ভারতে পাঠ্যবই থেকে বাদ মুঘল ইতিহাস, বিতর্ক

ভারতে পাঠ্যবই থেকে বাদ মুঘল ইতিহাস, বিতর্ক

নতুন পাঠ্যবইয়ে মহাত্মা গান্ধী হত্যা এবং ২০০২ সালে গুজরাটে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার বিষয়টিও বাদ দেওয়া হয়েছে।

<div class="paragraphs"><p>ছবি: ইউটিউব ভিডিও।</p></div>

ছবি: ইউটিউব ভিডিও।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2023, 02:17 PM
Updated : 21 April 2023, 02:17 PM

নতুন পাঠ্যবইয়ে মহাত্মা গান্ধী হত্যা এবং ২০০২ সালে গুজরাটে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার বিষয়টিও বাদ দেওয়া হয়েছে।

 

ভারতে স্কুলের পাঠ্যবই থেকে মুঘল শাসকদের ইতিহাসের একটি অধ্যায় পুরোপুরি বাদ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের তাহলে কীভাবে ইতিহাস শেখানো উচিত, তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হচ্ছে।

বিবিসি জানায়, কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং (এনসিইআরটি) নতুন পাঠ্যবই প্রকাশ করেছে। এরপরই আলোচনা-সমালোচনা ছড়িয়ে পড়েছে।

সরকার পরিচালিত সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশনের অধীনে এনসিইআরটি শিশুদের পরীক্ষার জন্য পাঠ্যক্রম পরিবর্তন এবং পাঠ্যপুস্তকে কি কি বিষয় থাকবে তা তদারক করে ।

এবারের নতুন পাঠ্যবইয়ে আরও যা পরিবর্তন করা হয়েছে তা হল, মহাত্মা গান্ধী হত্যা এবং ২০০২ সালে গুজরাটে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার বিষয়টিও বাদ দেওয়া হয়েছে।

এনসিইআরটি বলেছে, পাঠ্যক্রমকে আরও যৌক্তিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এসব পরিবর্তন আনার বিষয়ে গত বছরই প্রথম ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এ পরিবর্তনের ফলে শিশুদের জ্ঞান আহরণে কোনও ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না। বরং কোভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী সময়ে শিশুদের ওপর চাপ কমিয়ে আনবে।

অভিযোগ করে সমালোচকরা বলেছেন, হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো বছরের পর বছর ধরে যার বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে আসছে, সে অনুযায়ীই ইতিহাসের এই অংশবিশেষ মুছে দিচ্ছে এনসিইআরটি।

রাজনৈতিক ইসলাম নিয়ে কাজ করা এবং সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজে শিক্ষকতা করেন হিলাল আহমেদ। তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীরা ভীষণভাবে বিভক্ত একটা সময়ে দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানছে। ইতিহাসের অস্বস্তিকর বা অসুবিধাজনক বলে মনে হওয়া অংশগুলো বাদ দিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদেরকে সমালোচনামুলকভাবে চিন্তা করার সুযোগ দিচ্ছি না।”

ওদিকে, পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনার সমর্থকরা যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, স্কুলের ইতিহাস বইগুলোতে কিছুটা সংশোধন প্রয়োজন, কারণ সেগুলোতে মুসলিম শাসকদের খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এনসিইআরটি-র পাঠ্যপুস্তকের বহু অধ্যায়ের লেখক, ইতিহাসবিদ ও শিক্ষাবিদ মাখন লাল বলেন, “মুঘল শাসনামল ছিল ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম রক্তক্ষয়ী সময়। আমরা কি তাদের পরিবর্তে বিজয়নগর সাম্রাজ্য বা চোল কিংবা পান্ডবদের সম্পর্কে আরও লিখতে পারি না?”

ইতিহাসবিদ ও লেখক মানু এস পিল্লাই বলেন, এখন যা ঘটছে তাতে এটিই বোঝা যায় যে, মুঘলরা ছিলেন সহিংস। তখন আদতে সহিংসতা সর্বত্রই রাজ্য শাসনের অংশ ছিল। আর তারা মূলত মুঘলদেরকে প্রথমত মুসলিম হিসাবেই দেখছে; যারা হিন্দুদের নির্যাতন করতে ছিলেন বদ্ধপরিকর।”

এনসিইআরটির পরিচালক দীনেশ সাকলানি পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ককে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে অভিহিত করেছেন এবং স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছেন যে, এখনও স্কুলে শিক্ষার্থীদেরকে মুঘলদের ইতিহাস শেখানো হয়।

বিবিসি এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে দীনেশ সাকলানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।