার সম্মুখীন হয়নি। তবে এর ভবিষ্যৎ নির্ভর করেছে বাস্তবায়নের ওপর।

গতকাল রাজধানীর নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (এনএসইউ) আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খুরশীদ আলম এ সব কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকেলস। এনএসইউ’র সেন্টার ফর পিস স্টাডিস সেমিনারের আয়োজন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম।
খুরশীদ আলম বলেন, বাংলাদেশের মুক্ত, অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসেফিক আউটলুকের (আইপিও) লক্ষ্য সবার সমন্বিত উন্নয়ন। বঙ্গোপসাগরে উপকূলে বাংলাদেশের অবস্থান ইন্দো-প্যাসেফিক নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে ঢাকাকে নিয়ে এসেছে। বঙ্গোপসাগরে অবাধ যাতায়াতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভূ-রাজনীতির মনোযোগ আকর্ষণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ ইন্দো-প্যাসেফিক নিয়ে ঘোষিত কৌশলে তাদের অগ্রাধিকারগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে। বিস্তৃত পরিসর বোঝাতে বাংলাদেশ এটিকে নীতিগত অবস্থান বা আউটলুক বলছে, কৌশল নয়।

লিলি নিকেলস বলেন, গত নভেম্বরে কানাডা ১০ বছর মেয়াদি ইন্দো-প্যাসেফিক কৌশল (আইপিএস) ঘোষণা করেছে, যার সাথে বাংলাদেশের আইপিও’র সামঞ্জস্য রয়েছে। এই কৌশল কানাডার পররাষ্ট্রনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন। ইন্দো-প্যাসেফিক অঞ্চল কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্রের পরই এর অবস্থান। কানাডায় প্রতি পাঁচজনের একজন এই অঞ্চল থেকে এসেছে। আইপিএসে কানাডা মুক্ত, গণতান্ত্রিক, আইনভিত্তিক ও বহুমাত্রিক বৈশ্বিক ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। আমরা নিজস্ব স্বার্থ ও মূল্যোবোধের ভিত্তিতে চীনসহ বিশ্বের যেকোনো দেশের সাথে কাজ করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, কানাডার আইপিএসের পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে। এগুলো হলো, শান্তি ও নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, টেকসই ও সবুজ ভবিষ্যৎ, জনগণের মধ্যে সম্পৃক্ততা এবং সক্রিয় ও দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও এনএসইউর অধ্যাপক শহীদুল হক বলেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের তৈরি করা কৌশলে ইন্দো-প্যাসেফিক ও চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের (বিআরআই) মধ্যে সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর ঘোষিত আউটলুকে বাংলাদেশের উন্নয়নের সাথে ইন্দো-প্যাসেফিকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সেদিক থেকে ইন্দো-প্যাসেফিক নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে। তিনি বলেন, সরকার এখন পর্যন্ত বলে আসছে ইন্দো-প্যাসেফিক নিয়ে কোনো সামরিক জোটে বাংলাদেশ যোগ দেবে না। তবে এই অবস্থান কতদিন ধরে রাখা সম্ভব হবে সেটাই দেখার বিষয়। আইপিএসে ভূ-অর্থনীতির চেয়ে ভূ-রাজনীতি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বিশ্ব এখন বহুকেন্দ্রিক যুগে প্রবেশ করেছে। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে উত্তেজনা দেখছি। এর আগে আমরা এককেন্দ্রিক ও দ্বিকেন্দ্রিক বিশ্ব দেখেছি। বহুকেন্দ্রিক বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকতে পেশাদারিত্বের বিকল্প নেই।
সেমিনারে প্যানেলিস্ট হিসেবে আরো ছিলেন পল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ই-মাইক্রোগ্রাফের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নূর মাহমুদ খান এবং করপোরেট মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান মমতাজুল আহমেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন এনএসইউ’র অধ্যাপক তৌফিক হক।