মানবজমিন ডেস্ক
(১৩ ঘন্টা আগে) ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:৫৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৭:১৩ অপরাহ্ন
ভারতে বিবিসির অফিসগুলোতে তল্লাশি চালিয়েছে আয়কর কর্তৃপক্ষ। তদন্তের অংশ হিসেবে এই তল্লাশি চালানো হয়েছে। এ অভিযানে পূর্ণ সহযোগিতার কথা জানিয়েছে বিবিসি। কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে একটি সমালোচনামুলক তথ্যচিত্র প্রকাশ হয় বৃটেনে। এরপরই বিবিসির নয়া দিল্লি ও মুম্বই অফিসে এই তল্লাশি চালানো হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে জর্জ রাইট একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ২০০২ সালে গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তখন ওই রাজ্যে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা হয়। সেই দাঙ্গায় মোদির ভূমিকা নিয়ে তৈরি হয়েছে ওই তথ্যচিত্র।
বিবৃতিতে বিবিসি বলেছে, আমরা আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব এই পরিস্থিতির সমাধান হয়ে যাবে।
‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ তথ্যচিত্রটি যদিও শুধু বৃটেনে টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে, কিন্তু ভারতে এর অনলাইনে প্রচার বা শেয়ারিং বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার। ভারত সরকারের বক্তব্য, তথ্যচিত্রটি ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতায়’ তৈরি ‘ভারত-বিরোধী প্রোপাগান্ডা ও আবর্জনা’।
গত মাসে ওই তথ্যচিত্র দেখার জন্য জড়ো হওয়া একদল শিক্ষার্থীকে আটক করে দিল্লি পুলিশ। বিরোধী কংগ্রেস পার্টির সাধারণ সম্পাদক কেসি ভেনুগোপাল বলেছেন, মঙ্গলবারের এই তল্লাশি হতাশা তৈরি করছে এবং মোদি সরকার যে সমালোচনাকে ভয় পায়, সেটাই দেখিয়ে দিচ্ছে। তিনি টুইট করেছেন, আমরা এই ভয় দেখানোর কৌশলকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানাই। এই অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী মনোভাব আর চলতে পারে না। তবে মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির একজন মুখপাত্র গৌরভ ভাটিয়া বিবিসিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত এমন একটি দেশ- যা সব সংস্থাকেই সুযোগ দেয়। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা বিষ না ছড়ায়।
বিবিসির ওই তথ্যচিত্রে দেখানো হয়, মোদি কীভাবে রাজনীতিতে এসেছেন এবং ভারতীয় জনতা পার্টিতে কীভাবে ক্রমান্বয়ে উপরে উঠে পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিবিসির সংগ্রহ করা একটি অপ্রকাশিত প্রতিবেদন সেখানে তুলে ধরা হয়েছিল, যেখানে ধর্মীয় দাঙ্গা চলার সময় মোদির কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল।
হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি রেলে আগুন লাগানোর পর অনেক মানুষ হতাহত হলে ওই দাঙ্গা শুরু হয়। পরের কয়েকদিনের সহিংসতায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন, যাদের বেশিরভাগ মুসলিম। বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মোদি সে সময় ‘দায়মুক্তির পরিবেশ’ তৈরি করার জন্য ‘সরাসরি দায়ী’ ছিলেন, যা সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছিল। তখনকার বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্র’র নির্দেশে করা একটি তদন্তের অংশ হিসাবে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, ‘সহিংসতার মাত্রা প্রকাশিত খবরের চেয়ে অনেক বেশি ছিল’ এবং ‘দাঙ্গার লক্ষ্য ছিল হিন্দু এলাকাগুলো থেকে মুসলমানদের নির্মূল করা’।
মোদী দীর্ঘদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন এবং দাঙ্গার জন্য কখনো ক্ষমা চাননি। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি প্যানেলও বলেছে, তার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বিবিসি বলেছে, ভারত সরকারের কাছে তথ্যচিত্রে তাদের বক্তব্য দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা রাজি হয়নি। সেখানে ‘নিরলস গবেষণা করা হয়েছে’ এবং ‘অনেকের বক্তব্য নেয়া হয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শী এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং বিজেপির লোকজনের প্রতিক্রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের মতামত তুলে ধরা হয়েছে।’
ভারতের এডিটরস গিল্ড বলেছে, এই তল্লাশির ঘটনায় তারা ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। এসব ‘সরকারি নীতি বা সংস্থাগুলোর সমালোচনাকারী সংবাদ মাধ্যমগুলোকে ভয় দেখানো এবং হয়রানি করতে সরকারি সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করার অব্যাহত প্রবণতার অংশ’। পার্লামেন্টে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কাছে তথ্যচিত্রের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন , ‘পৃথিবীর কোথাও আমরা নির্যাতনকে সমর্থন করি না’। তবে তিনি আরও যোগ করেছেন যে, যেভাবে মোদির ‘চরিত্রায়ন করা হয়েছে, তার সঙ্গে তিনি একমত নন’।
ভারতে সরকারের সমালোচনাকারী বিভিন্ন সংস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০২০ সালে ভারতে কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। তারা অভিযোগ করেছিল, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ‘উইচ-হান্ট’ বা প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে ভারত সরকার। বেসরকারি আরও কয়েকটি সংস্থার পাশাপাশি গত বছর অক্সফামেও তল্লাশি চালানো হয়েছিল।